সুমন ঝড়ে কাপল নাজমুল একাদশ

দুইবার ব্যাট করতে নেমেও ব্যর্থ সৌম্য

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের ফাইনালেও রান উৎসবের দেখা মিলল না। বোলারদের সামনে অসহায় ব্যাটসম্যানরা। রোববার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তিন দলের টুর্নামেন্টের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো হয়নি নাজমুলের দলের। শুরুতেই উইকেট হারানোর পর রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন সৌম্য সরকার। পরে ব্যাট হাতে নামলেও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ তিনি। বিপর্যয় সামলে দলকে টেনে নিয়ে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৫ রানের ইনিংস খেলেন ইরফান শুক্কুর। সুমন খানের দুর্দান্ত বোলিংয়ের মুখে ১৭৩ রানে ইনিংস গুটিয়ে যায় শান্ত একাদশের। সুমন ৩৮ রানে ৫ উইকেট পেয়েছেন। দিনের শুরুতে টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন মাহমুদউলস্নাহ একাদশ। নাজমুল একাদশের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান। আগের ম্যাচগুলোর মতো এই ম্যাচের শুরুতেই উইকেট হারায় নাজমুলের দল। রুবেল হোসেনের করা প্রথম ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেন ডানহাতি ওপেনার সাইফ হাসান। ৫ বলে করেন ৪ রান। এরপর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে দেখেশুনে খেলছিলেন সৌম্য। কিন্তু হঠাৎ করেই তার চোখে সমস্যা দেখা দেয়। দ্বিতীয় ওভারের দুই বল খেলার পর চোখে পোকা ঢুকে যায় সৌম্যর। তখনই খেলা থামিয়ে চোখে পানি দেন সৌম্য। যে কারণে বেশ কিছু সময় বন্ধ থাকে খেলা। সৌম্য ভালো বোধ করলে পুনরায় শুরু হয় খেলা। এরপর মুখোমুখি প্রথম ও দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে দারুণ এক ফ্লিকে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মারেন সৌম্য। বল বাউন্ডারি পেরুনোর পর ব্যাটিং পার্টনার নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে হাত না মিলিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে যেতে থাকেন সৌম্য। পেছন থেকে আম্পায়াররা ডাক দিলে ইশারায় বুঝিয়ে দেন, চোখে পোকা আক্রমণের কারণে সমস্যা বেশি হচ্ছে, তাই তিনি রিটায়ার্ড হার্ট নিয়ে চলে যান সাজঘরে। তিন দলের ওয়ানডে টুর্নামেন্টে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি সৌম্য। ফাইনালের আগে ৪ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৪৫ রান। প্রথম ম্যাচের ২১ রান সর্বোচ্চ ইনিংস। ইনিংসের দশ বলের মধ্যে এক ওপেনার সাইফ হাসান আউট ও আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ায় বাধ্য হয়েই নামতে হয় মুশফিকুর রহিমকে। তবে এই ম্যাচে দলকে বড় ইনিংস উপহার দিতে পারেননি মিস্টার ডিপেন্ডেবল। টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মুশফিক এই ম্যার্চে‌ শুরুটা করেছিলেন দেখেশুনে। সুমন খানের এক ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে খোলস থেকে বের হওয়ার আভাস দিয়েছিলেন। মুশফিকুর রহিম ব্যাকফুট পাঞ্চ, কাভার ড্রাইভে দুই বাউন্ডারিতে থিতু হয়েছিলেন। পরে বলের মান দেখে খেলতে গিয়ে ছিলেন বাড়তি সতর্ক। কিন্তু সুমন খানের বলে রক্ষা হয়নি তার। প্রান্ত বদল করে আসা এই পেসারের ভেতরে ঢোকা বলে পরিষ্কার এলবিডবিস্নউ হয়ে ফেরা মুশফিক করেন ৩৫ বলে ১২ রান। মুশফিকের আউটের পর মাঠে ফেরেন সৌম্য। কিন্তু বদলাতে পারেননি টুর্নামেন্টের তার বেহাল দশা। সুমনের বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে ব্যক্তিগত ৫ রানে বিদায় নেন তিনি। খানিক পর তার আউটেরই রিপেস্ন দেখিয়েছেন আফিফ হোসেন। ২ বলেই কোনো রান না করে বিদায় নেন তিনি। ৪৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে শান্তর দল। অধিনায়ক শান্তর ঘাড়েই ছিল দলকে বাঁচানোর বড় ভার। ধীরলয়ে খেলে থিতুও হয়েছিলেন তিনি। তবে আমিনুল ইসলাম বিপস্নব এসে তৈরি করেন চাপ। আরেক প্রান্তে বল করা মেহেদী হাসান মিরাজকে মেরে সেই চাপ সরাতে চেয়েছিলেন তিনি। ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে এক চার মারার পরের বলে লঙঅনে তুলে দেন সহজ ক্যাচ। ৬৫ রানে নেই তখন উপরের ৫ ব্যাটসম্যান। এমন চাপের মাঝে আরও একবার সাতে নেমে নিজেকে প্রমাণ করেছেন ইরফান। পুরো টুর্নামেন্টেই দারুণ সফল এই ব্যাটসম্যান আগ্রাসী ব্যাট করে দলকে ফিরিয়ে আনেন খেলায়। এগিয়ে এসে সোজা লফটেড ড্রাইভে ছক্কায় শুরু করেছিলেন। পুল করেছেন দাপটে ভঙ্গিমায়, মাঝ ব্যাটে লাগিয়ে রান বের করেছেন নিয়মিত। ৪৫ বলেই ৫ চার ২ ছক্কায় তুলে নেন ফিফটি। ষষ্ঠ উইকেটে তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে যোগ করেন ৭০ রান। ৫২ বলে ২৫ করা হৃদয় মাহমুদউলস্নাহর বলে পুল করতে গিয়ে তুলে দেন ক্যাচ। শেষদিকে উইকেট পড়তে থাকায় এক প্রান্তে ধরে এগুতে থাকায় খুব বেশি আগ্রাসী হওয়ার সুযোগ ছিল না ইরফানের। ৪৭তম ওভারে রুবেলের বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরত যান তিনি। ৭৭ বলের ইনিংসে ৭৫ রান করতে ৮ চার আর ২ ছক্কা মেরেছেন ইরফান। তার আউটের পর ইনিংসও বেশি লম্বা হয়নি। তিন ওভার আগেই অলআউট হয়ে যায় শান্তরা। মাহমুদউলস্নাহ একাদশের পক্ষে সুমন একাই শিকার করেন ৫ উইকেট। এ ছাড়া রুবেল হোসেন দুটি এবং এবাদত হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ একটি করে উইকেট শিকার করেন।