সাফের হতাশা ভুলে ঘুরে দঁাড়ানোর আশা

আশা করছিলাম সেমিফাইনাল খেলব। কিন্তু সৃষ্টিকতার্ সবকিছুর জন্যই ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা করে রেখেছেন। আমরা আরও কঠোর অনুশীলন করব এবং দুদার্ন্ত প্রত্যাবতর্ন করব Ñজামাল ভ‚ঁইয়া

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
নিজেদের আঙিনায় চলছে ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ’খ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, বাংলাদেশ সেখানে এখন কেবলই দশর্ক। আগের তিনটি আসরের মতো এবারও গ্রæপ পবর্ থেকে বিদায় নিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে এবারের বিদায়টা হৃদয় বিদারক, অতি-অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা। এভাবে বিদায়, মানতে কষ্ট হচ্ছে সবার। হতাশায় মুহ্যমান দেশের ফুটবল অঙ্গন। অন্তঃদহনে পুড়ছেন সোহেল-জামাল-তপুরা। ভীষণ হতাশ দলের কোচ জেমি ডে। তবে বরাবরের মতোই তিনি ইতিবাচক। বিদায় যাতনা দূরে সরিয়ে দলের উন্নতিই বড় করে দেখছেন তিনি। অধিনায়ক জামাল ভ‚ঁইয়া ব্যক্ত করেছেন ঘুরে দঁাড়ানোর প্রত্যয়। ভুটান আর পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দুই জয়। অনেক দিন বাদে দেশের ফুটবলে লেগেছিল সুবাতাস। প্রাণের খেলাটিকে নিয়ে নতুন আশায় বুক বেঁধেছিল সবাই। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি পরিপূণর্ হতে শুরু করেছিল। সবারই প্রত্যাশা ছিল ৯ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে আবার সাফের সেমিফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালের খুব কাছে পেঁৗছেও গিয়েছিল জেমি ডের শিষ্যরা। নেপালের বিপক্ষে ড্র করলেই চলত। সেই ম্যাচে উল্টো ২-০ গোলে হার। ঘরের মাঠে এখন দশর্ক বাংলাদেশ। প্রথমাধের্ গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলের অমাজর্নীয় ভুলটিই করল সবর্নাশ। সোহেল নিজেও সেই শোকে কাতর। অনুশোচনায় ভুগছেন। সারারাত ঘুমোতে পারেননি। অমন একটা ভুলের পর ঘুম আসার কথাও নয়। পুরো দায় কঁাধে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে। নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছেন না এই গোলরক্ষক। যদিও দলীয় কোচ জেমিকে পাশে পেয়েছেন। ম্যাচ পরবতীর্ সংবাদ সম্মেলনে তার পক্ষেই কথা বলেছেন কোচ। এরপরও সোহেলের অনুশোচনা, ‘কী করলাম আমি। আমি আমার দেশকে হারিয়ে দিলাম! মানুষ আমাকে ক্ষমা করতে পারবে কিনা জানি না। আমিই তো আমাকে ক্ষমা করতে পারব না।’ সোহেলের ভুলটাকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে সমথর্কদের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সবর্ত্র তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। এই সমালোচনাকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নিচ্ছেন সোহেল, ‘আমার মতো দোষী এখন বাংলাদেশে কেউ নেই। এত মানুষ মাঠে আশা নিয়ে এসেছিল, আমার একটা ভুলে সব শেষ হয়ে গেল। আমার কাছে এর চেয়ে কষ্টের কিছু নেই। অথচ মনের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস ছিল, জেদ ছিল দলকে চ্যাম্পিয়ন করব। দুই ম্যাচ জিতলাম। অথচ একটা ভুলেই শেষ করে দিলাম সব।’ ম্যাচের শেষ বঁাশি বাজার পর মাঠে বসে সোহেল কেঁদেছেন। রোববারও তার চোখে পানি। হতাশায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। দলীয় অধিনায়ক জামাল অবশ্য নিজেকে সামলে নিয়েছেন। নেপালের কাছে হারের পর যারপরনাই হতাশ ছিলেন তিনি। শেষ বঁাশি বাজার পর কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা ড্রেসিংরুমে চলে যান এই মিডফিল্ডার। ম্যাচ পরবতীর্ সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন, ছিলেন নিলির্প্ত। সাফ থেকে বাদ পড়ার যাতনায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরে নিজেকে সামলে নিয়েছেন, ততক্ষণে অবশ্য কেটে গেছে একটা রাত। রোববার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভক্ত-সমথর্কদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন জামাল। প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, কঠোর অনুশীলন করে পরবতীের্ত সাফল্য এনে দেবেন দেশকে। ফেসবুকে দেয়া পোস্টে জামাল লিখেছেন, ‘গতকালকের (শনিবার) পরাজয়ে আমরা সবাই অনেক বেশি হতাশ। আমরা সবাই আশা করছিলাম সেমিফাইনাল খেলব। কিন্তু সৃষ্টিকতার্ সবকিছুর জন্যই ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা করে রেখেছেন। আমরা আরও কঠোর অনুশীলন করব এবং দুদার্ন্ত প্রত্যাবতর্ন করব। আমাদের সব সময় সমথর্ন দিয়ে যাওয়া শুভাকাক্সক্ষীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। কষ্টটা ক্ষণস্থায়ী, গবর্টা চিরদিনের।’ ব্যথর্তার ক্ষণস্থায়ী কষ্ট ভুলে চিরন্তন সাফল্য চাইছেন জামাল। বলছেন ঘুরে দঁাড়ানোর কথা। উপলক্ষ্যটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। সামনেই ঘরের মাঠে আরও একটি আন্তজাির্তক ফুটবল টুনাের্মন্ট, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। সাফ থেকে বিদায়ের হতাশা ভুলে এখন ওই আসরের দিকেই নজর রাখছে জেমি ডের দল। আপাতত কয়েকদিনের বিশ্রাম পাচ্ছেন খেলোয়াড়রা। কয়েকদিন পর আবার শিষ্যদের নিয়ে অনুশীলনে নেমে পড়বেন কোচ জেমি ডে।