জার্মানির গাড়ি নির্মাতা বিএমডাবিস্নউর যুক্তরাষ্ট্রের কারখানায় শিগগিরই উৎপাদন প্রক্রিয়ায় হিউম্যানোয়েড রোবটের ব্যবহার শুরু হতে পারে। ম্যার্সেডেজ-বেনৎসেও এই বিষয়ে একটি পাইলট প্রকল্প চলছে। তবে ভবিষ্যতে রোবট মানুষের কী পরিমাণ চাকরি নিয়ে নেবে তা এই মুহূর্তে বলা অসম্ভব।
বিএমডাবিস্নউর কারখানায় ফিগার ০২ মডেলের রোবট কাজ করছে। একেকটি ফিগার ০২ রোবটের দাম প্রায় ৮০ হাজার ইউরো। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে খরচ হয় চার হাজার ইউরো। মানুষের জন্য একঘেয়েমিতে পূর্ণ ও শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজ করতে পারে এটি। তবে গতি এখনো খুব ধীর। বিএমডাবিস্নউ কর্মকর্তা কারোলিন রিশটার বলেন, 'আমরা এই প্রযুক্তিটা একেবারে শুরু থেকেই বুঝতে চাই। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কীভাবে আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়, তা আমরা জানতে চাই।'
হিউম্যানোয়েড রোবট বিশেষজ্ঞ ডানিয়েল কিটেলব্যার্গার বলেন, 'আমরা ধরে নিই যে, রোবট একজন মানুষের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কাজ করতে পারে। তবে এটাও বলতে হবে যে, হিউম্যানোয়েড রোবটের কিছু সুবিধাও আছে। ব্যাটারি পরিবর্তন, ব্যাটারি চার্জ করা ও মাঝেমধ্যে রক্ষণাবেক্ষণের কিছু কাজ ছাড়া রোবটকে কখনো কাজে বিরতি নিতে হয় না। আট ঘণ্টা কাজ করার পর এটি থেমে যায় না।'
কিটেলব্যার্গার আরো জানান, 'যেসব বড় কাজ সম্পাদন করতে অনেক ছোট ছোট কাজ করতে হয়, যেসব কাজ করতে মানুষকে খুব নমনীয় থাকতে হয়, সেসব কাজ করতে রোবট এখনো মানুষের চেয়ে অনেকখানি পিছিয়ে আছে। এছাড়া, যেসব কাজ খুব জটিল, অর্থাৎ, একটা জিনিসকে শুধু এ থেকে বি অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার মতো সহজ নয়, সেসব কাজও রোবটের জন্য কঠিন।'
রোবটকে দিয়ে কাজ করানোর আগে তাকে দেখাতে হয় কী করতে হবে। ব্যাপারটি বেশ পরিশ্রমের ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে। টেসলাকেও এই শিখন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। রোবটকে দিয়ে এই মুহূর্তে একেবারে সাধারণ কাজ ছাড়া অন্য কিছু করানো সম্ভব নয়।
বিএমডাবিস্নউর কারোলিন রিশটার বলেন, 'আমরা আশা করছি, ভাষার মডেল ব্যবহারের কারণে রোবটের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ যতটা সম্ভব স্বাভাবিক হবে। আর রোবট কাজ ও পরিবেশ বুঝতে পারলে ভালো হয়। চীন ২০২৫ সালে, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা সম্ভব, এমন রোবট তৈরি শুরুর পরিকল্পনা করছে। তবে বিষয়টি সম্ভবত কিছুটা অবাস্তব।
কিটেলব্যার্গার বলেন, 'আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা সম্ভব এমন রোবট তৈরি সম্ভব হতে পারে, মানে, আমি বলব, ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে এরপর থেকে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় রোবটের ব্যবহার বাড়তেই থাকবে।'
বিএমডাবিস্নউর রিশটার বলেন, 'পরবর্তী প্রজন্মের রোবটকে আরও বেশি কার্যকর হতে হবে। আমি চাইব, সেগুলোকে ব্যবহারের আগে যেন আমাকে আর প্রোগ্রাম করতে না হয়। তারা যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেরা কাজ শিখে নিতে পারে- সেটা ভয়েস কমান্ড বা অবজারভেশনাল লার্নিংয়ের মাধ্যমে হতে পারে। তাহলেই কেবল আমরা বিএমডাবিস্নউ গ্রম্নপ এমন কিছু কাজ অটোমেট করতে পারব, যেটা আগে অসম্ভব ছিল।'
ভবিষ্যতে রোবট মানুষের কী পরিমাণ চাকরি নিয়ে নেবে তা এই মুহূর্তে বলা অসম্ভব। বেতন খাতে কয়েক মিলিয়ন ইউরো বাঁচাতে চায় গাড়ি শিল্প। তবে উৎপাদন খাতে মানুষের প্রয়োজন থাকবে, অন্তত অদূরভবিষ্যৎ পর্যন্ত।