সাক্ষাৎকার

জুনিয়রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত অসীম

দেশের হকির অন্যতম খেলোয়াড় অসীম গোপ। যতই দিন যাচ্ছে করোনাতে ঘরবন্দি থেকে হতাশ হয়ে পড়ছেন জাতীয় দলের এই গোলরক্ষক। হকিই তার একমাত্র পেশা। প্রায় তিন বছর টার্ফে হকি নেই। তাই তার অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপের দিকেই যাচ্ছে। দেশের খ্যাতনামা খেলোয়াড়দেরই যখন এই অবস্থা, তখন তরুণ যে খেলোয়াড়রা জাতীয় দলের জার্সির স্বপ্ন বুনছিলেন তাদের কী হবে? তার মতে, ক্লাবগুলোর সদিচ্ছার অভাবেই টার্ফে গড়ায় না হকি লিগ। আর তার প্রভাব পড়ে জাতীয় দলের ওপরও।

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অসীম গোপ
কী করছেন? কোথায় আছেন? বাসাতেই আছি। লকডাউন শিথিল করার পর হবিগঞ্জে নিজ বাড়িতে চলে এসেছি। ফিটনেস কীভাবে ধরে রাখছেন? ফিটনেস ধরে রাখতে সকালে ৩০ মিনিট জগিং করি। এছাড়া তো তেমন কিছু করার নেই। আপনাদের ওইখানে করোনা পরিস্থিতি কেমন? করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। বাইরে তো যাওয়ার উপায় নেই। যতটা পারছি বাসাতেই থাকছি। প্রায় তিন বছর হতে চলল টার্ফে নেই হকি লিগ। হচ্ছে হবে করে এ বছরও হলো না। এর প্রভাব কতটা খেলোয়াড়দের উপরে পড়েছে? খেলা নেই ফিটনেস রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হকিটাকে একসময় জাদুঘরে তুলে রাখতে হবে। এমনিতেই দু'বছরে একটা লিগ হয়। আমাদের মতো খেলোয়াড়রা তো অর্থনৈতিকভাবে হকির ওপরই নির্ভরশীল। সেখানে যদি দলবদল না হয়। লিগ টার্ফে না থাকে তাহলে চলাই কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে আগে ফুটবলের লিগও তো অনিয়মিত ছিল। কিন্তু এখন নিয়মিতই হচ্ছে। তাহলে আপনাদের হকিতে এতটা অনিয়মিত হওয়ার কারণ কি বলে আপনি মনে করেন? সবকিছু নির্ভর করে ক্লাবকর্তাদের মনমানসিকতার ওপর। ক্লাবগুলো সদিচ্ছার ওপর। তারা চাইলেই টার্ফে লিগ রাখতে পারে। লিগ টার্ফে থাকা মানে শুধু একজন খেলোয়াড়ের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়া না, নিয়মিত লিগ হলে খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা স্পিরিট কাজ করে। যে, এবার ভালো করলে পরেরবার আরও ভালো একটা টিম পাব। অভিজ্ঞতাও বাড়ে। আপনি কি মনে করেন লিগ অনিয়মিত হওয়ার প্রভাবটা জাতীয় দলেও পড়ে? অবশ্যই। আমরা নিয়মিত লিগটা পাই না। টুর্নামেন্টে ম্যাচ হয় হাতে গোনা। তাই আমাদের ভুল ত্রম্নটিগুলো বোঝার সুযোগই এ কয়টা ম্যাচে আমরা পাই না। তারপর যখন জাতীয় পর্যায়ে খেলতে যাই তখন ভারত-পাকিস্তানের কাছে ৭-৮ গোল হজম করতে হয়। লিগটা নিয়মিত হলে অন্তত বড় বড় টিমগুলোর সঙ্গে জিততে না পারলেও তাদের সামনে দাঁড়াতে পারতাম। আপনি তো অনেক অভিজ্ঞ একজন গোলরক্ষক। দেশের হকির যখন এই অবস্থা তখন নবাগতদের আপনি কি বলতে চান? চিন্তা করেন আমাদের মতো খেলোয়াড়দেরই যখন এই অবস্থা। তখন নতুন যারা আসছে তাদের ভবিষ্যৎ কী সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান। ফুটবলে তো জাতীয় দলের ম্যাচ নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। আপনাদের কোনো খবর আছে? এবার জুনিয়র এশিয়া কাপটাই তো হলো না। অক্টোবরে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হওয়ার কথা ছিল। হবে কি হবে না সে বিষয়ে ফেডারেশন থেকে এখনো কিছু জানায়নি। খেলতে গিয়ে এমন কোনো মজার বা কষ্টের অভিজ্ঞতা হয়েছে যেটা এ মুহূর্তে মনে পড়ছে? সব সময় স্বপ্ন দেখতাম দেশের জন্য খেলব। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়াটা ছিল আনন্দের। যখন জাতীয় দলের কোনো ম্যাচ জিতেছি আনন্দ পেয়েছি। হেরে গেলে কষ্ট পেয়েছি। তবে ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় জুনিয়র এশিয়া কাপের একটা মজার স্মৃতি আছে। ওমানের বিপক্ষে আমরা ২-১ গোলে হেরে যাচ্ছিলাম। তখন ৩০ সেকেন্ড বাকি। আমি ঘড়ি দেখছি আর ভাবছি দেশে গিয়ে কী জবাব দেব। এমন সময় আরশাদ বল নিয়ে ডগরান করে এক গোল করে ফেলে। ম্যাচ ড্র হয়ে যাওয়াতে পেনাল্টি শুট আউট হয়। ওই ম্যাচটা আমরা জিতে যাই। তখন ওমানের কোচ অলিভার রাগে ফেটে পড়েন। আমাদের তো আর কিছু বলতে পারেন না। আম্পায়ারকে বকতে থাকেন। হাতের বোর্ড ছুড়ে ফেলে দেন।