সাক্ষাৎকারে সাকিব আল হাসান

আরও বড় শাস্তি থেকে রক্ষা সাকিবের

দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সবকিছু বিস্তারিত তুলে ধরাতেই ৫-১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে মনে করছেন তিনি।

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
আমার মনে হয়, বোকার মতো ভুল করেছিলাম। কারণ যে অভিজ্ঞতা আমার আছে, যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আমি খেলেছি এবং দুর্নীতি দমন ধারা নিয়ে যতগুলো ক্লাস করেছি, আমার ওই ভুল করা উচিত হয়নি। সেটা নিয়ে আমি অনুতপ্ত।
ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও তা গোপন করায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সাকিব আল হাসানের আরও বড় শাস্তি হতে পারত। তবে সংস্থাটির দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সবকিছু বিস্তারিত তুলে ধরাতেই ৫-১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে মনে করছেন তিনি। আর নিজের ভুল থেকে বড় শিক্ষা পেয়েছেন বলেও জানালেন সাকিব। জুয়াড়ির কাছ থেকে তিন দফায় ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও তা গোপন করায় গত অক্টোবরে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পান সাকিব, যার মধ্যে এক বছরের শাস্তি স্থগিত। সব ধরনের ক্রিকেট কার্যক্রমের বাইরে থাকতে হবে তাকে আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত। সাকিবের মতো অভিজ্ঞ একজন, দুর্নীতি দমন ক্লাস যিনি অনেক করেছেন, তিনি কেন বারবার প্রস্তাব পেয়েও তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাননি, এই প্রশ্ন সাকিবের নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই উঠেছে অনেকবার। বুধবার ক্রিকেট-বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজে ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সাকিব জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টাকে খুবই হালকাভাবে নিয়েছিলেন তিনি। আর সেই ভুল বুঝতে পেরেছেন পরে বলেছেন সাকিব, 'আমার মনে হয়, আমি এটা একটু বেশিই হালকাভাবে (ক্যাজুয়ালি) নিয়েছিলাম। অবশ্যই, আমি এই পস্নাটফর্মে বিস্তারিত সবকিছুু আলোচনা করতে চাই না। আমি যখন দুর্নীতি দমন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং বললাম, তারা সবকিছু জানে, সব প্রমাণ দিলাম, ভেতর-বাইরের সবকিছু তারা খুঁটিনাটি সব জানে, সত্যি কথা বলতে, এ কারণেই মাত্র এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছি। নইলে ৫-১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারতাম। আমার মনে হয়, বোকার মতো ভুল করেছিলাম। কারণ, যে অভিজ্ঞতা আমার আছে, যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আমি খেলেছি এবং দুর্নীতি দমন ধারা নিয়ে যতগুলো ক্লাস করেছি, আমার ওই ভুল করা উচিত হয়নি। সেটা নিয়ে আমি অনুতপ্ত।' তারকা ক্রিকেটার হিসেবে অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে তারা আসেন নানাভাবে। সাকিবের দাবি, সে কারণেই জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার কথা তিনি ভুলে গিয়েছিল, 'দেখুন, আমরা হাজারও ফোনকল পাই, ম্যাসেজ পাই, কয়টা আর মনে থাকে! একটা উদাহরণ আমি দিতে পারি, ওই লোকটি যখন শেষবার ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল, আমি জবাব দিয়েছিলাম, 'সরি, কার সঙ্গে কথা বলছি?' তার মানে, আমার মনেও ছিল না, কার সঙ্গে কথা বলছি। তার সঙ্গে আগে কথা বলেছি ২-৩ বছর আগে। ওই সময় আমি জানতামও না লোকটা কে, তার নম্বরও আমার কাছে ছিল না।' বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার দাবি করেছেন, দৈনন্দিন জীবনে বহু মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হয় বলে জুয়াড়ির সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টি তার স্মৃতি থেকে মুছে গিয়েছিল। তবে নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর ভুল বুঝতে পেরেছেন তিনি। এ ঘটনা থেকে গ্রহণ করেছেন শিক্ষা বলেছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার, 'যাহোক, তারা যখন (আইসিসি দুর্নীতি দমন বিভাগ) তদন্ত করেছে, এসব তারা জানত এবং পরিস্থিতি বুঝেছে। তবে সত্যি বলতে, কারও উচিত নয় এসব হালকাভাবে নেওয়া। ওই ধরনের ম্যাসেজ বা কল কারও হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় বা ওভাবেই ফেলে রাখা উচিত নয়। দুর্নীতি দমন কর্তাদের জানানো উচিত নিরাপদে থাকতে হলে। এই শিক্ষা আমি পেয়েছি, বড় শিক্ষা এটি।' দেশসেরা এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব জানালেন, নিজের ওপর অতি আত্মবিশ্বাসও এ ক্ষেত্রে কাল হয়েছিল তার জন্য। বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার তিনি কোনো সংশয় ছাড়াই। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারও। নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার আগে গত বছর বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফর্ম করেছেন। তাইতো সাকিবের দাবি, এই আত্মবিশ্বাসের কারণেই অনেক কিছু পাত্তা দিতে চাননি তিনি, 'যেহেতু সবসময় বেশির ভাগ ব্যাপারই ঠিক করেছি, কখনো কখনো সেই বোধ পেয়ে বসতে পারে। মনে হতে পারে, 'কী আর হবে, কিছুই হবে না। আমি তো ভুল কিছু করছি না...।' কিন্তু কেতাবি হিসেবে তো ভুল হচ্ছে। হয়ত নৈতিকতার দিক থেকে ভুল হচ্ছে না, কিন্তু আইন বা নিয়মের দিক থেকে ভুল হচ্ছে। অনেক সময় এটি মনে থাকে না। এটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল। আমি কখনোই ভাবতে পারিনি, মাথায়ই আসেনি, ভুল করতে পারি। পাত্তা দিতে চাইনি। সেই ভুলই আমি করেছি। সত্যি কথা বলতে, কারোরই উচিত নয়, এসব হালকাভাবে নেওয়া কিংবা ফেলে রাখা। নিরাপদে থাকার জন্য অবশ্যই দুর্নীতি দমন কর্তাদের জানানো উচিত। এই শিক্ষা আমি পেয়েছি। এটি আমার জন্য বড় শিক্ষা।'