অনুশীলনে জাহানারা-সালমারা

অনেক দিন পর বোলিং করলাম, মিরপুরে মাঠে হাঁটলাম। দীর্ঘদিন পর এমন অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। সবমিলিয়ে দারুণ লাগছে। ধন্যবাদ বিসিবিকে। প্রথমবারের মতো ছেলেদের মতো করে সুযোগ-সুবিধা আমরা পেয়েছি। আমাদেরকে বলতেও হয়নি। বিসিবি নিজ উদ্যোগেই আমাদের অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। -জাহানারা আলম

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ দেশের ক্রিকেট। আর তাই ছেলেদের মতো মেয়েরাও ছিলেন মাঠের বাইরে। তবে নিয়ম মেনে ছেলেদের একক অনুশীলনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এবার মেয়েরাও পেলেন সে সুযোগ। সোমবার থেকে কয়েকটি ভেনু্যতে শুরু হয়েছে টাইগ্রেসদের অনুশীলন। সোমবার থেকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামসহ বগুড়া ও খুলনায় একক অনুশীলন করেছেন ৯ নারী ক্রিকেটার। ছেলেদের সমান সুযোগ দেওয়া হচ্ছে মেয়েদেরও। মিরপুরে অনুশীলন করেন শামিমা সুলতানা, শারমিন সুপ্তা, জাহানারা আলম, নাহিদা আক্তার। আজ মঙ্গলবার অনুশীলনে নামবেন লতা মন্ডল। এছাড়া খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেন নারী ওয়ানডে ও টি২০ দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদ ও সালমা খাতুন। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ব্যক্তিগত অনুশীলন করেন খাদিজাতুল কুবরা ও শারমিন সুলতানা। এর আগে সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ায় মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। দীর্ঘ বিরতি শেষে ফেরার পর প্রথম দিনের অনুশীলনে হাতে ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল ইমরুল কায়েসের। রানিং করার সময় অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠার কথা বলেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন, শফিউল ইসলামরা। কম-বেশি প্রায় সব খেলোয়াড়ই অস্বস্তির কথা জানিয়েছিলেন। সেখানে প্রথম দিনে কোনো সমস্যাই হয়নি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা পেসার জাহানারা আলমের। লকডাউনের পর সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে প্রথমবারের মতো অনুশীলনে নামেন জাহানারা। প্রথমদিনে জিমের পাশাপাশি করেছেন বোলিংও। আর সেখানে সামান্য সমস্যা হয়নি বলেই জানান এ নারী ক্রিকেটার। অথচ পুরুষ ক্রিকেটারদের অসহায় অবস্থার কথা শুনে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন জাহানারা। কোনো সমস্যা না হওয়ায় তাই যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন তিনি। প্রথম দিনের অনুভূতির কথা জানিয়ে জাহানারা বলেন, 'শান্তি লাগছে। অনেক বেশি তৃপ্তি ফিল হচ্ছে। অনেকদিন পর বোলিং করতে পেরেছি। তবে আমার অনেক ভালো লাগছে কারণ পত্রিকায়-টিভিতে দেখেছি অনেকেই প্রথমদিনে খুবই অস্বস্তি অনুভব করেছে, বলগুলো ডাবল দেখেছে, মাথা ঘোরাচ্ছে এমনও শুনেছি। কিন্তু আমার তেমনটা মনে হয়নি। আমি ওদের অবস্থা দেখে ভয়ে ভাবছিলাম, ওদের এই অবস্থা হলে আমাদের মেয়েদের কি হবে!' লম্বা সময় পর মাঠে অনুশীলনের ধাক্কাটা অনেকে দ্বিতীয় দিনে বুঝতে পারেন। জাহানারাও মনে করছেন এমনটাই, 'আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি মাত্র এক সপ্তাহ বিশ্রাম নিয়ে অনুশীলনে ফিরেছি। শুধু প্রথমদিন অনুশীলন করার পর পিঠ, ঘাড় ও স্স্নোডার অনেক ব্যথা করে। বিশেষ করে পরদিন ঘুম থেকে ওঠার পর এই ব্যথা অনুভব হয়। আজকে বোলিং করেছি, কালকে সকালে হয়তো বুঝতে পারব, কতটা ব্যথা হচ্ছে।' প্রায় পাঁচ মাস বিরতিতে যে কারোরই সমস্যা হওয়ার কথা। সেখানে নিজের কোনো সমস্যা না হওয়ার কারণটাও ব্যাখ্যা করেছেন এ পেসার। শ্যামলি একাডেমিতে ক্যাচিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন প্রায় এক মাস। জাহানারার ভাষায়, 'আসলে আমার সমস্যা না হওয়ার পেছনে জুনের ১৫ তারিখ থেকে জুলাইয়ের ১৫ তারিখ পর্যন্ত এক মাসের কাজের ফল পেয়েছি। এই জন্যই ভালো লাগছে।' লম্বা সময় পর মিরপুরে ফিরে দারুণ উচ্ছ্বসিত জাহানারা, 'সবকিছু মিলিয়ে আমি অনেক ভালো অনুভব করেছি। অনেক দিন পর বোলিং করলাম, মিরপুরে মাঠে হাঁটলাম। দীর্ঘদিন পর এমন অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। সবমিলিয়ে দারুণ লাগছে। ধন্যবাদ বিসিবিকে। প্রথমবারের মতো ছেলেদের মতো করে সুযোগ-সুবিধা আমরা পেয়েছি। আমাদেরকে বলতেও হয়নি। বিসিবি নিজ উদ্যোগেই আমাদের অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।' ৩ থেকে ১৯ জুলাই শ্রীলংকায় হওয়ার কথা ছিল মেয়েদের বিশ্বকাপ বাছাই। সেটি স্থগিত হয়ে গেছে করোনাভাইরাসের কারণে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মেয়েদের ফেরার অপেক্ষা তাই দীর্ঘ হচ্ছে। অনুশীলনে ফেরা গেছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় এটিই এখন বড় সান্ত্বনা।