সিলেট সিক্সার্সকে বিসিবির আইনি নোটিশ

তিন ক্রিকেটারের পাশাপাশি একজন কোচকে পারিশ্রমিক দেয়নি সিলেট সিক্সার্স। এ নিয়ে একাধিকবার মৌখিকভাবে জানানোর পরও বিপিএলে অংশ নেওয়া এই ফ্র্যাঞ্চাইজি পারিশ্রমিক পরিশোধ করেনি। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এবার দলটিকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন (ফিকা) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তিন ক্রিকেটারের পাশাপাশি একজন কোচকে পারিশ্রমিক দেয়নি সিলেট সিক্সার্স। এ নিয়ে একাধিকবার মৌখিকভাবে জানানোর পরও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) অংশ নেওয়া এই ফ্র্যাঞ্চাইজি পারিশ্রমিক পরিশোধ করেনি। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এবার দলটিকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ২০১৮-১৯ বিপিএলে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরান, আফগান ক্রিকেটার গুলবাদিন নাইব, পাকিস্তানের সোহেল তানভীর ও ওয়াকার ইউনিসের পুরো অর্থ পরিশোধ করেনি সিলেট সিক্সার্স। ওই বছর কোচ হিসেবে কাজ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ওয়াকার ইউনিস। আর এই অবস্থায় এ তিন ক্রিকেটার এবং কোচ- ফ্র্যাঞ্চাইজি ও বিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেও টাকা পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। সোমবার ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন (ফিকা) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে উলেস্নখ করেছে, ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে খেলা এক-তৃতীয়াংশের বেশি ক্রিকেটারের পারিশ্রমিক পেতে দেরি হয় কিংবা একেবারেই পান না। যে ৬টি টুর্নামেন্টকে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে রয়েছে বাংলাদেশের বিপিএলও। যদিও মঙ্গলবার বিসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে ২০১৮ বিপিএলে ১৭০ দেশি ও বিদেশি খেলোয়াড়, কোচ ও সাপোর্টিং স্টাফ কাজ করেছে। একটি নির্দিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজি মাত্র চারজনের পারিশ্রমিক বকেয়া রয়েছে। যেটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেছিল বিসিবি। এরপর বিসিবি বকেয়া পারিশ্রমিক আদায়ে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। মঙ্গলবারই সিলেট সিক্সার্সকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মলিস্নক। আইনি নোটিশ পাঠালেও তিনি জানিয়েছেন, ড্রাফটের বাইরের খেলোয়াড় হওয়ার কারণে বিসিবির অর্থ পরিশোধের কোনো সুযোগ নেই। এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব আরও বলেন, 'আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজিকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি, যত দ্রম্নত সম্ভব তাদের বকেয়া পারিশ্রমিক প্রদান করতে। আমাদের এখানে করার আছে সামান্যই। তাদের পারিশ্রমিক প্রদান করার সুযোগ আমাদের নেই। কারণ প্রত্যেককে ড্রাফটের বাইরে থেকে নেওয়া হয়েছে।' ফিকার প্রতিবেদন বিসিবির জন্য উদ্বেগের কারণ উলেস্নখ করে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের এই সদস্য সচিব আরও বলেছেন, 'এটি বিসিবির জন্য উদ্বেগের বিষয় এবং আমরা এটিকে গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছি। বিপিএল বিসিবির টুর্নামেন্ট। এখানে ভালো-মন্দ যে কোনো কিছুর সঙ্গে বিসিবি যুক্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা সামনে বিষয়গুলোকে আরও ভালোভাবে দেখভাল করব।' এদিকে বিপিএলে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক সংক্রান্ত ঝামেলার ব্যাপারটি প্রকাশ্যে এলো আবারও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সংগঠন ফিকার জরিপে উঠে এসেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে সমস্যা হয়েছে ৬টি টুর্নামেন্টে। সেই তালিকায় আছে বিপিএল। ফিকার সবশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে খেলা এক-তৃতীয়াংশের বেশি ক্রিকেটারের পারিশ্রমিক পেতে দেরি হয় কিংবা একেবারেই পান না। যে ৬টি টুর্নামেন্টকে চিহ্নিত করেছে ফিকা, সেখানে আইসিসি পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর একমাত্র প্রতিষ্ঠিত লিগ বিপিএল। ফিকার তৈরি করা পুরুষ ক্রিকেটারদের ২০২০ সালের গেস্নাবাল এমপস্নয়মেন্ট রিপোর্টে দেখা গেছে, ৩৪ শতাংশ ক্রিকেটার তাদের প্রাপ্য টাকা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিপিএলে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে একসময় ছিল অভিযোগের পাহাড়। তবে গত কয়েক বছরে সেটি নেই বলেই বারবার দাবি করেছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। এই সময়টায় ক্রিকেটারদের কাছ থেকে অভিযোগও তেমন শোনা যায়নি। ক্রিকেটারদের পাশ্রিমিকের ব্যাপারে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হতে আইসিসিকে তাগিদ দিয়েছে ফিকা। সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টম মোফাটের মতে, অভিভাবক সংস্থা হিসেবে আইসিসির দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে এটি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, 'পদ্ধতিগতভাবেই চুক্তিভঙ্গ এবং ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক না দেওয়ার মতো ব্যাপারগুলোতে জরুরিভিত্তিতে নজর দেওয়া উচিত। আইসিসির নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর মধ্যে যারা আছে, তাদের দেখভালের বাধ্যবাধকতা আইসিসির আছে এবং এ ব্যাপারটি নিয়ে কিছু একটা করার সময় হয়েছে।' ভারত ও পাকিস্তানসহ অনেক সদস্য দেশের পেস্নয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন নেই। এ কারণে ফিকা মনে করে, পারিশ্রমিক নিয়ে ঝামেলায় পড়া ক্রিকেটারদের প্রকৃত সংখ্যা জরিপে আসা সংখ্যার চেয়ে বেশি। প্রতিবেদনে তাই বলা হয়েছে, 'এটা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য আর এই সমস্যার পরিষ্কার সমাধান রয়েছে।' পারিশ্রমিক নিয়ে ভোগান্তির পরও অবশ্য জরিপে অংশ নেওয়া ২৭৭ ক্রিকেটারের ৫৩ শতাংশই বলেছেন, এই লিগগুলোতে ভালো প্রস্তাব পেলে তারা নিজ বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে ফ্রিল্যান্স ক্রিকেটার হয়ে যাওয়ার কথা ভাববেন।