১৫ বছরে মুশফিকের তৃপ্তি-অতৃপ্তি

প্রকাশ | ২৯ মে ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
২০০৫ সালের ২৬ মে। ক্রিকেটের তীর্থ স্থান-লর্ডসের মতো বিশাল এক মঞ্চে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল সদ্য কৈশোর পেরুনো মুশফিকুর রহিমের। ধাপে ধাপে সেই কৈশোর পেরোনো সম্ভাবনার আলো এখন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অন্যতম মূল স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংবাদ মাধ্যমকে মুশফিক জানিয়েছেন তার আনন্দ-বেদনা তৃপ্তি আর অতৃপ্তির যতসব কথা। দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা মুশফিক বর্তমানে ঝলক দেখালেও শুরুতেই দারুণ কিছু করতে পারেননি। কিন্তু ক্রমাগত তার ক্যারিয়ারের গ্রাফ চড়েছে উপরের দিকে। প্রথম পাঁচ বছরকে ছাপিয়ে গেছেন পরের পাঁচ বছর দিয়ে, সর্বশেষ পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতা দিয়ে ছাপিয়ে গেছেন আগের সব কিছুকে। এই সময়ে মুশফিকুর রহিম ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার কল্পনা করাই যায় না। ব্যাট হাতে বর্তমানে দু্যতি ছড়িয়ে চলেছেন মুশফিক। তার এমন চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স নিয়ে এক রকম তৃপ্তির ঠেকুর তুললেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান, 'বাংলাদেশের মতো জায়গায় তিনটা ফরম্যাট মিলিয়ে অলমোস্ট ১৫ বছর খেলেছি। এটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ততটা সহজ না। কারণ আপনি যদি দেখেন, খুব বেশি কিন্তু কেউ নাই যে এত বছর খেলেছে। হয়তো বা আগে ছিল, কিন্তু আগে আমাদের খুব কম খেলা ছিল। আর এখন দেখেন আন্তর্জাতিক বাদ দিলেও বছরে ঘরোয়া বিপিএল, জাতীয় লিগ, বিসিএল সব মিলিয়ে কিন্তু আমাদের ৯-১০ মাস বিরামহীন ক্রিকেট থাকে। এতদিন ফিটনেস রাখা, মেন্টেন করা, ফর্ম ধরে রাখা সব মিলিয়ে আমি মনে করি আলহামুদুলিলস্নাহ। ভলোই হচ্ছে।' আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাট হাতে বর্তমানে ফর্মের তুঙ্গে থাকলেও শুরুতে তার ব্যাটটা সেভাবে কথা বলে ওঠেনি। তাই বলে থেমে থাকেনি মুশফিক কঠোর পরিশ্রম করে এই জায়গায় এসেছেন। তার পরেও রয়েছে না পাওয়ার যতসব আক্ষেপ মুশফিকের, 'আর আফসোস যদি বলেন, মানুষের ধরনই এমন যত পায়, তত চায়। আমার যদি হাজার কোটি টাকাও থাকে তাহলে মনে হবে আমার যদি আরও থাকত তাহলে ভালো হতো। যার মোটামুটি আছে সেও মনে করবে আমার একটা গাড়ি আছে, আরেকটা যদি থাকত। গত ৬-৭ বছরে যা করতে পেরেছে সেটাতে একটু হলেও তৃপ্তি আছে। কিন্তু শুরুটা যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে হয়নি।' বাংলাদেশের উইকেটরক্ষট ব্যাটসম্যান আরও যোগ করেন, '২০১২ থেকে আমি যেভাবে কনভার্ট করেছি এই জায়গাটা তৃপ্তি আছে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম সেটার ফল এখন এসে পাচ্ছি। আশা থাকবে এই ধারাবাহিকতা যদি আমি ধরে রাখতে পারি তাহলে আশা করছি ক্যারিয়ার শেষে বলতে পারব আমি প্রত্যাশার চেয়ে খুশি।' \হসবচেয়ে বেশি যে ঘটনা তাকে নাড়া দিয়েছে, সেই ঘটনার গল্পটাও শোনালেন মুশফিক, 'কষ্টের জায়গা কয়েকটা আছে আসলে। ১৫ বছর তো, অনেক ওঠানামা ছিল। খারাপ লাগার কথা যদি বলি আমি জাতীয় দল থেকে একবার বাদ পড়েছিলাম সম্ভবত ২০০৯ সালে। ওটা আমার জন্য শিক্ষণীয় সময় ছিল। তখন আমার একটা উপলব্ধি হয়েছিল যে নিজেকে আরও এগিয়ে নিতে হবে, অনেক জায়গা আছে আরও অনেক উন্নতি করতে হবে। আরেকটা ছিল এশিয়া কাপে আমরা ফাইনালে ২ রানে হেরেছিলাম (পাকিস্তানের কাছে)। অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম এতবড় টুর্নামেন্ট ছিল ওটি। আর সবচেয়ে বেশি যে ঘটনা আমাকে আনন্দ দিয়েছে সেটা জানাতেও ভুল করলেন না মুশফিক, 'আনন্দের ঘটনা বললেন, প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এটা আমার কাছে অনেক বড় একটা তৃপ্তি ছিল। শুধু আমার জন্য না। আমি মনে করি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের জন্য অনেক বড় পাওয়া ছিল। বাংলাদেশের কেউ যে টেস্টে ২০০'র বেশি করতে পারে এই বিশ্বাসটা দরকার ছিল। আর অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডকে হারালাম এটা অনেক তৃপ্তি দিয়েছে আমাকে। শততম টেস্টে শ্রীলংকাকে হারালাম। শ্রীলংকার মাঠে জয়টা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার, বড় বড় দলগুলোর জন্যও অনেক কষ্ট করে জিততে হয়। এই কয়েকটা বলতে পারেন আমার ক্যারিয়ারে মাইলফলকের মতোই ছিল।' পরিসংখ্যানের আলোয় দারুণ উজ্জ্বল মুশফিক :৭০ টেস্টে ৩৬.৭৭ গড়ে ৪ হাজার ১৩ রান, ৭ সেঞ্চুরি, ২১ ফিফটি। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক তিনি। ২১৭ ওয়ানডেতে ৩৬.৩১ গড়ে ৬ হাজার ১৭৪ রান, ৩৮ ফিফটির সঙ্গে ৭ সেঞ্চুরি। ৮৬ টি২০তে ১২০.০৩ স্ট্রাইকরেটে ১২৮২ রান। প্রথম ৫ বছরে টেস্ট খেলেছেন ২১টা- রান ১১০০, গড়- ২৮.৯৪ পরের ৫ বছর টেস্ট খেলেছেন ২৪টা, রান- ১৪৫৫, গড় - ৩৫.৪৮। আর শেষ ৫ বছরে টেস্ট খেলেছেন- ২৫টা, রান-১৮৫৮, গড়- ৪৫.৩১। ওয়ানডেতে প্রথম ৪ বছরে- ৭৬ ম্যাচ, ১৩১৯ রান, ২৩.১৪ গড়। গত ১০ বছরে- ১৪২ ম্যাচ, ৪৮৫৫ রান, ৪২.৯৬ গড়, ৭ সেঞ্চুরি। গত ৫ বছরে- ৬৯ ম্যাচ, ২৫০৩ রান, ৪৭.২২ গড়, ৪ সেঞ্চুরি।