বাফুফের সিদ্ধান্তে কঠিন সংকটে ফুটবলাররা

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
ক্লাবের চাপে পড়েই লিগ বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বাফুফেকে। যদিও ফুটবলাররা চেয়েছিলেন আরও একটু সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবে ক্লাব ও বাফুফে। কারণ একদিকে তাদের পড়তে হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকটে, অন্যদিকে এ অনিশ্চিত যাত্রায় তাদের ফিটনেস রক্ষার লড়াইটা আরও কঠিন হয়ে পড়ল।
এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এমনিতেই করোনাভাইরাসের কারণে মাঠের খেলা বন্ধ। এ বছর লিগ হবে কি হবে না এ নিয়েই শঙ্কায় ছিল দেশের ফুটবলাররা। ক্যাম্পে না থাকাতে নিজেদের বাড়িতে একা একা অনুশীলন করে ফিটনেস রক্ষার কঠিন লড়াইয়ে নেমেছিলেন তারা। রোববার বাফুফে এ মৌসুমে আর লিগ না হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় অনিশ্চিত এক যাত্রা শুরু হলো দেশের ফুটবলারদের। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এবার অংশ নিয়েছে মোট ১৩টি দল। মাত্র ৬ রাউন্ড হলেও ছোট-বড় দলের লড়াইয়ে দারুণ জমজমাট এক লিগ হচ্ছিল। শিরোপা রেসেই ছিল ৫টির মতো দল। তাই কার ঘরে যে শিরোপা যাবে সেটা সঠিক করে বলা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। এই যখন অবস্থা ঠিক তখনই করোনা এসে হানা দিল বাংলাদেশে। কবে কাটবে এই সংকটকাল তা কারোরই জানা নেই। ফুটবলারদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে নারাজ ক্লাবগুলো। তাই বলতে গেলে ক্লাবের চাপে পড়েই লিগ বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বাফুফেকে। যদিও ফুটবলাররা চেয়েছিলেন আরও একটু সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবে ক্লাব ও বাফুফে। কারণ একদিকে তাদের পড়তে হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকটে, অন্যদিকে এ অনিশ্চিত যাত্রায় তাদের ফিটনেস রক্ষার লড়াইটা আরও কঠিন হয়ে পড়ল। ঢাকা আবাহনীর অন্যতম গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলের কণ্ঠে হতাশা, 'লিগ হবে না শুনেছি। এখন কী করব? কীভাবে যে চলব জানি না।' আরেক অভিজ্ঞ গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা এবার খেলছেন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের হয়ে। তার মতে, এটা রীতিমতো একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তার কথায়, 'চলমান লিগ বাতিল করা আমি মনে করি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এ কারণে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই লিগ চালানোর ব্যাপারে প্রক্রিয়াধীন। কিছু কিছু ক্লাব ট্রেনিং শুরু করেছে এবং জাপানের লিগ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আমার কাছে মনে হয় আরও কিছুদিন অপেক্ষা করে যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা আসত। সেটা বেশি যুক্তিযুক্ত হতো। 'এবার লিগ হচ্ছে না। আগামী মৌসুমের লিগটা আদৌ কবে শুরু হবে সেটা আমরা জানি না। মাঝখানে ছয় থেকে সাতটা মাস আমাদের ফুটবলাররা ট্রেনিংয়ে থাকবে না। সেই সঙ্গে একটা অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকবে। তারা কর্মহীন হয়ে পড়বে। এত দীর্ঘ সময় ফুটবলাররা ট্রেনিংয়ের বাইরে থাকলে তার একটা প্রভাব জাতীয় দলের ওপরও পড়বে।' যোগ করেন রানা। ঢাকা আবাহনীর অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার নাসির উদ্দিন চৌধুরীর আক্ষেপ ফেডারেশনের এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে। তার কথায়, 'লিগ বন্ধ হয়েছে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু এ ধরনের একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ফেডারেশনের উচিত ছিল আমাদের ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া। কারণ শুধু ক্লাব দিয়ে দেশের ফুটবল না। ফুটবলারদের নিয়ে দেশের ফুটবল। এখানে তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরোটাই ধোঁয়াশা। এই একটা সিদ্ধান্তের ওপরে দেশের এতগুলো ফুটবলারের জীবন ও জীবিকা জড়িয়ে আছে। ফেডারেশন আমাদের মা-বাবার মতো। তারা শুধু ক্লাবের দিকটা দেখবে, ফুটবলারদেরটা দেখবে না, এটা তো হতে পারে না। আমরা সব সময়ই চেয়েছি ক্লাব, ফেডারেশন, ফুটবলার সবার আলোচনার ভিত্তিতে একটা সমন্বিত সিদ্ধান্ত। যাতে কেউই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।' তাহলে কি আপনি বলতে চাচ্ছেন ফুটবলারদের সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ না করেই ফেডারেশন এমন একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে নাসিরুদ্দিন বলেছেন, 'আমার জানামতে ফেডারেশন কোনো ফুটবলারের সঙ্গেই এ বিষয়ে কথা বলেনি। আমাদের একটা পেস্নয়ার স্ট্যাটাস কমিটি আছে। আমার মনে হয় না তারা একজন ফুটবলারের কাছে এ বিষয়ে কিছু জানতে চেয়েছে। যদি সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় হতো, তাহলে ফেডারেশনের জবাবদিহিতার জায়গাটা আরও পরিষ্কার হতো।'