বাংলাদেশে নারীর অবস্থান

প্রকাশ | ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

নন্দিনী ডেস্ক
১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশি নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই সাফল্যের শিখরে উন্নীত হয়েছে। বিগত চার দশকে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, উন্নততর কর্ম প্রত্যাশা, উন্নত শিক্ষা এবং তাদের অধিকার রক্ষার্থে নতুন আইন প্রণয়ন দেখা গেছে। যদিও বাংলাদেশের সমাজ এখনো পিতৃতান্ত্রিকই রয়ে গেছে। ২০১১ সালের আদমশুমারির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের নারীর সংখ্যা ৭ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার। পুরুষ ও নারীর অনুপাত ১০০.২:১০০। এ দেশে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের গড় আয়ু ৬৩ বছর। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত দেখায় যে, ১৯৮০'র দশকে বাংলাদেশে নারীদের সামাজিক মর্যাদা পুরুষের চাইতে যথেষ্ট কম ছিল। নারীদের, প্রথা এবং রীতিনীতির দিক থেকে, জীবনের সর্বক্ষেত্রে পুরুষের অধস্তন করে রাখা হয়েছে। বেশিরভাগ নারীদের জীবন তাদের পরম্পরার ওপর কেন্দ্রীভূত থাকে। তাদের জন্য বাজার ব্যবস্থা, উৎপাদনশীল সেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং স্থানীয় সরকারে খুব সীমিত প্রবেশাধিকার থাকে। ১৯৮০'র দশকের শেষ নাগাদ প্রায় ৮২ শতাংশ নারী গ্রামাঞ্চলে বসবাস করত। বেশিরভাগ গ্রাম্য মহিলা, সম্ভবত ৭০ শতাংশ, ছোট কৃষক, ভাড়াটে এবং ভূমিহীন পরিবারে ছিল; অনেকে খন্ডকালীন বা সাময়িক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে, সাধারণত ফসল ফলানোর কাজে লাগে এবং এক ধরনের বা ক্ষুদ্র নগদ মজুরিতে পারিশ্রমিক পায়। ২০ শতাংশের আরেকটি অংশ, বেশিরভাগ দরিদ্র ভূমিহীন পরিবারে, নৈমিত্তিক শ্রম, কুঁচকানো, ভিক্ষা এবং আয়ের অন্যান্য অনিয়ন্ত্রিত উৎসের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত, তাদের আয় পরিবারের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য ছিল। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ নারী প্রধানত পেশাগত, ব্যবসাবাণিজ্য বা বড় মাপের ভূস্বামী শ্রেণিতে থাকেন এবং তারা সাধারণত বাড়ির বাইরে কাজ করে না। নারীদের অর্থনৈতিক অবদান উলেস্নখযোগ্য ছিল কিন্তু বেশিরভাগই ছিল অস্বীকৃত। গ্রামীণ এলাকার নারীরা বেশিরভাগ ফসলপূর্ব কাজ করত- যা রান্নাবান্না এবং গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি এবং ছোট বাগানগুলো পালন করার মধ্যে অন্তর্গত ছিল। শহরের মধ্যে নারীরা গার্হস্থ্য ও ঐতিহ্যগত কাজের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে তারা ক্রমবর্ধমান উৎপাদন কাজগুলোতে কাজ করে, বিশেষ করে প্রস্তুতকারক গার্মেন্টস শিল্পে। যারা অধিক শিক্ষা নিয়েছে তারা সরকার, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করে, কিন্তু তাদের সংখ্যা খুব সীমিত ছিল। অব্যাহতভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চ হার এবং চুলাভিত্তিক কাজের অবনতি থেকে বোঝা যায় যে, আরও অধিক নারী বাড়ির বাইরে কর্মসংস্থান চায়। নারীদের বর্তমান অবস্থান বর্তমানে বাংলাদেশে নারীরা শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে গেছে যদিও গ্রামীণ সমাজে এখনো মেয়েরা লেখাপড়া ছেড়ে দিচ্ছে এবং ঘর-সংসারের কাজ শিখছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে এখনো অল্পবয়সে মেয়েদের অভিভাবক তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। তাদের প্রকৃত সম্মতিকে উপেক্ষা করেই এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজের রীতি অনুযায়ী মেয়েদের পালন করতে হয় প্রথাগত ঘর-সংসারের দায়িত্ব। যদিও বাল্যবিবাহের হার আগের চেয়ে অনেকটা কমে এসেছে। বাংলাদেশে এখনো গ্রামীণ নারীরা গর্ভসংক্রান্ত জটিলতা এবং গর্ভকালীন সময়ে অপুষ্টিতে ভোগেন। নারীদের মধ্যে প্রথম যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্রথম নারী ভিপি- মাহফুজা খানম। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে প্রথম নারী শহীদ- প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী- লীলা নাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী শিক্ষক- করুণাকণা গুপ্ত। ইতিহাস বিভাগ দাবায় প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা গ্রান্ডমাস্টার - রানী হামিদ। ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম নারী অধ্যক্ষ - হোসনে আরা তাহমিন। বাংলাদেশ সংবিধান রচনা কমিটির একমাত্র নারী সদস্য- বেগম রাজিয়া বানু। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর- নাজনীন সুলতানা। এভারেস্ট জয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী- নিশাত মজুমদার। বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী উপাচার্য- ফারজানা ইসলাম। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্রথম নারী কোষাধ্যক্ষ- গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ইফফাত ফারাহ মৌসুমি। বাংলাদেশের নারীদের সময় পঞ্জিকা খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০-৯০: উত্তর ও পশ্চিম ভারতে আর্যদের প্রবেশ শুরু ও মাতৃপ্রাধান্য সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭: মেসেনা অবরোধ যুদ্ধে ভারতীয় নারীদের অস্ত্রধারণ। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০: পতঞ্জলি কর্তৃক অস্ত্রধারী শক্তিকি সম্প্রদায়ের উলেস্নখ। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০: ব্রহ্মবাদীদের সভায় বিদূষী নারী গার্গীর প্রশ্ন উত্থাপন। ৯০০-১০০০ খ্রিষ্টাব্দ: চর্যাপদে তান্ত্রিক ধারার সাধনমার্গে নারীকে সাধন সঙ্গিণী হিসেবে গ্রহণ। ১১০০ খ্রিষ্টাব্দ : ডাকের বচন, অ্যালকেমি চর্চায় গ্রামীণ নারী সমাজের অংশগ্রহণ। ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ: বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রবেশ, বাঙালি নারীদের মুসলিম আইন অনুযায়ী সম্পত্তি, দেনমোহর, তালাক ও পুনর্বিবাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু অধিকারপ্রাপ্তি। ১৩০০-১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ: বাংলা মঙ্গলকাব্যের উদ্ভব ও বিকাশ, বাংলায় লোকধর্ম ও নারীদেবতা, নারী পুরোহিত শ্রেণির অভুদ্যয়। ১৪০০-১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ : বাংলায় বৈষ্ণব আন্দোলন, বৈষ্ণব ধর্মে সর্বস্তরের নারীর সক্রিয় অন্তর্ভুক্তি, নারী গুরু ও নারী মহান্ত শ্রেণির উদ্ভব। ১৩৫১-১৫৭৭ খ্রিষ্টাব্দ : ফিরোজ তুঘলক ও সিকান্দর আলী লোদী কর্তৃক বাঙালি মুসলিম নারীর চলাচলের স্বাধীনতা হ্রাস। বোরখা ও ঢাকা গাড়ি ছাড়া মেয়েদের চলাচল নিষিদ্ধ, বাড়িতে জেনানা মহল তৈরি। ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দ: মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর রামায়ণ অনুবাদ।