তাইজুলের নতুন অ্যাকশনে ভেট্টোরির ছায়া

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বোলিংয়ে রেকর্ড যে খুব আহামরি, তা নয়। টেস্ট পিছু উইকেট প্রায় ৪টি (২৯ টেস্টে ১১৪ উইকেট)। ৪ উইকেট পেয়েছেন ৫ বার। ৫ উইকেট শিকার করেছেন ৭ বার। আর ম্যাচে ১০ বা তার বেশি উইকেট পতন ঘটিয়েছেন মাত্র একবার। তারপরও সাকিবের পর তিনিই টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ও সফল বাঁহাতি স্পিনার। সাকিব না থাকলে তো তাইজুল ইসলামই বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের প্রধান অস্ত্র। লম্বা বিরতির পর যখন শুরু হলো ক্রিকেটারদের স্কিল ট্রেনিং, নেটে তাইজুল ইসলামকে দেখে চমকে গেলেন অনেকেই। অনেকটাই বদলে গেছে তার বোলিং অ্যাকশন! নতুন অ্যাকশনে দেখা গেল ডেনিয়েল ভেট্টোরির ছায়া। বিশেষ করে ডেলিভারি স্ট্রাইডে যেন হুবহু ভেট্টোরি! নতুন এই অ্যাকশনে এখন অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছেন বলে জানালেন তাইজুল। তাইজুলের নতুন অ্যাকশন দেখতেই শুধু ভেট্টোরির মতো নয়, নেপথ্য কারিগরও ভেট্টোরি। বাংলাদেশের স্পিন পরামর্শক এই কিউই গ্রেটের পরামর্শেই নিজেকে ভেঙে নতুনভাবে সাজানোর চেষ্টা করছেন তিনি। টেস্টে বাংলাদেশের দ্রম্নততম ১০০ উইকেট শিকারি তিনি, এই সংস্করণে দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশও। কিন্তু নিয়মিত নন অন্য দুই সংস্করণে। এবার অবশ্য অনেকটা চমক দিয়েই বিসিবি তাকে রেখেছে তিন সংস্করণের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনারের গায়ে শুধুই টেস্ট ক্রিকেটারের তকমা। লাল বলের পাশাপাশি সাদা বলেও সাফল্যের খোঁজে বোলিং অ্যাকশন বদলে ফেলেছেন তাই। সুফল পাচ্ছেন, জানালেন তাইজুল। ইতিপূর্বে গণমাধ্যমকে তাইজুল বলেছিলেন, সব সংস্করণে ভালো করার টনিক তিনি পেয়েছেন ভেট্টোরির কাছ থেকে। কিছু 'ফাইন টিউন' করার কথা বলেছিলেন তখন। তবে পরে দেখা গেল, স্রেফ টুকটাক কোনো বদল নয়, নিজের সহজাত অ্যাকশনই বদলে ফেলেছেন অনেকটা। এত বছর ধরে চালিয়ে আসা অ্যাকশন বদলে ফেলাটা সহজ নয় মোটেও। তবে মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলনের পর তাইজুল জানালেন, অনেক ঘাম ঝরিয়ে এখন তিনি নতুন অ্যাকশনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। মঙ্গলবার বিসিবির দেওয়া ভিডিও বার্তায় সেই বোলিং অ্যাকশন পাল্টে ফেলার গল্প শোনালেন তাইজুল ইসলাম, 'তিন চার মাস পর মাঠে ফিরে আসা কঠিন। তারপরও ক্রিকেট বোর্ড যে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, আমরা ২ মাসের মতো প্র্যাকটিস করলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি বোলিং নিয়ে কাজ করেছি। ভেট্টোরির সঙ্গে কথা বলেছি আমার বোলিং নিয়ে, মাঝখানে অ্যাকশন বদলেছি। অ্যাকশন নিয়ে কাজ করেছি। শরীরের সঙ্গে এখন অ্যাকশন মানিয়ে গেছে।' 'এখন টানা ২ ঘণ্টা বোলিং করতেও সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের ব্যক্তিগত অনুশীলন যখন ছিল, তখন যে সুবিধাটা হয়েছে, যার যার কাজগুলো নিজের মতো করে করতে পেরেছি। সপ্তাহ দুয়েক হলো ব্যাটম্যানদের বোলিং করছি নেটে। আত্মবিশ্বাস বাড়তে শুরু করেছে, আরও কিছুদিন গেলে আরও বাড়বে আশা করি।' অ্যাকশন, টেকনিকের মতো ব্যাপারগুলো অনেক সময়ই একটু ঝালাই করতে হয় ক্রিকেটারদের। টুকটাক ভেঙে গড়তে হয়। কিন্তু ২৮ বছর বয়সি একজন ক্রিকেটারের বোলিং অ্যাকশনে এত বড় বদলের ঘটনা বিরল। অনেকটা ঝুঁকিরও বটে। বিশেষ করে, টেস্টে তাইজুলের যেটা বড় শক্তি, লাইন-লেংথে টানা বল করে যাওয়া ও ফ্লাইটের বৈচিত্র্য, সেখানে আপস করার শঙ্কা থাকেই। তাইজুল অবশ্য সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন, বরং নিজেকে আরও ধারালো করে তুলছেন বলেই দাবি করলেন, 'আগের অ্যাকশনে একই জায়গায় টানা বল করার সুবিধা পেতাম। কিন্তু ওই অ্যাকশনে তিন সংস্করণে চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন ছিল, কারণ বৈচিত্র্যের মাত্রা কম ছিল। ভেট্টোরির সঙ্গে কথা বলার পর তিনি বলেছেন যে, এই অ্যাকশনে একইরকম বল করে হয়তো তিন ফরম্যাটে খেলতে পারব।' 'এজন্য বলের বাড়তি বাউন্সের দিক চিন্তা করে, ওভার স্পিনের কথা চিন্তা করে, বিভিন্ন বৈচিত্র্যের কথা চিন্তা করেই অ্যাকশন বদলে ফেলেছি। এর মধ্যে ফলও পাচ্ছি, বৈচিত্র্য পেতে সহায়তা করছে নতুন অ্যাকশন।' নেটে প্রতিদিনই এই অ্যাকশনে টানা বোলিং করে চলেছেন তাইজুল। অপেক্ষা এখন ম্যাচে করে দেখানোর। কিন্তু বাংলাদেশের শ্রীলংকা সফর দুলছে অনিশ্চয়তায়। এই বাঁহাতি স্পিনারের চাওয়া, অনিশ্চয়তা কেটে যাক, ক্রিকেটাররা ফিরুক চেনা জগতে। 'আমরা যারা ক্রিকেটার, বা যেকোনো খেলার খেলোয়াড়ই বলুন, এত লম্বা সময় খেলার বাইরে থাকা কঠিন। আমরা মাঠে থাকতেই পছন্দ করি। সামনে শ্রীলংকা সিরিজ হওয়াটা তাই খুবই জরুরি। তাহলে ক্রিকেটাররা সবাই মাঠে ফিরতে পারব। আগের অবস্থায় ফিরতে পারলে ভালো লাগবে।'