বিরতিহীন মুশফিক

প্রকাশ | ২৭ জুলাই ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
মিরপুর শেরেবাংলায় ১৯ জুলাই থেকে ব্যক্তিগত অনুশীলন করছেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম ধাপে আট দিনের অনুশীলন রোববার শেষ হয়েছে। মুশফিক চাইছেন, ঈদের পর অনেকে যোগ দেবে অনুশীলনে -ওয়েবসাইট
মিরপুরে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত অনুশীলনের প্রথম ধাপের শেষদিনের অনুশীলন পরিকল্পনায় ছিল না মুশফিকুর রহিমের নাম। অথচ তিনিই কি না সবার আগে চলে এলেন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। ইনডোরে গিয়ে লম্বা সময় করলেন ব্যাটিং অনুশীলন। অনুশীলনের জন্য হঠাৎ করে মুশফিকের মাঠে চলে আসার ঘটনা অবাক করেনি কাউকেই। বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটার হিসেবে সবাই তাকে চেনেন ও জানেন। শ্রাবণের অঝোরধারায়ও যিনি অবিচল থাকেন ফিটনেসের কাজে, রোদেলা সকালে সেই তিনি কী করে মাঠে না এসে থাকবেন! খেলায় ফেরার দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও মুশফিক নেমে পড়েছেন নিজেকে শতভাগ তৈরির মিশনে। চার মাস ঘরবন্দি থাকার পর মি. ডিপেন্ডেবল গত সপ্তাহ থেকে পাচ্ছেন মাঠের সুবাস। অনুশীলনের সুযোগ উপভোগও করছেন দারুণভাবে। মিরপুরে অনুশীলনে ফেরা গুটিকয়েক ক্রিকেটারের মধ্যে সুযোগ সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়েছেন মুশফিকই। ব্যাটিং, রানিং, কিপিং- সবই করেছেন অভিজ্ঞ টাইগার তারকা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ব্যবস্থাপনায় ব্যক্তিগত অনুশীলনের শুরুটা ১৯ জুলাই হলেও বৃষ্টির হানায় প্রথমদিকে কিছুটা বিপাকেই পড়তে হয়েছিল মুশফিক-মিঠুন-ইমরুল-শফিউল-তাসকিনদের। টানা বর্ষণে কখনো ইনডোরে রানিং করতে হয়েছে, কখনো আবার বৃষ্টির মধ্যেই একাডেমি মাঠে দৌড়েছেন মুশফিক। রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশ পেয়ে বাড়িয়েছেন ইনটেনসিটি। শনিবার স্টেডিয়ামের পুরো মাঠ বিরামহীন ১৪ বার প্রদক্ষিণ করেছেন মুশি। পরিশ্রমের ফল খেলা শুরু হলেই হয়তো পেতে থাকবেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। করোনাভাইরাসের কারণে সব যখন স্থবির তখনও ঘরে বসে মুশফিক ঝরিয়েছেন ঘাম। ঘরকে জিম বানিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি, ভিডিও পোস্ট করে প্রতিদিনের রুটিন দেখিয়েছেন সবাইকে। ঘর কিংবা মাঠ, সবখানেই পরিশ্রমের দিক থেকে মুশফিক যে সবার সেরা সেটি প্রমাণ করছেন বারবার। পরিশ্রমের প্রতিফলন তার ব্যাটিংয়ে অতীতে দেখা গেছে। সামনেও হয়তো দেখা যাবে সমানতালে। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মাঝে মুশফিকুর রহিম সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটার- যা বলাই বাহুল্য। তবে নিজে পরিশ্রমের পাশাপাশি সতীর্থদের প্রয়োজনেও যে এগিয়ে আসেন তিনি, সেটাই দেখা গেল এবার। ব্যক্তিগত অনুশীলনে রোববার মুশফিকের কাছে টিপস নিলেন ইমরুল কায়েস। জাতীয় দলের দীর্ঘদিন ধরে খেলে আসছেন মুশফিকুর রহিম ও ইমরুল কায়েস। সময়ের পরিক্রমায় প্রথমজন জাতীয় দলের একজন স্তম্ভে পরিণত হলেও আরেকজন এখনো জায়গা পাকা করতে পারেননি। রোববার দুজনেই নেটে একসঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়েছেন, যেখানে একপর্যায়ে মিস্টার ডিপেন্ডেবলের কাছ থেকে বেশ কিছু টিপস নেন বাঁহাতি ওপেনার। অনুশীলন শেষে নিজের ফেসবুক পেজে দুটি ছবি পোস্ট করেন কায়েস। সেখানে দেখা যায় একটি চেয়ারে বসে থেকে হাত নাড়িয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন মুশফিক। নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাট হাতে শ্যাডো প্র্যাকটিস করছেন টাইগার ওপেনার। অর্থাৎ মুশফিকের টিপস অনুযায়ী ব্যাটিং অনুশীলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কায়েস। ছবিগুলোর ক্যাপশনে কায়েস লিখেছেন, 'সাফল্যের কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। নেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দারুণ কিছু সময় কেটেছে।' বিসিবি থেকে চার স্টেডিয়ামে যে ১১ ক্রিকেটারের অনুশীলনের সূচি দেওয়া হয়েছিল, তাতে ২৬ জুলাই শেষদিন হিসেবে দেখানো আছে। সেখানে একদম গ্রাফ এঁকে দেখানো আছে কবে কখন কার অনুশীলনের সময়। যা রোববার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আর বাড়ানো হয়নি। খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে হচ্ছিল, ১৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই ব্যক্তিগত অনুশীলন রোববারই শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু না, অন্তত আরও দুদিন বাড়তে যাচ্ছে ক্রিকেটারদের অনুশীলন। জানা গেছে, মুশফিকুর রহিমসহ আরও কয়েকজন ক্রিকেটার এই প্র্যাকটিস সেশন আরও অন্তত দিন দুয়েক বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন। বিসিবি হেড অফ মিডিয়া রাবিদ ইমাম একটি গণামাধ্যমকে জানান, 'ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত অনুশীলন রোববার শেষ নাও হতে পারে। মুশফিকুর রহিম আরও কয়েকদিন চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। আরও কয়েকজনও না কি দু-এক দিন বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে এই অনুশীলন পর্ব আরও এক-দু দিন বাড়তে পারে। হয়তো ২৮ জুলাই অবধি চলতে পারে এ পর্ব।' এদিকে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ব্যক্তিগত অনুশীলনে ক্রিকেটার সংখ্যা। ঢাকার শেরেবাংলা, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, খুলনার শেখ নাসের ও সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে প্রথম অনুশীলন শুরু করেছিলেন ১০ জন- মুশফিক, ইমরুল, মিঠুন, শফিউল, নাইম হাসান, মেহেদি মিরাজ, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদি হাসান, খালেদ আহমেদ ও নাসুম আহমেদ।