ব্যক্তিগত অনুশীলনে মনোযোগ টাইগারদের

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
শ্রীলংকা সফরে যাওয়া হচ্ছে না, এশিয়া কাপ স্থগিত, টি২০ বিশ্বকাপ স্থগিতের চূড়ান্ত ঘোষণা না এলেও অস্ট্রেলিয়ায় মেগা আসরটি যে হচ্ছে না তা বলাই যায়। ঘরের মাঠে আর বিদেশে অন্য সিরিজও আগেই স্থগিত হয়ে গেছে। তাতে নিকট ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। ফলে ব্যাট ও বল যাদের নিত্যসঙ্গী, সেই ক্রিকেটারদের বড় একটা অংশ অনুশীলনের বাইরে অনেকদিন। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসাব বলছে ১০০ দিনের বেশি হয়ে গেছে। তাই বলে ক্রিকেট তারকারাও কিন্তু বসে নেই। করোনায় আক্রান্ত সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা মিরপুরের বাসায় আইসোলেশনে। অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটারদের বড় অংশ রাজধানীতেই অবস্থান করছেন। জানা গেছে, ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল, টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক, টি২০ দলপতি মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ, মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম, ওপেনার লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন ধ্রম্নব, লেগস্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপস্নব ঢাকায়ই আছেন। তারা যেহেতু ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন, তাই ফিজিক্যাল ট্রেনিং, রানিং মেশিনে রানিং আর জিমের হালকা সামগ্রীতে জিমওয়ার্ক করা ছাড়া সে অর্থে তেমন কিছু করার সুযোগ নেই। রাজধানীতে অবস্থানরত ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র মুশফিক বেরাইদে ফুটবল একাডেমি মাঠে রানিং ও সিনথেটিক টার্ফে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করছেন। আর তামিম, রিয়াদ এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকা মুমিনুল, লিটন ও তাইজুল ইসলাম ফ্ল্যাটেই জিম ও ট্রেডমিলে রানিং করে ফিটনেস ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এদিকে জাতীয় দলের আরেকটা বড় অংশ সেই লকডাউন থেকেই রাজধানীর বাইরে নিজ শহর বা গ্রামে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে ড্যাশিং টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার তার নিজ শহর সাতক্ষীরায়। স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ খুলনায় নিজের বাসায়। অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও নিজ শহর ফেনীতে আছেন। পেসার রুবেল হোসেন বাগেরহাটে নিজ শহরে, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ময়মনসিংহ শহরে, সাব্বির রহমান রুম্মন আছেন রাজশাহীতে। আর কদিন আগে করোনার ধাক্কা সামলে ওঠা বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল অপু নারায়ণগঞ্জের বন্দরে নিজ বাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন। খালি চোখে মনে হচ্ছে, ঢাকার বাইরের ক্রিকেটারদের প্র্যাকটিসের সুযোগ-সুবিধা বেশি। খোলা আকাশের নিচে ভোরে রানিং, সবুজ মাঠে ব্যাট ও বল হাতে নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ব্যাটিং ও বোলিং অনুশীলনের জন্য যে মানের পিচ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা দরকার, ঢাকার বাইরে আন্তর্জাতিক ভেনু্যগুলো ছাড়া বাস্তবে অন্যত্র তা নেই। কাজেই চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট ও রাজশাহী স্টেডিয়ামের আশপাশে থাকা ছাড়া সে অর্থে স্কিল ট্রেনিং করার তেমন সুযোগ নেই ক্রিকেটারদের। অভাবটা ভালোই টের পাচ্ছেন জাতীয় দলের তারকা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। বর্তমানে নিজ শহর ফেনীতে আছেন সাইফউদ্দিন। সে অর্থে তেমন প্র্যাকটিস করতে পারেননি। মাঝে ক'দিন কাছেই এক মাঠে কংক্রিটের পিচে ব্যাটিং ও বোলিং অনুশীলন করেছেন। সেটাও বৃষ্টির কারণে বন্ধ। সাইফউদ্দিন বলেছেন, 'আমি যেখানে আছি খুবই বাজে অবস্থা। ছয় মাস ধরে চেষ্টা করছি একটা ইনডোরের জন্য। কিন্তু পাইনি। এমনিতে ফিজিক্যাল ট্রেনিং করছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে স্কিল ট্রেনিং করতে পারছি না। বাসার কাছেই পাকা কংক্রিটের পিচ আছে, সেখানে বোলিং ও ব্যাটিং অনুশীলন করেছি কিছুদিন।' তুলনামূলক ভালো অবস্থায় আছেন ঢাকার বাইরের ক্রিকেটাররা। তাদের খোলা আকাশের নিচে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ বেশি। রানিং করা ও হালকা নকিং করতেও পারছেন কেউ কেউ। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম হলেন জাতীয় দলের হার্ডহিটিং ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। এই সময়টায় খুবই সতর্ক সৌম্য। বাইরে গিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথাই বেশি ভাবছেন এই বাঁহাতি। বাসার আশপাশে খোলা জায়গায় খুব প্রয়োজন না পড়লে বের হন না সৌম্য। তিনি বলেন, 'আমি ফিজিক্যাল ট্রেনিংটা ঘরেই করছি। জিমওয়ার্কের কিছু সামগ্রী কিনে নিয়েছি। রানিংয়ের যন্ত্র ট্রেডমিল আছে। ট্রেডমিলে দৌড়াই। তাই আমার আর বাইরে গিয়ে দৌড়াতে হচ্ছে না। তবে ব্যাটিং ও বোলিং অনুশীলন করা হচ্ছে না এই যা।' জাতীয় দলের তারকা পেসার রুবেল হোসেন এখন বাগেরহাটে। সেখানে বোলিং প্র্যাকটিস করতে না পারলেও নিজের শরীরটাকে ফিট রাখতে প্রচুর ঘাম ঝরাচ্ছেন। বাগেরহাট শহরে রুবেলের বাড়ির খুব কাছ দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদী। সেই নদীর পাড়ে বালু মাটির ওপর প্রতিদিন এক ঘণ্টা রানিং করছেন এ দ্রম্নতগতির বোলার। গ্রামের বাড়িতে নিজের অনুশীলন নিয়ে রুবেল বলেন, 'ফাস্টবোলার হিসেবে আমার সবচেয়ে বেশি দরকার ফিটনেস। ফিটনেস লেভেল ঠিক রাখলে স্কিল ট্রেনিংয়ের ঘাটতি দূর করা সম্ভব। আমি সে চেষ্টাই করছি। এখানে তেমন বোলিং প্র্যাকটিসের সুযোগ সুবিধা নেই। তাই ফিজিক্যাল ট্রেনিংটাই বেশি করছি। বিশেষ করে নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নিচে বালুর ওপর দৌড়াচ্ছি। ওটা আশা করছি খুব কাজে দেবে।' সুযোগ-সুবিধা থাকুক আর না থাকুক, ক্রিকেট মাঠে ফিরলে সবাইকে সেরাটাই দিতে হবে। সেখানে অজুহাতের কোনো উপায় নেই। তাই যার যার ব্যক্তিগত প্রস্তুতিই এখন ভরসা। জাতীয় দলের যে সব ক্রিকেটার ঢাকার বাইরে আছেন, তারা নিজের কোচ এখন নিজেই।