করোনার প্রভাব

সহসা মাঠে ফিরছে না ঘরোয়া ক্রিকেট

জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি না দেখে ঘরোয়া ক্রিকেট শুরুর আলোচনাতেই যাওয়ার সুযোগ নেই। এখন এটা নিয়ে আমরা ভাবছিই না। কেননা করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের ভাবনা এখন জাতীয় দল নিয়ে। -জালাল ইউনুস

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে সারাদেশে। আর মঙ্গলবার রেকর্ড মৃতু্যর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ জনে। এমন অবস্থায় খেলোয়াড়দের মাঠে নামিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না বিসিবি। করোনা পরিস্থিতির একটু উন্নতি হলেই তামিম-মুশফিকদের অনুশীলনে ডাকা হবে, জানিয়েছিলেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় খেলোয়াড়দের মাঠে নামার অপেক্ষা শেষই হচ্ছে না। মার্চ-এপ্রিল-মে পেরিয়ে জুন মাসও শেষদিকে। তৈরি হয়নি দেশের মাঠে ক্রিকেট ফেরানোর অবস্থা। পরিস্থিতি যা, তাতে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটারদের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হবে, এমনই আভাস দিলেন বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। আগামী দুই মাসের মধ্যে ২২ গজে বল গড়ানোর সম্ভাবনা কমই দেখছেন তিনি। টাইগার ক্রিকেটারদের ঘরবন্দি জীবন চার মাস হতে চলেছে। করোনায় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ হয়ে যায় এক রাউন্ডের পরই। ১৭ মার্চের পর থেকে বন্ধ বিসিবির ক্রিকেট কার্যক্রম। এরপর শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা। দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলেও বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ আশা করছেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি দেশে করোনা সংক্রমণ কমতে ?শুরু করতে পারে। তেমন হলে অনুশীলনে ফিরবেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শ্রীলংকা কিংবা দুবাইয়ে হতে পারে এশিয়া কাপ। সেটিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার মঞ্চ ধরে প্রস্তুতি নেবেন তামিম-মাহমুদউলস্নাহ-মুশফিকরা। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে থাকায় টাইগার ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরার গ্রিন সিগন্যাল দিতে পারছে না বোর্ড। বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান বলেন, 'সব বন্দোবস্ত তো আমরা করেই রেখেছি। তবে এখনই ক্রিকেটারদের অনুশীলনে নামিয়ে ঝুঁকি নিতে পারি না। ওদের কেউ যদি আক্রান্ত হয় সেটি আরও ভয়ের কারণ হবে। পরিস্থিতি একটু ভালো হলেই আমরা মাঠে নামব। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অনুশীলন শুরুর পর সামনে আমরা যে সিরিজ বা টুর্নামেন্ট পাব, সেটি দিয়েই শুরু করব। টেস্টকে আমরা প্রাধান্য দিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু সেটি দিয়ে শুরু করা সম্ভব হবে কি না এ মুহূর্তে বলা কঠিন।' জাতীয় দলে যারা থাকবেন তাদের অপেক্ষা হয়তো শেষ হবে, কিন্তু বাকি ক্রিকেটারদের কী হবে? বিসিবির অভিজ্ঞ পরিচালক জালাল ইউনুস বললেন, 'জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি না দেখে ঘরোয়া ক্রিকেট শুরুর আলোচনাতেই যাওয়ার সুযোগ নেই। এখন এটা নিয়ে আমরা ভাবছিই না। কেননা করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের ভাবনা এখন জাতীয় দল নিয়ে। এশিয়া কাপ হলে অনুশীলনে ফেরাতে হবে দলকে। অবশ্য সেটি সময়, পরিস্থিতি বিবেচনা করে।' গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা দেয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগী মারা যান ১৮ মার্চ। পরদিন অনির্দিষ্টকালের জন্য সবধরনের ক্রিকেট বন্ধের ঘোষণা দেয় বিসিবি। তার আগে ১৫ ও ১৬ মার্চ মাঠে গড়ায় লিগের প্রথম রাউন্ড। সেটিই দেশের শীর্ষ ক্রিকেটারদের শেষ মাঠে নামা। প্রিমিয়ার লিগের আয়োজক ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস (সিসিডিএম)। আয়োজক কমিটির প্রতিনিধি আলী হোসেন বললেন, 'করোনা পরিস্থিতি যা তাতে লিগ আয়োজনের এখতিয়ার এখন আর আমাদের হাতে নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড খেলোয়াড় ও ক্লাব প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে। ১২টি ক্লাবের অন্তত দেড় শতাধিক খেলোয়াড়ের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে খেলা শুরু করতে হবে। এটি সহজ ব্যাপার নয়। আমরা বিসিবির দিকেই তাকিয়ে আছি, তারা কী সিদ্ধান্ত নেয়।' প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে। লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দেশে ফিরলে এটি নিয়ে হতে পারে আলোচনা। দেশের বেশির ভাগ ক্রিকেটারের রুটি-রুজির মূল উৎস ঢাকা লিগ শেষপর্যন্ত ভেস্তে গেলে চরম দুর্দশায় পড়বেন অনেকেই। তারপরও পরিস্থিতি বিবেচনায় লিগ শুরুর দাবি জানাতে পারছেন না ক্রিকেটাররা। জুনের মাঝামাঝি ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভায় খেলোয়াড়দের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়। শিগগিরই আরেকটি সভা করে ক্রিকেটারদের অবস্থান তুলে ধরার কথা সংগঠনটির। করোনায় দীর্ঘ সময় বেকার চলে যাওয়ায় ক্রিকেট ক্যালেন্ডার এলোমেলো হয়ে পড়ছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটি চাইবে তাদের অধীনে থাকা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের দুটি আসর জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) আয়োজন করতে। তাতে এবারের মৌসুম থেকে প্রিমিয়ার লিগ হারিয়ে যায় কি না; এমন উদ্বেগও রয়েছে খেলোয়াড়দের মাঝে। ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আয়োজনের ভাবনা ভালোভাবেই আছে বিসিবির। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য জালাল ইউনুস জানান, অক্টোবরের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এলেই ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিপিএল আয়োজন সম্ভব হবে।