লিগ বন্ধ করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত

খেলার মাঠে যেমন জনপ্রিয় তেমনি সতীর্থদের কাছেও খুবই প্রিয় মানুষ বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলার ইমন মাহমুদ বাবু। নিজের প্রতিভা দিয়েই রেকর্ড পারিশ্রমিকে এবার নাম লেখান কিংসে। অথচ জাতীয় দলে যেন কিছুটা উপেক্ষিত। সর্বশেষ লাওসের বিপক্ষে তাকে দেখা গেছে জাতীয় দলের জার্সিতে। নিজের সেরাটা দিয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করার প্রত্যাশা তার। করোনা পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে লিগ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা আত্মঘাতী হয়েছে বলে অভিমত এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের।

প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ইমন মাহমুদ বাবু
যায়যায়দিন : কোথায় আছেন? অনুশীলন কীভাবে করছেন? ইমন বাবু : ঢাকায় আছি গেন্ডারিয়ায়। আলহামদুলিস্নাহ ভালো আছি। সকালে অনুশীলনে যাই। সপ্তাহে একদিন ক্লাবে যাই। গিয়ে জিম করে আসি। যায়যায়দিন : আপনাদের এলাকাটা তো রেড জোনে পড়েছে। তাহলে অনুশীলনে যাওয়াটা ঝুঁকি হয়ে যায় না? ইমন বাবু : একটু রিস্ক হয়ে যায়। এখন কি আর করার আছে। তিন-চার মাস তো ঘরে বসে থাকা যায় না। ঘরে বসে আর কতটুকু ফিটনেস ধরে রাখা যায় বলেন। প্রথম দিকে প্রায় দু'মাস বাসাতেই ছোটোখাটো ট্রেনিং করেছি। এর মধ্যে আব্বা মারা গেলেন। প্রায় মাস খানেক অনুশীলন বন্ধ ছিল। ফুটবল খেলোয়াড় তো। মাঠে না গেলে তো হয় না। ভোরবেলা লোকজন কম থাকে তখন অনুশীলনের জন্য বের হই। যায়যায়দিন : ফুটবলের শুরুটা কীভাবে? কখন মনে হলো একজন ফুটবলার হতে হবে? ইমন বাবু : শুরুটা খুব অল্প বয়সেই। এলাকার কোচ শফিকুল ইসলাম কালস্নুর তত্ত্বাবধানে ট্রেনিং শুরু করি। এরপর অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দলে ট্রায়ালে টিকলাম। তখন নারায়ণগঞ্জের মিথুন (জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার) ভাইরা খেলতেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। তাদের দেখে খেলার আগ্রহ জন্মাল। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলব তার কিছুদিন আগে চার দিনের জন্য একটা ক্যাম্প হয় ব্রাজিলের কোচ ডিডোর তত্ত্বাবধানে। তিনি এসে বলেন ৪ দিনের জন্য অনূর্ধ্ব-১৭ দলটা দেখবেন। এর আগে ফরাশগঞ্জের কোচ কামাল বাবু সুপারকাপে আমার নাম নিবন্ধন করেন। ফরাশগঞ্জ-ব্রাদার্সের ম্যাচে বদলি হিসেবে খেলতে নামি। তখন খেলা দেখে ডিডো আমাকে পছন্দ করেন। এভাবেই শুরু। যায়যায়দিন : প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ফুটবল? ইমন বাবু : লিগ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা আমি মনে করি আত্মঘাতী হয়েছে। পরিস্থিতি দেখেশুনে আরেকটু সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। আমাদের মতো পারিশ্রমিক হয়তো হাতে- গোনা কয়েকজন পায়। যারা কম পারিশ্রমিকে খেলেন তাদের অবস্থাটা একবার ভাবুন। যায়যায়দিন : নতুন জীবন শুরু করেছেন শুনলাম। ভাবির নাম কী? উনি কী করেন? ইমন বাবু : ওর নাম মালিহা তাবাস্‌সুম। এখনও পড়াশোনা করছে। বিয়ে পারিবারিকভাবেই হয়েছে। তবে করোনার জন্য অনুষ্ঠান করা হয়নি। যায়যায়দিন : বসুন্ধরার তো এএফসি কাপের তারিখ হয়েছে। ক্যাম্প কবে শুরু হবে? ইমন বাবু : এএফসির খেলা অক্টোবরের দিকে শুরু হবে। ক্যাম্প হয়তো ঈদের পর শুরু হবে। ক্লাবের ম্যানেজার ফোন দিয়ে জানিয়েছেন। যায়যায়দিন : কিংসের মতো ক্লাবে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকে খেলছেন। অথচ জাতীয় দলের প্রাথমিক দলেও অনিয়মিত, কারণটা কী? সর্বশেষ কোন ম্যাচটা খেললেন জাতীয় দলের হয়ে? ইমন বাবু : জাতীয় দলের হয়ে লাওসের বিপক্ষে খেলেছি। কিংস আমাকে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক দিয়ে তাদের দলে নিয়েছে। তার নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। অথচ সেই আমিই কোনো এক অদৃশ্য কারণে জাতীয় দলে ডাক পাই না। যায়যায়দিন : জাতীয় দলের জার্সিতে যখন খেলেন কোন বিষয়টা বেশি কাজ করে? ইমন বাবু : দেশপ্রেম থাকে। খুব বেশি কাজ করে দায়িত্ববোধটা। যে দেশের জন্য খেলছি। জাতীয়সংগীত থেকেই অন্যরকম একটা অনুভূতি চলে আসে। ফুটবলটা একটা যুদ্ধই বলা যায়। এমনও হয় ফুটবল খেলতে গিয়ে মাঠে মৃতু্যও হতে পারে। কারণ এখানে বডি কন্টাক হয়। তখন মনে হয় যেন দেশের জন্য যুদ্ধ করতে নেমেছি। ওই সৌভাগ্য তো হয়নি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার। মাঠে নামলে ওইরকম একটা অনুভূতি চলে আসে।