সালমারা পাচ্ছেন ইউরোপীয় কোচ

প্রকাশ | ০৮ জুন ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ অঞ্জু জৈনের সঙ্গে চুক্তি ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। কিন্তু টি২০ বিশ্বকাপে ভরাডুবি এবং দলের ভেতরে কর্তৃত্ব দেখানোর অভিযোগে তার সঙ্গে আর চুক্তি নবায়ন করেনি বিসিবি। ফলে নারী দলের জন্য নতুন কোচের খোঁজে বিসিবি। এবার টাইগ্রেসদের জন্য এশিয়ার নয় ইউরোপের কোচ নিয়োগ দিতে যাচ্ছে দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটি। বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। বিদেশি অভিজ্ঞ আটজন কোচের পাশাপাশি স্থানীয় দুই কোচ বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বিসিবির কাছে বায়োডাটা পাঠিয়েছেন তারা। করোনা পরিস্থিতির কারণে সবধরনের ক্রিকেট বন্ধ থাকায় কিছুটা সময় নিয়েই দশজন থেকে হেড কোচ চূড়ান্ত করবে বিসিবি। দীর্ঘমেয়াদে নিয়োগের কথাই ভাবা হচ্ছে। মেয়েদের দলের কোচের চাকরি পেতে অতীতে এত সাড়া পড়েনি। জাহানারা-রুমানারা এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে সবার। বিদেশি কোচদের মধ্যে যারা আবেদন করেছেন, তাদের প্রত্যেকেরই জাতীয় দলের হেড কোচ হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। অবশ্য দেশি দুই কোচ সম্পর্কে ধারণা দিতে সম্মত হননি কোনো সূত্রই। নতুন কোচ নিয়োগ নিয়ে নাদেল বলেছেন, 'আমরা অঞ্জুর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করব না- এটা আগেই ঠিক করেছি। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের পর থেকেই কিন্তু নতুন কোচ খোঁজা শুরু করি। করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু আপাতত বন্ধ আছে। এর মধ্যে অবশ্য চার থেকে পাঁচজন আগ্রহ দেখিয়েছেন কোচ হওয়ার জন্য। তাদের মধ্য থেকেই একজনকে নিয়োগ দেব। কিন্তু কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সেটা এখনই বলতে পারছি না। তবে এতটুকু বলতে পারি, নারী দলের জন্য ইউরোপিয়ান কোচ নিয়োগ দেওয়া হবে।' গত মাসের শেষ সপ্তাহে বিসিবির এই পরিচালক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাই তিনি কোচ নিয়োগের পুরো বিষয়টি বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনকে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান বলেন, 'আমি মাঝে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় কোচ নিয়োগের বিষয়টির জন্য সিইওকেই দায়িত্ব দিয়েছি। তারা আমাকে জানিয়েছে অনেকেই আবেদন করেছেন। তাদের মধ্য থেকে যার সঙ্গে আমাদের কথা ও শর্ত মিলবে তাকেই নেব।' নতুন কোচ কবে নিয়োগ দেওয়া হবে- এমন প্রশ্নে নাদেল বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছুতেই একটু সময় লাগছে। তারপরও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হয়তো আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই আমরা কোচ নিয়োগ দিতে পারি।' বিসিবি অবশ্য অঞ্জুর প্রতি কোনো আগ্রহ দেখায়নি। এই ভারতীয় নারী কোচ বিষয়টি বুঝতে পেরে নিজের নতুন ঠিকানা খুঁজে নিয়েছেন। তবে তিনি যে আর দায়িত্ব পালন করবেন না, বিষয়টি বিসিবির কাউকেই জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। মেয়েদের ক্রিকেটে শুরুর দিকে ছিলেন দেশি কোচরাই। আন্তর্জাতিক মঞ্চে টিম টাইগ্রেসের পথচলার শুরুর দিনগুলোতে কাজ করেছেন জাফরুল এহসান। ২০১৬ সালে আরেক অভিজ্ঞ কোচ সারোয়ার ইমরান কাজ করেছেন মেয়েদের সঙ্গে। তার আগে ২০১১ সালে এক মাসের জন্য ফিল্ডিং কোচ হিসেবে কাজ করেছিলেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তার অধীনে অল্পদিনেই অনেক উন্নতি করেছিল মেয়েরা। ওয়ানডে দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, 'দেশি-বিদেশি কোচের মধ্যে তেমন পার্থক্য দেখি না। একেকজন কোচ একেক থিউরি নিয়ে কাজ করেন। দেশি কোচ হলে যেটা হয় তারা আমাদের বোঝেন। আমাদের সক্ষমতা ও স্ট্যামিনা সম্পর্কে ধারণা রাখেন। বিদেশি কোচ এলে নতুন করে সব শুরু করতে হয়। কারণ অতটা ধারণা তাদের থাকে না। প্র্যাকটিস এবং ম্যাচে দেখে বুঝতে পারে কে কেমন। আমাদের নতুন করে প্রমাণ করতে হয়।' ছেলেদের ক্রিকেটের মতো মেয়েদের বেলাতেও দেখা যাচ্ছে কোচ বদলের হিড়িক। গত ছয় বছরে তিনজন বিদেশি ও একজন দেশি হেড কোচ কাজ করেছেন সালমা-রুমানাদের সঙ্গে। ২০১৪ সালে শ্রীলংকান কোচ চম্পকা গামাগে দায়িত্ব নেন। ২০১৬ সালের মে মাসে দু বছরের মেয়াদ শেষ হলে আর চুক্তি বাড়ায়নি বিসিবি। অন্তর্বর্তী কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন সারোয়ার ইমরান। আয়ারল্যান্ড সফরে মেয়েদের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ডেভিড ক্যাপেল কাজ করেন দেড় বছর। ২০১৮ সালের মে মাসে সাউথ আফ্রিকা সফর ছিল তার শেষ অ্যাসাইনমেন্ট। পরে নিয়োগ দেওয়া হয় ভারতীয় নারী দলের সাবেক ক্রিকেটার অঞ্জুকে। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই বাজিমাত করেন। তার অধীনে মালয়েশিয়ার মাটিতে বাংলাদেশ পায় স্বপ্নের এশিয়া কাপ শিরোপা। এশিয়া কাপের আগে দলকে খুব বেশি অনুশীলন করানোর সময় পাননি অঞ্জু। খেলোয়াড়দের দাবি ক্যাপেলের পরিশ্রম ও সাউথ আফ্রিকার কঠিন কন্ডিশনে খেলে আসার কারণেই টি২০ এশিয়া কাপে ভালো করেছে দল। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সবশেষ টি২০ বিশ্বকাপে টিম টাইগ্রেসের জয়হীন থাকার পেছনে কোচের যথাযথ পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল, এমন তথ্য ছিল বিসিবির কাছে। বাংলাদেশে চাকরি হারানো অঞ্জু যোগ দিচ্ছেন বরোদা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মেয়েদের হেড কোচ হিসেবে।