জেন অ্যাডামস ১৮৬০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথম মার্কিন নারী যিনি- নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। তার পুরো নাম লরা জেন অ্যাডামস। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তাকে নিকোলাস মারি বাটলারের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তিনি একজন সমাজ সংগঠক, অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী ও লেখক। জনকল্যাণ, নারীবাদী প্রচারণা এবং বৈশ্বিকতার জন্য তিনি বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
আধুনিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনকল্যাণূলক কর্মকান্ডের তিনি পথিকৃৎ। সমাজকল্যাণে নিরলস প্রচেষ্টা এবং প্রথম মহাযুদ্ধোত্তরকালে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য অবদানের জন্য তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়।
তরুণী জেন অ্যাডামস, কক্স, শিকাগোর একটি অচেনা স্টুডিও পোর্ট্রেট জেন এডামসের জন্ম সেডারভিল, ইলিনিওসের এক সমৃদ্ধশালী সুখী পরিবারে। তিনি ছিলেন পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ ৮ম সন্তান। জেনের বয়স যখন মাত্র ২ বছর, তখন তার মা সারা অ্যাডামস গর্ভাবস্থায় যক্ষ্মারোগে মারা যায়। জেনের পিতা জন এইচ অ্যাডামস ছিলেন "দ্যা সেকন্ড ন্যাশনাল ব্যাংক অব ফ্রিপোর্ট"-এর প্রেসিডেন্ট, ১৮৫৪ থেকে ১৮৭০ পর্যন্ত ইলিনইস স্টেট সিনেটর। এছাড়া, তিনি ছিলেন আব্রাহান লিঙ্কন সমর্থিত রিপাবলিকান পার্টির একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। জেনের বাবা তাকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে উৎসাহিত করতেন। জেন পড়ালেখা করেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। রকফোর্ড কলেজ থেকে স্নাতক পাসের পর তিনি মাত্র ৭ মাস ফিলাডেলফিয়ার "উইমেন'স মেডিকেল কলেজ অব ফিলাডেলফিয়া"-তে পড়ালেখা করেন এবং এর কিছুদিন পরই পড়ালেখা বর্জন করেন। এর কিছুদিন পর তার পিতার আকস্মিক মৃতু্যতে তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে ৫০,০০০ ইউএস ডলার পান।
১৮৮৫ সালে তিনি ২ বছরের জন্য ইউরোপ যান। ১৮৮৭ সালে তিনি পুনরায় ইউরোপে তার ২য় ভ্রমণে যান তার সফরসঙ্গী ছিলেন তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ও শিক্ষক "এলেন স্টার"।
১৮৮৯ সালে তিনি তার কলেজ সহপাঠী "এলেন স্টার" শিকাগোতে সম্মিলিতভাবে গড়ে তুলেন "হুল হাউজ", যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সর্বপ্রথম ঝবঃঃষবসবহসঃ ঐড়ঁংব। হাউজটির নামকরণ করা হয় "চার্লস হুল"-এর নামানুসারে, যিনি দালানটি বানিয়েছিলেন ১৮৫৬ সালে। এই হুল হাউজটি বানাতে গিয়ে জেন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ৫০,০০০ ইউএস ডলারের পুরোটাই খরচ করেন। "হুল হাউজ"-এর স্পন্সর হয়েছিলেন "হেলেন কালভার", যিনি একজন বিত্তবান রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী ছিলেন।
১ম বিশ্বযুদ্ধে তার খোলাখুলি শান্তিবাদী মন্তব্য এবং যখন নৈরাজ্যবাদ ও সমাজতন্ত্র সবচাইতে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্রকে, তখন তার "ডিফেন্স অব ইমিগ্র্যান্টস সিভিল রাইটস"-এর কারণে জেন সবচাইতে রূঢ় সমালোচনার সম্মুখীন হন। তারপরও জেনকে "হুল হাউস" কার্যক্রমকে সামনের দিকে এগিয়ে চলার আপ্রাণ চেষ্টাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি ১৯১২ সালে "থিয়োডোর রুজভেল্ট"-এর প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইনে যোগদান করেন এবং এতে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন।
জেন "উইমেন'স ইন্টারন্যাশনাল লীগ ফর পীস এন্ড ফ্রীডম"-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, যার দায়িত্ব পালনের স্বার্থে তিনি ১ম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এবং তার পরবর্তীকালে ইউরোপ এবং এশিয়া ভ্রমণে যেতে বাধ্য হন। জেন ঈধৎহবমরব ঐধষষ-এ "শান্তিবাদ"-এর ওপর একটি ভাষণ দেন যা, পত্র-পত্রিকা এবং মিডিয়া ভুলভাবে উপস্থাপন করে এবং তাকে দেশদ্রোহী হিসেবে অভিহিত করে। এটা ছিল তার জীবনের সবচাইতে কঠিন সময়। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন শ্রেণীর কূটনীতিকদের সঙ্গে মিলিত হন ও তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমেই তার সময় অতিবাহিত করতে থাকেন।তিনি শান্তি রক্ষায় নারী আন্দোলনের ভূমিকা টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। তার এই চেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৩১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী হিসেবে তিনি এই পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তিনি ১৯৩৫ সালের ২১ মে মৃতু্যবরণ করেন।