করোনা মোকাবিলা

৪২ লাখে বিক্রি মাশরাফির ব্রেসলেট

দেশের ক্রিকেটারদের ব্যাট-গস্নাভস বা জার্সি নিলামে বিক্রি হয়ে যে অর্থ জোগাড় হয়েছে সেই তালিকায় সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে মাশরাফির হাতের ব্রেসলেট।

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
'ধন্যবাদ মমিন ভাই, আপনি অনেক কিছু করেছেন। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আপনাকে এটা দিতে আমার বিন্দুমাত্র খারাপ লাগবে না। আপনারা যেহেতু আমাকে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটা উপহার দিচ্ছেন, ততদিন পর্যন্ত আমি এটা খুলে রাখব।'
নিজের নাম খোদাই করা এক ব্রেসলেট ১৮ বছর ধরে পরছেন। বাংলাদেশের অনেক সাফল্যের নায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার আনন্দ-বেদনার সাক্ষীও হয়ে আছে যা। বাংলাদেশের ক্রিকেটের কোনো সংগ্রহশালা হলে নিশ্চিতভাবেই সেখানে আলাদা কদরে ঠাঁই মেলার কথা এই স্মারকের। করোনাভাইরাস সংকটে দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াতে নিজের পছন্দের ব্রেসলেটটি নিলামে তুলেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। শনিবার বিকাল ৫টা থেকে আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান 'অকশন ফর অ্যাকশন'র ফেসবুক পেজে নিলাম শুরু হয়ে শেষ হয়েছে রোববার রাত সাড়ে ১২টায়। মাশরাফির দেড়যুগের সঙ্গী প্রিয় ব্রেসলেটটির ভিত্তিমূল্য ৫ লাখ টাকা থাকলেও সেটি বিক্রি হয়েছে ৪২ লাখ টাকায়! ব্রেসলেটটি কিনেছে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসি)। ব্রেসলেট থেকে প্রাপ্ত অর্থ মাশরাফির 'নড়াইল এক্সপ্রেস' ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ব্যবহার করা হবে করোনা দুর্গতদের জন্য। নিলাম শুরু হওয়ার পর থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় আগ্রহী ক্রেতারা দর হাঁকাতে থাকেন। নিলামের শুরুতে দর খুব একটা না উঠলেও রোববার সকাল থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে দর উঠতে থাকে। বিশেষ করে শেষ ঘণ্টায় প্রচুর মাশরাফিভক্ত বিড করেন। শেষ দশ মিনিটে ৩০ লাখ টাকা থেকে বেড়ে সেটা দাঁড়ায় ৪২ লাখে। শেষ পর্যন্ত ওই দামেই বিক্রি হয় ব্রেসলেটটি। নিলামে বিক্রি নিশ্চিত হওয়ার পরই মাশরাফি তার হাত থেকে ব্রেসলেট খুলে ফেলে বলেন, 'এই যে, খুলে ফেলেছি। এটা আপনাদের, এখন আমার হাত খালি।' কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে খানিকবাদেই বিএলএফসির চেয়ারম্যান মমিন উল ইসলাম জানিয়ে দেন- এই ব্রেসলেট তারা কিনেছেন ঠিকই কিন্তু উপহার হিসেবে এটা আবার মাশরাফিকেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন। সামনের কোনো সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ব্রেসলেট আবার মাশরাফিকে উপহার দেবে বিএলএফসি। এই প্রতিশ্রম্নতি দেন মমিন উল ইসলাম। এখন পর্যন্ত দেশের ক্রিকেটারদের ব্যাট-গস্নাভস বা জার্সি নিলামে বিক্রি হয়ে যে অর্থ যোগাড় হয়েছে সেই তালিকায় সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে মাশরাফির হাতের ব্রেসলেট। ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে মমিনুল ইসলাম মাশরাফির উদ্দেশে বলেছেন, 'আপনি এই দেশকে যে সম্মান এনে দিয়েছেন, সেই সম্মানের প্রতিদান আসলে কোনোভাবেই হয় না। কিন্তু এটুকু করে আমরা চেষ্টা করেছি, আপনাকে কিছুটা হলেও সম্মান জানাতে। নিলামের খবর জানতে পেরেই আমি এই সংগঠনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিইওদের সঙ্গে কথা বলেছি। 'অ্যাসোসিয়েশনের সবাই একবাক্যে রাজি হয়ে গেছেন। সবাই বলেছেন, যদি ভালো কাজে এই অর্থ ব্যয় হয় এবং আর্থিক খাত থেকে যদি বাংলাদেশের অধিনায়ককে সম্মান জানানো যায়, এর চেয়ে ভালো কিছু হয় না। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাকে বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটা উপহার দেব।' বাংলাদেশে লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স অ্যাসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাশরাফি বলেন, 'ধন্যবাদ মমিন ভাই, আপনি অনেক কিছু করেছেন। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আপনাকে এটা দিতে আমার বিন্দুমাত্র খারাপ লাগবে না। আপনারা যেহেতু আমাকে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটা উপহার দিচ্ছেন, ততদিন পর্যন্ত আমি এটা খুলে রাখব।' অনেকের কাছে হয়তো এটি সামান্য একটি ব্রেসলেট। কিন্তু মাশরাফির কাছে এই ব্রেসলেট অনেক আবেগ এবং ভালোবাসার অন্য নাম। খুব একটা কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন না মাশরাফি। কিন্তু এরপরও হাতের এই ব্রেসলেটকে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সব সময় নিজের সৌভাগ্যের প্রতীক বলে ভেবে এসেছেন। জানা যায়, ক্যারিয়ারের শুরু থেকে অবশ্য এই ব্রেসলেটটি পরতেন না মাশরাফি। শুরুতে বাংলাদেশ লেখা রিস্ট ব্যান্ড পরলেও কিছুদিন পর ধাতব ব্রেসলেটটি পরা শুরু করেন। ব্রেসলেটটিতে মাশরাফির নাম খোদাই করা আছে। শুরুতেই দুঃখ প্রকাশ করেন মাশরাফি। দেড়যুগের সঙ্গী ব্রেসলেটের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, 'বাবার ভয়ে আমি সানগস্নাস ও ব্রেসলেট পরতাম না। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমার এই দুটো জিনিসের প্রতি আবেগ ছিল। যখন ক্রিকেট শুরু করি, তখন এই দুটো জিনিস আমি পরার সুযোগ পাই। রুপা বা অন্য কোনো ধাতু নয়, এটি স্রেফ স্টিলের একটা জিনিস। আমার মামা তার দোকান থেকে বানিয়ে দিয়েছিলেন। কয়েকটি ম্যাচ ছাড়া আন্তর্জাতিক সব ম্যাচেই আমার সঙ্গী ছিল এই ব্রেসলেট। বেশিরভাগ ম্যাচেই এটা নিয়ে খেলেছি, অপারেশন আর এমআরআই করা ছাড়া এটা কখনো খুলে রাখা হয়নি। ১৮ বছর ধরে এটা আমার সুখ-দুঃখের সঙ্গী। কয়েকটা ম্যাচে লাল-সবুজ ব্যান্ড পরা হয়েছে।' হুট করে মাশরাফির নিলামে যোগ দেন তামিম। যোগ দিয়েই খুনসুটিতে মেতে ওঠেন বাংলাদেশের সেরা ওপেনার। তিনি বলেন 'বাসার সবই তো বিক্রি করে দিচ্ছেন? কিছু জমিয়ে টমিয়ে রাখেন। ছেলে-মেয়েদের তো কিছু দেখাতে হবে।' প্রতু্যত্তরে মাশরাফি বলেন, 'যা আছে, সেগুলোই তো ওরা দেখে শেষ করতে পারবে না।'