আবিষ্কারের জাদুকরি ছোঁয়া

আবিষ্কারগুলো কেবল আমাদের আশ্চর্য করেনি বরং আমাদের অনুভূতির গভীরতা এবং সৃষ্টিশীলতার এক নতুন স্তরে নিয়ে গিয়েছে। প্রতিটি আবিষ্কার, একটি সূক্ষ্ণ চেতনা- যা জানায় বিজ্ঞান কেবল পৃথিবী বদলায় না বরং এটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভাবনাকে প্রসারিত করে। আমাদের জানার পরিধি আরও গভীর করে তোলে। মানবতা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তির এই অবিরাম আবিষ্কার শুধু এক নতুন পৃথিবীই নয়, এক নতুন মানবতাকে রচনা করে- যা ভবিষ্যতের দিকে আমাদের আরও দৃঢ় পদক্ষেপে চালিত করে।

প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

শেখ এ কে এম জাকারিয়া
আবিষ্কার এটি কেবল একটি সৃষ্টির মুহূর্ত নয়, এটি একটি অদেখা পথের সন্ধান, যেখানে সাহস এবং অনুসন্ধান একত্রিত হয়ে তৈরি করে নতুন সম্ভাবনার আলো। ইতিহাসের পাতা থেকে প্রতিটি আবিষ্কার যেন নতুন এক পৃথিবীকে জানার পথে রচিত এক গভীর কাব্য- যা আমাদের জীবনকে শুধু বদলায় না, বরং মানবতাকে নতুন দৃষ্টিতে ভাবতে শেখায়। ১৯২৮ সালে, আলেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের হাতে যখন পেনিসিলিনের জন্ম হয়, তখন এটি শুধু একটি চিকিৎসা-প্রযুক্তির আবিষ্কার ছিল না; এটি ছিল মানবতার এক আশীর্বাদ। একটি দুর্ঘটনা, একটি নিছক বিস্ময়- যা হয়ে ওঠে পৃথিবীর জন্য এক মহান দান। জীবাণুদের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে পেনিসিলিন এবং একে একে হাজারো প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করে। ফ্লেমিংয়ের আবিষ্কার শুধু একটি বৈজ্ঞানিক সাফল্য ছিল না বরং তা মানবিক চেতনার গভীরতা ও চিকিৎসা শাস্ত্রের সীমাকে ছাপিয়ে পৃথিবীকে এক নতুন প্রাণশক্তির পথে নিয়ে যায়। আর ১৮৬৪ সালে, মাক্সওয়েল যখন বিদু্যৎ এবং চুম্বকীয় শক্তির সম্পর্ক উদ্ঘাটন করেন, তখন তার তত্ত্ব শুধু বৈজ্ঞানিক জগৎকে নাড়া দেয়নি বরং এই জগতের এক অব্যক্ত সৌন্দর্য ও সংযোগের অনুভূতিকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছিল। তার কাজ বুঝিয়েছিল যে, এই মহাবিশ্বের সবকিছুই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেন এক মহাজালের মতো যা আমাদের চোখের সামনে অদৃশ্য। মাক্সওয়েল আমাদের শিখিয়েছেন, প্রকৃতির গুণাবলিতে সৌন্দর্য খোঁজার জন্য শুধু চোখ নয়, এক গভীর অনুভবের প্রয়োজন। ১৯৬৯ সালে, নিল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন যখন চাঁদের মাটিতে প্রথম পদার্পণ করেন, পৃথিবীজুড়ে মানবতাই যেন এক নতুন দিগন্তের দিকে পা বাড়িয়েছিল। চাঁদে পা রেখে তারা শুধু প্রযুক্তি বা বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যাননি বরং তারা একটি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন- যা আমাদের শেখায়, অসম্ভবকে ছোঁয়া সম্ভব, যদি মানসিকতা এবং প্রচেষ্টার এক সুশৃঙ্খল মিশ্রণ ঘটানো যায়। এটি ছিল একটি মহাকাব্যিক মুহূর্ত- যা শুধু প্রযুক্তির অগ্রগতির কথা বলে না, মানব মনের সাহসিকতা ও স্থিরতার গল্পও বলে। শিক্ষার্থীরা অনেক সময় স্কুল-কলেজে কিংবা প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। জানা থাকলে তারা সহজে উত্তর দিতে পারেন। আর জানা না থাকলে লজ্জায় পড়তে হয় বা শিক্ষকদের কাছ থেকে অনেক কথা শুনতে হয়। তাই জানতে হলে তাদের প্রচুর পড়তে হবে। আজকের আলোচনার বিষয় হলো গণিতের জনক কে? অর্থাৎ কাকে গণিতের জনক বলা হয় এবং তার নাম কি? যদি কেউ গণিতের জনক সম্পর্কে না জেনে থাকেন- তবে এই নিবন্ধটি সম্পূর্ণ পড়ুন, সহজেই জেনে যাবেন। গত কয়েক শতকে গণিতের প্রচুর উন্নতি হয়েছে। তবে এ কথা একেবারেই ভুল নয়, গণিতের ইতিহাস মানব সভ্যতার মতই প্রাচীন। অনেক গণিতবিদ ছিলেন এবং বর্তমানেও আছেন যারা গণিতের বিকাশে অবদান রেখেছেন কিন্তু দুখের কথা এটাই যখন প্রশ্ন আসে, গণিতের জনক কে? অনেকেই এ সম্পর্কে জানেন না। তাই এ নিবন্ধে গণিতের জনক কে এবং গণিত সম্পর্কিত খুঁটিনাটি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে। গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিসকে গণিতের জনক বলা হয়। যিনি ছিলেন প্রাচীনকালের সর্বোৎকৃষ্ট গণিতবিদ। তিনি তার সময়ে গণিতে অনেক অবদান রেখেছেন- যা আজও প্রয়োগযোগ্য এবং প্রবাহমান। আর এ জন্যই আর্কিমিডিসকে 'গণিতের জনক' বলা হয়ে থাকে। আর্কিমিডিস তার অনেক তাৎপর্যবহ নিপুণত্বের জন্য প্রসিদ্ধ। যেমন আর্কিমিডিস নীতি, আর্কিমিডিস পিচ, ফ্লুইড স্ট্যাটিক্স, লিভার, মাইক্রোস্কেল ইত্যাদি যা এখনো ব্যবহৃত হয়। গণিতে তার অবিনশ্বর অবদানের জন্য তাকে 'গণিতের জনক' বলা হয়। আর্কিমিডিস যখন সিরাকিউসের রাজা দ্বিতীয় হিরোর সেবায় ছিলেন তখন তাকে গণিতের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মূল কারণ ছিল, গণিত এবং বিজ্ঞানে তার অসাধারণ উদ্ভাবন। আর্কিমিডিস খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৭ সালের দিকে সিসিলি ম্যাগনা গ্রেসিয়ার সিরাকিউসে একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি গণিত, বিজ্ঞান, কবিতা, রাজনীতি এবং সামরিক কৌশলের প্রতি খুব অনুরাগী ছিলেন। এই আগ্রহের জন্য তিনি মিশরের গণিতের স্কুলে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং রহস্যঘেরা গণিত ও বিজ্ঞানের সন্ধানে তার পুরো জীবন অতিবাহিত করেন। তার রচিত বই এবং গবেষণা কাজ থেকে জানা যায় যে, আলেকজান্দ্রিয়া, মিশরের অনেক পন্ডিতদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। তিনি ইরাটোস্থেনিস এবং কননের মতো বিশিষ্ট গণিতবিদদের সঙ্গে চিঠিপত্রের আকারে তার কাজগুলো প্রকাশ করেছিলেন। আর্কিমিডিসের প্রাথমিক জীবন অনেক বৈচিত্র্যময় হলেও দুর্ভাগ্যবশত, তার জীবন সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি। কারণ, তার জীবনী যা হেরাক্লিডিস লিখেছিলেন, তা হারিয়ে গেছে। যে কারণে আজ অবধি তার প্রাথমিক জীবন, পরিবার, বিবাহের অবস্থা বা সন্তান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এই আবিষ্কারগুলো কেবল আমাদের আশ্চর্য করেনি বরং আমাদের অনুভূতির গভীরতা এবং সৃষ্টিশীলতার এক নতুন স্তরে নিয়ে গিয়েছে। প্রতিটি আবিষ্কার, একটি সূক্ষ্ণ চেতনা- যা জানায় বিজ্ঞান কেবল পৃথিবী বদলায় না বরং এটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভাবনাকে প্রসারিত করে। আমাদের জানার পরিধি আরও গভীর করে তোলে। মানবতা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তির এই অবিরাম আবিষ্কার শুধু এক নতুন পৃথিবীই নয়, এক নতুন মানবতাকে রচনা করে- যা ভবিষ্যতের দিকে আমাদের আরও দৃঢ় পদক্ষেপে চালিত করে।