আমাদের খাদ্য ভান্ডারের একটি বিশাল অংশ রয়েছে সমুদ্রে। পৃথিবীর খাদ্যের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে সমুদ্র থেকে। জীবন ও জীবিকার প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে সমুদ্র থেকে আহরিত সম্পদ। এসব সম্পদের ভেতর প্রথমেই রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। অনেক সামুদ্রিক মাছ দেশের বাজারে প্রচলিত থাকলেও বিদেশের বাজারে সব মাছের চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের প্রাণী, যা সামুদ্রিক প্রাণী এবং খাদ্য তালিকায় রাখতে শুরু করেছেন। সি ফুড বা সামুদ্রিক খাবার ভোজনরসিকদের পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে অনেক আগেই। শুধু স্বাদ নয় স্বাস্থ্য উপযোগী হওয়ায় অনেকের ডায়েট চার্টেই আছে সি ফুড। যদিও এটা এখনও প্রান্তিক মানুষের হাতের বাইরে কিন্তু ক্রমেই কিছু সি ফুড একেবারে মফস্বল পর্যন্তও পৌঁছে গেছে। সেগুলো খাচ্ছেও।
খাদ্য চাহিদার পাশাপাশি আমাদের যেদিকে মনোযোগ দিতে হবে সেটি হলো সি ফুডের বৈদেশিক বাজার। আমাদের সি ফুডের বৈদেশিক বাজার ধরতে হবে। যেখানে আমরা বেশ খানিকটা পিছিয়ে আছি। বরং আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ এগিয়ে গেছে। অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা যোগ করেছে সি ফুড বা সামুদ্রিক খাবার। যদিও এখনও বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে সি ফুড আহরণ এবং রপ্তানি করতে পারেনি অন্তত অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায়। তবে সম্ভাবনা রয়েছে। এমনিতে স্বাদু পানির মাছ উৎপাদন ও রপ্তানিতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। সেই সাথে যদি সি ফুড যোগ করা যায় মানে সমুদ্র থেকে আহরিত বিভিন্ন ধরনের প্রাণী বা স্যামন ও কোরালের মতো মাছ রপ্তানি বৃদ্ধি করা যায় তাহলে রপ্তানি খাত আরও শক্তিশালী হবে। বাঙালি, ভিনদেশি কিংবা মোগলাই হরেক রকম খাবারের পাশাপাশি সি ফুড বা সামুদ্রিক খাবার ভোজনরসিকদের পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে অনেক আগেই।
মানুষ ১৬৫০০০ বছর আগে থেকেই সামুদ্রিক জীবন সংগ্রহ করে আসছে। সামুদ্রিক খাবার সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সেবন করা যুগ যুগ আগে থেকেই ঘটে আসছে। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকেও প্রমাণ পাওয়া যায়, সামুদ্রিক খাবার বরাবরই বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কালের বিবর্তনে এসেছে নতুন কাল, নতুন দিন, নতুন মানুষ। কিন্তু উন্নত মানুষের যুগেও সামুদ্রিক খাবারের আবেদন এতটুকু কমেনি। স্বাদু পানির মাছের সাথে সাথে এখন মুখরোচক হিসেবে সামনে এসেছে সামুদ্রিক মাছ। প্রধানত তিন ধরনের সি ফুড বেশি জনপ্রিয়। একটি হলো বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। স্যামন, ট্রাউট, সারডিন, কোরাল এই মাছগুলো খেতে দারুণ সুস্বাদু। আরেকটি সি ফুড হলো মলাস্কস। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অক্টোপাস, স্কুইড, ঝিনুক ইত্যাদি। ক্রাসটেশিয়ান বলে সি ফুডের আরেকটি ধরন রয়েছে। নানা রকম চিংড়ি, লবস্টার ও কাঁকড়া এর অন্তর্গত। এসবের মধ্যে সামুদ্রিক মাছই প্রধান। তবে অক্টোপাস, স্কুইড এবং ঝিনুকের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই সামুদ্রিক প্রাণীগুলোকেই রন্ধন প্রণালি অনুসরণ করে নানা রকম সুস্বাদু পদে রূপ দেওয়া হয়। এক তথ্যে জানা যায়, এ খাতে বছরে উৎপাদন প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০৪১ সালে ৮০ লাখ মেট্রিক টনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের সি ফুড সেক্টর বিশ্ব বাজারে বিস্তৃত লাভ করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন গলদা চিংড়ি, কাঁকড়া, স্থানীয় জনপ্রিয় ইলিশ মাছ, পোমফ্রেট, শিশু অক্টোপাস, স্কুইড, ম্যাকেরেল এবং কিংফিশের মতো সামুদ্রিক খাবার রপ্তানি করে আয় করে ৪৭৯০.৩৪ কোটি টাকা। ভারতের সামুদ্রিক খাবার (সি ফুড) রপ্তানি গত এক দশকে উলেস্নখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
এই প্রচেষ্টা ভারতকে বিশ্ব সামুদ্রিক খাবারের বাজারে একটি প্রধান সরবরাহকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভিয়েতনামভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং জাপান হলো ভারতীয় সামুদ্রিক খাবারের প্রাথমিক গন্তব্য। এসব কৌশলগত বাজারে প্রবেশ, সেখানে ভারতীয় সামুদ্রিক খাবারের একটি স্থির চাহিদা তৈরি করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে হিমায়িত চিংড়ি। দেশটির মোট সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানির ৬৬ শতাংশ অবদান রাখে এটি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের উচ্চ চাহিদার কারণে এটি ক্রমাগত শীর্ষস্থানীয় সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি পণ্য হিসেবে স্থান ধরে রেখেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে হিমায়িত চিংড়ি। দেশটির মোট সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানির ৬৬ শতাংশ অবদান রাখে এটি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের উচ্চ চাহিদার কারণে এটি ক্রমাগত শীর্ষস্থানীয় সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি পণ্য হিসেবে স্থান ধরে রেখেছে। সারা বিশ্বেই সি ফুড অত্যধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন হোটেলে সি ফুডের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যে কাজ ভারত করতে পারছে আমরাও এখান থেকে উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।