মাশরাফির অবস্থা স্থিতিশীল

প্রকাশ | ২৩ জুন ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন দেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা। গত শনিবার পরীক্ষা করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেই নিশ্চিত করেন এই সংবাদ। বর্তমানে ঘরেই আইসোলেশনে রয়েছেন মাশরাফি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আবদুলস্নাহর তত্ত্বাবধানে চলছে তার চিকিৎসাব্যবস্থা। তার পুরনো অ্যাজমার সমস্যা থাকায় ঝুঁকি এড়াতে এক্সরে করার পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক। সে কারণেই সিএমএইচে নেওয়ার কথা তাকে। বর্তমানে মাশরাফির অবস্থা স্থিতিশীল। সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভ্যারিফাইড পেজে মাশরাফি লেখেন, 'আমি এখন পর্যন্ত শারীরিক ভাবে সুস্থ আছি। বাসায় থেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছি। কিছু পরীক্ষিা করার জন্য আমার হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, সেটা স্বাভাবিক। হাসপাতালে ভর্তি কিংবা রুম না পাবার তথ্য সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন। কোন কারণে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না, কোনো ধরনের নিউজ এ আপনারা বিচলিত হবেন না। সবাই আমার জন্যে দোয়া করবেন। সবাইকে একত্রে থেকে এই যুদ্ধে আমাদের জয় লাভ করতে হবে। আলস্নাহ সবার সহায় হোন।' গণমাধ্যমকে মাশরাফির ভাই মোরসালিন বলেন, 'ভাই (মাশরাফি) ভালো আছেন। কোনো সমস্যা নেই। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে একটা চেকআপ করতে হয়। ভাইকেও সেই এক্সরে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সিরিয়াস কিছু না।' তিনি আরও বলেন, 'তার অ্যাজমার সমস্যা আগে থেকেই আছে। এরপরও শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি। এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল, বলার মতো কোনো উপসর্গ নেই। করোনা হলে যেটা হয়; বুকে চাপ ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হয়, সেটা হয়নি। তবে তার যেহেতু অ্যাজমার সমস্যা আছে, তাই এটা নিয়ে শঙ্কা ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে সামান্য কাশি ও শরীর ব্যথা রয়েছে। আপাতত তাকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।' বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান নিজে খোঁজ নিচ্ছেন। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সোমবার জানান, মাশরাফির ব্যবস্থাপত্র করে দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, 'মাশরাফির ব্যাপারটা যতদূর জানি, বিসিবি সভাপতি আব্দুলস্নাহ স্যারের (প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক) সঙ্গে কথা বলেছেন। তার প্রেসক্রিপশন পাঠানো হয়েছে। মাশরাফি তো সাংসদও। তার ব্যাপারটা ভিন্ন। কিন্তু যখন বিপদ হয়, সাংসদ দেখে হয় না। মানসিকভাবে সবাই ধাক্কা খায়। তখন তার পাশে সবারই থাকা উচিত। রোববার শুনলাম ভালো আছে, হাসিখুশি আছে।' অধ্যাপক এবিএম আব্দুলস্নাহ বলেছেন, 'কাল রাতেও (রোববার) তার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার মনে হয়েছে উনি ভালোই আছেন। বলেছি, বিশ্রাম নিতে। তিনি আমাকে অ্যাজমার সমস্যার কথা বলেছেন। বলেছি ঘাবড়াবার কিছু নেই। রাতে শুনেছিলাম অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণেই আছে। তবে খুব বেশি জটিলতা হলে হাসপাতালে নেওয়া লাগতে পারে। যেহেতু ভালো আছেন, দেখা যাক।' রোববার রাতে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ককে এসএমএস দিয়েছেন, কোনো সমস্যা হলে যেন দ্রম্নত তাকে জানানো হয়। দেবাশীষের চিন্তাটা এখন মাশরাফির পুরানো অ্যাজমা রোগ নিয়ে, 'সে অ্যাজমার রোগী। যাদের অ্যাজমা আছে তাদের বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু আগে থেকে তাদের ফুসফুস দুর্বল হয়ে আছে। ওর চিকিৎসা ব্যবস্থা আব্দুলস্নাহ স্যার দেখছেন। শ্বাসকষ্ট থাকলেও একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে মাশরাফির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই ভালো। এটিই আশাবাদী করছে সবাইকে।' মাশরাফি আক্রান্ত হওয়ার কয়েকদিন আগে তার শাশুড়ি এবং স্ত্রীর বোন ও তার মেয়ে করোনায় আক্রান্ত হন। কিন্তু তাদের সংস্পর্শে যাননি মাশরাফি। তার পরিবারের লোকজনের ধারণা, অন্য কোনোভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন তিনি। দেশে করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ শুরুর পর থেকে নিজ এলাকা নড়াইলে ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছেন মাশরাফি। সেখানেই কোনোভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা তার পরিবারের। করোনার উপসর্গ থাকায় গত শুক্রবার পরীক্ষা করিয়েছিলেন মাশরাফি। শনিবার দুপুরে জানতে পারেন, তিনি কোভিড-১৯ 'পজিটিভ। অবশ্য, সংক্রমণের শুরু থেকেই নিজ এলাকায় জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন নড়াইল-২ আসনের সদস্য। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবারই নড়াইল যেতে হয়েছে তাকে। এখন মাশরাফি নিজেই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার দিনই নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সবার কাছে দোয়া চেয়ে লিখেছিলেন, 'আজকে আমার রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারি। আমি বর্তমানে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছি এবং প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ মেনে চলছি।' মাশরাফির সঙ্গে ছোট ভাই মোরসালিন ও তার স্ত্রী থাকেন। করোনা নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় থাকায় অন্য বাসায় উঠেছেন তার ছোট ভাই মোরসালিন। রোববার তিনি এবং তার স্ত্রী করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনাও দিয়েছেন। মঙ্গলবার ফলাফল পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন, 'আমি কিছুটা কনফিউশনে আছি। এ কারণে বাসাটা ছেড়ে অন্য জায়গায় উঠেছি। করোনার পরীক্ষা করতে দিয়েছি, ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। ভাইয়ার সঙ্গে ভাবি ও বাচ্চারা আছে। ভাইয়া আলাদা রুমে আইসোলেশনে আছে।'