নারীর ক্ষমতায়ন

প্রকাশ | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

নন্দিনী ডেস্ক
বাংলাদেশ নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে সমান তালে, সমান গতিতে। জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তারা বদ্ধপরিকর। এজন্য সঠিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাস্তবে নারী তার মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে সভ্যতার সব অগ্রগতি এবং উন্নয়নে রাখছে পুরুষের সমান অংশীদার (অবদান)। আর তাই বদলে গেছে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। এখন নারীর কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বীকৃতি। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসন, পুলিশ, বিচার, সামরিক, বেসামরিক প্রশাসনের সর্বস্তরে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের রোল মডেল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি সারা বিশ্বে আজ প্রশংসিত। ঘরে-বাইরে, রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে সর্বত্রই নারীর অংশগ্রহণ অনেকাংশে নিশ্চিত হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীরা দক্ষতা প্রমাণ করছেন, কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন এবং নেতৃত্বও দিচ্ছেন। নারীরা এখন রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে জয় করছেন পর্বতও। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও রাখছেন অগ্রণী ভূমিকা। নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নে উন্নত অনেক দেশ থেকেও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। নারী-পুরুষের সমতা (জেন্ডার ইকু্যইটি) প্রতিষ্ঠায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার শীর্ষে বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের নারী উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করছে। জাতিসংঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড, পস্ন্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন, এজেন্ট অব চেঞ্জ, শিক্ষায় লিঙ্গসমতা আনার স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেসকোর 'শান্তি বৃক্ষ' এবং গেস্নাবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য আর্ন্তজাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে বাংলাদেশ। কিছু হতাশা থাকলেও নারীর ক্ষমতায়নে দেশের অর্জন অনেক। নারী উন্নয়নে সার্বিক সূচকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত ২৪টি দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পরই বাংলাদেশের অবস্থান। নারীর ক্ষমতায়নে বেশ কিছু আইননীতি ও বিধিমালা (আইন, বিধি ও নীতিমালা) তৈরি করেছে সরকার। উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলোতে নারী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। গত দুই দশকে বাংলাদেশে নারীর কর্মসংস্থান প্রায় ৩ ভাগেরও বেশি উন্নতি হয়ে ৩৮ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেনি। প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত নারীকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের মেয়েরা খেলাধুলায় বিগত কয়েক বছরে নিজেদের সাফল্য ধরে রেখেছে। আন্তর্জাতিকভাবে ফুটবল, ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলায় তারা ভালো করছে। নারী উন্নয়নের অন্যতম সূচক হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ। সে হিসেবে বাংলাদেশে শুধু পোশাক খাতে আট মিলিয়ন শ্রমিকের মধ্যে ৭০-৮০ ভাগ নারী। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নেও অনেক অর্জন রয়েছে। নারীরা শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার কারণে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নারীর পদচারণ দ্রুত হারে বাড়ছে। সমান অধিকার, মর্যাদার প্রশ্নে নারীরা তৎপর। সার্বিক বিচারে সমাজের প্রতিটি পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের বিনা জামানতে ও স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। বিপুলসংখ্যক নারী চাকরি নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন। নারীর ক্ষমতায়নে গত ৫০ বছরের অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্বে রোল মডেল পরিচিতি এনে দিয়েছে। নারীদের সচেতনতা এ অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড হলো তৈরি পোশাক খাত। এ খাতের শ্রমিকদের ৭০ শতাংশের বেশি নারী। আবার দেশের বৃহত্তম সেবা খাত হলো স্বাস্থ্যসেবা। এ খাতেও কর্মরতদের মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতে, দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান প্রায় ২০ শতাংশ। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯(৩) অনুচ্ছেদে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। নারীদের যথার্থ মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সরকার নারী শিক্ষার বিস্তার, অধিকার প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায়নসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নের ফলে নারী উন্নয়ন আজ সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, কূটনীতি, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, শান্তিরক্ষা মিশনসহ সব ক্ষেত্রে নারীর সফল অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ ক্রমান্বয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।