নোবেলজয়ী হান কাং

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

নিন্দিনী ডেস্ক
নারী তার নিজের তৈরি কাঠামোতে কখনই বেড়ে ওঠতে পারে না। সে সবসময় প্রতিবন্ধকতাময় পুরুষের তৈরি করা কাঠামোতে বেড়ে ওঠে। সুতরাং পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে একজন নারীর সফলতা, বড় কিছু অর্জন, নারীর জন্য নিঃসন্দেহে সুখবর ও অনুপ্রেরণামূলক। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার, নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন কোরিয়ান লেখক হান কাং। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দা। হান কাংকে নিয়ে এ পর্যন্ত ১৮ জন নারী সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করলেন। ৫৩ বছর বয়সি হান কাং লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন প্রথমত কবিতা দিয়ে। ১৯৯৫ সালে তার ছোটগল্পের একটা সংকলন বের হয়। সেটার মাধ্যমে তিনি পাঠকনন্দিত হন। 'দ্য ভেজিটেরিয়ান' তার অন্যতম উলেস্নখযোগ্য বই। এই বই প্রকাশের এক দশক পর বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন ডেবোরাহ স্মিথ। পরের বছরই এই উপন্যাস ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। তার অন্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে দ্য হোয়াইট বুক, হিউম্যান অ্যাক্টস, গ্রিক লেমনস, ইওর কোল্ড হ্যান্ডস ও স্কারস। তিনি এমন একজন মানষু, যিনি সংগীত ও শিল্পকলার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। মানুষের জীবনের নানাদিক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাই তার কাজকে কোনো সীমানায় ফেলা যায় না। সহিংসতা, দুঃখকষ্ট ও পুরুষতন্ত্রের নানা বিষয় ওঠে এসেছে তার লেখায়। মানবজীবনের অন্তর্গত দুঃখ-কষ্টের কাব্যিক রূপায়নের স্বীকৃতি হিসেবে হান কাংকে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য মনে করা হয়। হিসাব করলে দেখা যায়, হান কাং-এর আন্তর্জাতিক পরিচিতি মোটের ওপর দশ বছর। এত কম সময়ের পরিচিতিতে নোবেল জেতার ঘটনা এটাই প্রথম বলা যায়। তার 'দ্য ভেজিটেরিয়ান' উপন্যাসটির জন্য আন্তর্জাতিক সাহিত্য অঙ্গনে তিনি পরিচিতি পান ও প্রশংসিত হন। এই উপন্যাসে একজন নারীর মাংস খাওয়া বন্ধ করাতে পরিবার ও সমাজের সঙ্গে সম্পর্কের সংকটে পড়েন। এই সংকটকে কেন্দ্র করে মূলত উপন্যাস এগিয়ে যায়। তার লেখায় সামাজিক সংকট, মানবতার অন্ধকার দিক এবং অস্তিত্বের জটিলতা ওঠে আসে। তার লেখা হিউম্যান অ্যাক্টস-এ তাদের পারিবারিক দুঃখ-কষ্টের বিবরণ, জন্মের দুই ঘণ্টার মধ্যে তার জন্মের আগে জন্ম, তার বোনের মৃতু্যশোক, তার মা-বাবা এমনকি তাকেও তাড়িত করেছে সেটার বর্ণনাও পাঠককে স্পর্শ করেছে। কীভাবে মা সন্তান জন্ম দিলেন নিঃসঙ্গ অবস্থায়, কীভাবে নাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন করলেন, কীভাবে সেই শিশুটা তার কালো চোখ দিয়ে মায়ের দিকে তাকালো আর কীভাবে শেষবারের মতো চোখ বন্ধ করল! মায়ের মুখে একটাই আর্তি ছিল, মরে যেও না, তুমি মরে যেও না! কি অদ্ভুত সাদৃশ্য! তার লেখায়ও এই বাক্যটি উচ্চারিত হয়েছে। অথচ তিনি জানতেন না মা তার বোনের মৃতু্যর সময় এ কথাটা বারবার বলেছিলেন। হান কাং-এর প্রিয় লেখক দস্তয়েভস্কি। আর কোরিয়ান লেখক লিমচুলউয়ে। হান কাং মনে করেন প্রতিটি লেখক শুধু কাহিনিকার নন বরং প্রত্যেক সৎ লেখক অন্তত প্রশ্নের উত্তরের খোঁজ করতে থাকেন। কিন্তু কেউ অভিষ্ঠ উত্তরের সন্ধান পান না। লেখকের জীবন প্রশ্নোত্তরের একটি অনন্ত অভিযাত্রা। তিনি তার লেখায় অবচেতন ট্রমাকে এমন স্পষ্টতা ও সরলতার সঙ্গে প্রকাশ করেছেন পাঠকেরা তার চরিত্রের ভেতর সহজে প্রবেশ করতে পারেন। মানুষের শরীর ও আত্মার এবং জীবিত ও মৃতের যোগাযোগ বিষয়ে হান কাং-এর সচেতনতা অসাধারণ। তার গদ্যকাব্যিক ও নীরিক্ষাধর্মী। সমসাময়িক গদ্য সাহিত্যে তিনি নতুনধারা যুক্ত করেন। হান কাং-এর জন্ম ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে। তার বাবাও একজন জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক। বাবার প্রভাব এবং শৈশবের বাবার বিশাল লাইব্রেরি তাকে লেখক হয়ে উঠতে অনুপ্রেরণা যোগায়। ১৪ বছর বয়সে তিনি সিদ্ধান্ত নেন তিনি লেখক হবেন। মানুষ কি, ব্যক্তি মানুষ হয়ে উঠার প্রক্রিয়া কি, দুঃখ কেন মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এ সবের উত্তর খুঁজে বেড়িয়েছেন তার লেখায়। নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান আন্দ্রেস ওলসেন বলেন, ঐতিহাসিক নানা যন্ত্রণাবিদ্ধ বিষয় ও অদৃশ্য অনুশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন হান কাং। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ কোরিয়ার সংগীত কে. পপ ব্যান্ড বিটিএস-এর বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্র 'প্যারাসাইট' অস্কার জিতে নিয়েছে। বলা যায় পৃথিবীব্যাপী সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় দক্ষিণ কোরিয়ার জয়জয়কার। এবার হান কাং-কে নোবেল পুরস্কার দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দিল সুইডিশ একাডেমি।