খুলছে ক্রিকেটের বন্ধ দুয়ার

কারণ করোনা সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ঈদের পর আগস্টেই ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরাতে চায় বিসিবি।

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে আছে দেশের ক্রিকেট। ক্রিকেটাররাও অনুশীলনে ফিরতে মরিয়া। ঈদের আগে ক্রিকেটারদের অনুশীলনে ফেরানোর একটা সম্ভাবনা তৈরি হলেও সেখান থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কারণ করোনা সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ঈদের পর আগস্টেই ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরাতে চায় বিসিবি। বিসিবির ইচ্ছা ১০ আগস্টের পরই যেন ক্রিকেটাররা মাঠে ফেরে। আর শুরুটা হবে কন্ডিশনিং ক্যাম্প দিয়ে। ফিটনেস ট্রেনিংয়ের কাজ শেষে ধীরে ধীরে শুরু হবে স্কিল অনুশীলন। অবশ্য তার আগেই ব্যক্তিগত ফিটনেস অনুশীলন করতে যাচ্ছেন টাইগাররা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে অবশেষে। চার মাস পেরিয়ে খুলতে চলেছে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বন্ধ দুয়ার। সামনের সপ্তাহ থেকে ব্যক্তিগত ফিটনেস অনুশীলনের জন্য হোম অব ক্রিকেটে আসতে পারবেন টাইগাররা। স্বাভাবিক চিত্র না ফিরলেও কিছুটা হলেও ভাঙবে স্টেডিয়ামটির নিস্তব্ধতা। নির্বাচক প্যানেল এরইমধ্যে ৩৪ জনের একটা স্কোয়াড ঠিক করে ফেলেছেন। তাদের নিয়ে তিন গ্রম্নপে হবে ক্যাম্প। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক গ্রম্নপ কাজ করে যাওয়ার পর অন্য গ্রম্নপ যোগ দেবেন। নির্বাচকদের বিবেচনায় থাকা পুলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ। মিরপুরে ফিটনেস অনুশীলন করতে আগ্রহীদের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। ফিটনেস অনুশীলনের জন্য জিমনেসিয়াম ছাড়াও প্রয়োজনীয় সবকিছুই ব্যবহার করতে পারবেন ক্রিকেটাররা। রানিং করা যাবে বিসিবির একাডেমি মাঠ ও শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। করোনাভাইরাসের কারণে ১৬ মার্চের পর ক্রিকেট না হওয়ায় মাঠ দুটি পেয়েছে নতুন প্রাণশক্তি। বিসিবির মাঠকর্মীদের নিয়মিত পরিচর্যার ফলে ফিরে এসেছে গাঢ় সবুজ রূপ। করোনাকালে ক্রিকেটারদের অনুশীলনের রোডম্যাপ তৈরির দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে বিসিবির মেডিকেল বিভাগের ওপর। প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানিয়েছেন, সোমবার তারা সরেজমিনে দেখেছেন ক্রিকেটারদের অনুশীলন ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি। স্বাভাবিকভাবেই এ সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। দেবাশীষ জানালেন, 'ফিটনেসের কাজ করার জন্য যেসব প্রস্তুত রাখা দরকার, সেটি আমরা করছি। আজ আমরা সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। আগামী সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করতে পারবেন ক্রিকেটাররা। সুনির্দিষ্ট তারিখ বলতে পারছি না, কেননা দু-একদিন এদিক-সেদিক হতে পারে।' 'অনুশীলনে আগ্রহীদের সংখ্যা পেলে আমরা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে পারব, এক দিনে কয়জন কাজ করবে সেটি নির্ভর করছে প্রকৃত সংখ্যার ওপর। কাজটা হবে শুধু ফিটনেস নিয়ে। এজন্য যা যা প্রয়োজন সব ব্যবহার করতে পারবেন খেলোয়াড়রা।' সব ক্রিকেটারই যে অনুশীলনে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে ব্যাপারটা এমনও নয়। অনেকে ঘরে বসে ফিটনেসের কাজ করতে পারছেন। বিসিবি থেকে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে সরবরাহ করা হয়েছে ফিটনেস সরঞ্জাম। যে কারণে মিরপুরে ফিটনেসের কাজটি হবে মূলত সীমিত পরিসরে। ব্যক্তিগত চাওয়ায় মিরপুরে ফিটনেস অনুশীলন আগামী সপ্তাহ থেকে চালু হলেও স্কিল নিয়ে কাজের অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুটা সময়। যদিও কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে ব্যাটিং-বোলিং শুরু করে দিয়েছেন। তবে সরকারি পর্যায় থেকে গ্রিন সিগন্যাল না পাওয়া পর্যন্ত বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে খেলোয়াড়দের অনুশীলনে ডাকবে না, সেটি পরিষ্কার। এ নিয়ে বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, 'আমরা খেলোয়াড়দের এখনো ঘরে বসেই ফিটনেসের কাজ করতে বলছি। মাঠে নামতে অনুৎসাহিত করছি। করোনা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি আমরা। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে আর সরকারের অনুমোদন পেলে ক্রিকেট ফিরবে।' বিসিবির সিইও আরও বলেন, 'আমরাও চাইছি যত দ্রম্নত সম্ভব ক্রিকেট শুরু হোক। বাস্তবতা হলো, সে পরিস্থিতি এখনো আসেনি। যদি কোনো খেলোয়াড় ব্যক্তিগত উদ্যোগে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে চায়, তাহলে করতে পারবে। সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।' প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু সোমবার দুপুরে বলেছেন, 'আমরা এর আগেও ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। সেজন্য বিসিবি সেভাবে মাঠ, জিম এবং অন্যান্য অবকাঠামো প্রস্তুতও করেছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় আমরা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছি। তবে এবার আমরা আরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরাতে চাচ্ছি। সরকার অনুমোদন দিলে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফিটনেস ক্যাম্প শুরু হতে পারে। জাতীয় দলের ৩৪ ক্রিকেটার এবং ২৬ জন হাই-পারফরম্যান্স ক্রিকেটারের তালিকা প্রস্তুত করা আছে। যাদের নিয়ে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে কন্ডিশনিং ক্যাম্প শুরু হতে পারে। এরপর স্কিলের কাজ।' ক্রিকেটারদের নিয়ে পুরোদমেই কাজ করতে চায় বিসিবি। এজন্য দেশের বাইরে থাকা কোচিং স্টাফদেরও ফেরানো হবে। জানা গেছে, কোচ রাসেল ডমিঙ্গোসহ অন্যান্য কোচিং স্টাফরাও কর্মস্থলে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও বিসিবি সরকারের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছে। এ নিয়ে সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিসিবির বৈঠকে বসারও কথা রয়েছে।