বিপিএল নিয়ে ফিকার বিবৃতি

ফিকার তথ্যকে বিভ্রান্তিকর বলছে বিসিবি

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
'এটা অবশ্যই উদ্বেগের কারণ। আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি। বিসিবি বিপিএলের সঙ্গে জড়িত। আমরা খুব দ্রম্নত পারিশ্রমিক পরিশোধ করব এবং যে সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি পারিশ্রমিক বকেয়া রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।' -নিজাম উদ্দিন চৌধুরী
ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পেতে সমস্যা হয়- জরিপ চালিয়ে সারা বিশ্বের এমন ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খুঁজে পেয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সংগঠন ফিকা (ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন)। আর সে তালিকায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নাম দেখে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তারা বলছে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের ভিত্তিতে এমন প্রতিবেদন দিয়েছে ফিকা। ক্রিকেট বিশ্বে কুড়ি ওভারের লিগগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু জনপ্রিয় লিগে কলঙ্কের দাগ পড়ছে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক যথাসময়ে পরিশোধ না হওয়ায়। তেমনই অভিযোগ উঠেছে এবার। লিগগুলোতে পারিশ্রমিক না পাওয়া অথবা বিলম্বিত পারিশ্রমিকের ঝামেলায় পড়েছেন অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সংগঠন 'ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ফিকা) বার্ষিক প্রতিবেদনেই এমন তথ্য উঠে এসেছে। তালিকাভুক্ত সেই ৬টি লিগের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগও (বিপিএল)। ফিকার এমন প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিব্রত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবি ফিকার তথ্যকে বলছে, ভুল ও বিভ্রান্তিকর। বিসিবি আরও জানিয়েছে, পারিশ্রমিক বঞ্চিতের সংখ্যাটা খুব বড় নয়। বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে অংশগ্রহণ করা তিন ক্রিকেটার ও একজন কোচেরই শুধু পারিশ্রমিক বকেয়া রেখেছে নির্দিষ্ট একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। জানা গেছে, ২০১৮-১৯ বিপিএলে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরান, আফগানিন্তানের ক্রিকেটার গুলবাদিন নাইব, পাকিস্তানের সোহেল তানভীর ও ওয়াকার ইউনিসের পুরো অর্থ পরিশোধ করেনি সিলেট সিক্সার্স। ওই বছর কোচ হিসেবে কাজ করছিলেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ওয়াকার ইউনিস। এ অবস্থায় এই তিন ক্রিকেটার এবং কোচ- ফ্র্যাঞ্চাইজি ও বিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেও টাকা পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। অবশেষে মঙ্গলবার বিসিবি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। জানিয়েছে, ২০১৮ সালের বিপিএলে ১৭০ দেশি ও বিদেশি খেলোয়াড়, কোচ ও সাপোর্টিং স্টাফ কাজ করেছেন। সেখান থেকে বাকিরা পারিশ্রমিক পেলেও একটি নির্দিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজির চার ব্যক্তি পারিশ্রমিক পাননি। যেটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে করছে বিসিবি। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পারিশ্রমিক সংক্রান্ত এক ঝামেলার কথা উলেস্নখ করে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে জানায় বিসিবি, 'পারিশ্রমিক নিয়ে চারজনের সমস্যা হয়েছিল। ২০১৮ সালে বিপিএলের ৬ষ্ঠ আসরে একটি নির্দিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজির তিনজন বিদেশি খেলোয়াড় ও একজন কোচের পারিশ্রমিকের ব্যাপার অমীমাংসিত থাকে। যেখানে পুরো আসরে ১৭০ জন স্থানীয় ও বিদেশি খেলোয়াড়-স্টাফ যুক্ত সেদিক বিচারে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।' তবে এ ব্যাপারে দ্রম্নতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন বলেছেন, 'এটা অবশ্যই উদ্বেগের কারণ। আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি। বিসিবি বিপিএলের সঙ্গে জড়িত। আমরা খুব দ্রম্নত পারিশ্রমিক পরিশোধ করব এবং যে সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি পারিশ্রমিক বকেয়া রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।' এদিকে বিপিএলে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক সংক্রান্ত ঝামেলার ব্যাপারটি প্রকাশ্যে এলো আবারও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সংগঠন ফিকার জরিপে উঠে এসেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে সমস্যা হয়েছে ৬টি টুর্নামেন্টে। সেই তালিকায় আছে বিপিএল। ফিকার সবশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে খেলা এক-তৃতীয়াংশের বেশি ক্রিকেটারের পারিশ্রমিক পেতে দেরি হয় কিংবা একেবারেই পান না। যে ৬টি টুর্নামেন্টকে চিহ্নিত করেছে ফিকা, সেখানে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর একমাত্র প্রতিষ্ঠিত লিগ বিপিএল। ফিকার তৈরি করা পুরুষ ক্রিকেটারদের ২০২০ সালের গেস্নাবাল এমপস্নয়মেন্ট রিপোর্টে দেখা গেছে, ৩৪ শতাংশ ক্রিকেটার তাদের প্রাপ্য টাকা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিপিএলে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে একসময় ছিল অভিযোগের পাহাড়। তবে গত কয়েক বছরে সেটি নেই বলেই বারবার দাবি করেছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। এই সময়টায় ক্রিকেটারদের কাছ থেকে অভিযোগও তেমন শোনা যায়নি। এবার ফিকার জরিপের প্রেক্ষিতে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মলিস্নক বলেন, নিলামের বাইরে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে এই ঝামেলা হয়ে থাকতে পারে। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, 'নিলামে দল পাওয়া ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক পাওয়া নিয়ে সমস্যা হয় না। কারণ, এই বিষয়টি পুরোপুরি বোর্ড দেখে। আমরা তাদের পারিশ্রমিক সম্পূর্ণ মিটিয়ে দেই। যারা সরাসরি ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে চুক্তি করে, তাদের ক্ষেত্রে হতে পারে। সেক্ষেত্রেও যদি কেউ অভিযোগ করে আমরা সবকিছু দেখে সমস্যার সমাধান করি।'