শ্রীলংকা সফর স্থগিত

ওরা (শ্রীলংকা) রোববারই জানিয়েছে আমাদের একটা শর্ত বাদে সবই তারা মেনে নিতে পারবে। তবে ওই একটা শর্তই মেইন। তা হলো ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন। তবে তা মেনে নেওয়া সম্ভব না। এটাও আমরা আজ (সোমবার) জানিয়ে দিয়েছি। অতএব সিরিজ খেলা সম্ভব না।

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হাসান পাপন
নানা জল্পনা কল্পনা শেষে বাংলাদেশের লংকা সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটল। অবশেষে এলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। স্থগিত হয়েছে বাংলাদেশের শ্রীলংকা সফর। আয়োজক দেশের কঠিন শর্ত মেনে দেশটিতে সফর করতে রাজি নয় বাংলাদেশ। কোয়ারেন্টিন শর্তাবলী নিয়ে বিসিবির আপত্তির পর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে রোববার নতুন গাইডলাইন পাঠায় আয়োজক দেশের বোর্ড। সেখানেও সফরকারি দলের খেলোয়াড়দের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শিথিল না করায় টাইগারদের লংকায় পাঠাচ্ছে না বিসিবি। সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে বিসিবিতে আসেন বোর্ড সভাপতি ও অন্য কর্মকর্তারা। সেখানেই এক অনির্ধারিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান বিসিবি সভাপতি। যেখানে বোর্ডের প্রায় সব পরিচালকই উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ-শ্রীলংকা টেস্ট সিরিজ পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠে না গড়ানোয় বর্তমানে ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোযোগ বিসিবির। ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্ট দিয়ে শিগগিরই দেশের ক্রিকেটারদের খেলায় ফেরানোর পরিকল্পনা করেছেন দেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের নীতিনির্ধারকরা। বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, সিরিজ স্থগিত হলেও চলবে জাতীয় দলের ক্যাম্প। প্রাথমিক দলের ২৭ ক্রিকেটার নিজেদের মধ্যে খেলবে কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ। জাতীয় দল, এইচপি ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে ক্যাম্পের পরপরই হবে একটি টি২০ টুর্নামেন্ট। শ্রীলংকা সফর নিয়ে বিসিবি সভাপতি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'ওরা (শ্রীলংকা) আমাদের রোববারই জানিয়েছে, আমাদের একটা শর্ত বাদে সবই তারা মেনে নিতে পারবে। তবে ওই একটা শর্তই মেইন। তা হলো ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন। তবে সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এটাও আমরা আজ জানিয়ে দিয়েছি।' পাপন আরও বলেন, 'আসলে এ বিষয়টি ওদের টাস্কফোর্সের ব্যাপার। সাধারণত কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন দুটি দুই জিনিস। কেউ করোনা পজিটিভ হলে আমরা বলি, পূর্ণ আইসোলেশনে থাকবে, ঘর থেকে বের হতে পারবে না। ওদের ১৪ দিন আইসোলেশন, যেটাকে ওরা কোয়ারেন্টিন বলছে। অন্যান্য জায়গার কোয়ারেন্টিন থেকে এটার অনেক পার্থক্য। ওদেরটা পুরোপুরি আইসোলেশন। ঘর থেকে বেরোনো সম্ভব নয়। শুধু যে তার ফিটনেসের সমস্যা হবে, তা কিন্তু নয়। সে মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই এভাবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজ খেলা সম্ভব নয়।' 'আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছি। ওদের কিছু করার থাকলে আগেই করত, অনেক সময় নিয়েছে এমনিতেই। আর কিছু হবে না। তাই সূচি রিসিডিউল করতে তাদের জানিয়ে দিয়েছি। পরিস্থিতি ঠিক হোক তখন সিরিজ নিয়ে ভাবা যাবে।' এর আগে শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ডের সিইও অ্যাশলে ডি সিলভা বলেছিলেন, 'কোভিড টাস্কফোর্স থেকে আমরা যে বার্তা পাব, সেটাই বিসিবিকে পাঠাব। বিসিবি যদি টাস্কফোর্সের স্বাস্থ্য-নির্দেশিকা মানতে প্রস্তুত না থাকে, তাহলে সিরিজটি আমাদের স্থগিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আগামী বছর বা পরের বছর এই সিরিজটি আয়োজনের চিন্তা করব।' এর আগে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন এবং ওই সময় অনুশীলনে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশকিছু শর্ত বেঁধে দেয় লংকান ক্রিকেট বোর্ড। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দাবি ছিল, কোয়ারেন্টিন সাত দিনে নামিয়ে আনা। একই সঙ্গে কোয়ারেন্টিন চলাকালীন সময় অনুশীলনের দাবি জানায় বিসিবি। তবে এর কোনো কিছুই মেনে নেয়নি দেশটির কোভিড টাস্কফোর্স। শ্রীলংকার কোয়ারেন্টিন ইসু্যতে দুই বোর্ডের আলোচনা হয়েছে লম্বা সময় ধরে। বাংলাদেশ এক সপ্তাহের বেশি কোয়ারেন্টিনে থাকতে চায়নি। আবার শ্রীলংকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী-১৪ দিনের কম কোয়ারেন্টিন সম্ভব নয়। এই ১৪ দিনে পুরোপুরি আবদ্ধ থাকতে হবে দলকে, করা যাবে না অনুশীলনও। অন্যান্য ক্রিকেটীয় সফরে কোয়ারেন্টিন চলাকালে অনুশীলনের সুবিধা পাচ্ছেন সফরকারি ক্রিকেটাররা। তবে বাংলাদেশ দলের ক্ষেত্রে এমন সুযোগ ছিল না। এখানেই অসন্তোষ ছিল বাংলাদেশের। করোনাভাইরাসের কারণে মার্চ থেকে বন্ধ মাঠের খেলা। দীর্ঘ করোনা বিরতি কাটিয়ে অক্টোবরে শ্রীলংকায় সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফেরার কথা ছিল বাংলাদেশের। মাঝে স্থগিত হয়েছে টাইগারদের বেশ কয়েকটি সিরিজ। তিনটি টেস্ট খেলার জন্য গত জুলাইয়ে শ্রীলংকা সফরে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ জাতীয় দলের। তবে সেই সময় মহামারি করোনার কারণে স্থবির ছিল গোটা বিশ্ব। শ্রীলংকা করোনা মোকাবিলায় অনেকটা সক্ষম হওয়ায় দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর নিমিত্তে বাংলাদেশকে ফের সফরের প্রস্তাব করে। সেই প্রস্তাবে প্রথমে রাজিও হয়েছিল বিসিবি। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ২৩ অক্টোবর থেকে স্বাগতিক শ্রীলংকা ও সফরকারি বাংলাদেশের মধ্যকার সিরিজ শুরুর কথা ছিল। তবে কোয়ারেন্টিনের কড়াকড়ি আর বাধ্যবাধকতার কারণে বাংলাদেশ দলের শ্রীলংকা সফর আরও এক দফা স্থগিতাদেশ পেল। ফলে সহসাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা হচ্ছে না মুমিনুল-মুশফিক-তামিমদের।