স্ট্রাইকিং পজিশনে বিদেশি খেলানো ভালো হচ্ছে না - শেখ মোহাম্মদ আসলাম

বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাস লিখতে গেলে যে নামগুলো আসবে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন শেখ মোহাম্মদ আসলাম। আশির দশকে আসলাম ছিলেন ত্রাস সৃষ্টিকারী গোলদাতা। ভিক্টোরিয়া, বিজেএমসি, মোহামেডানের মতো দলে খেললেও ঢাকা আবাহনী দলে দীর্ঘ একযুগ ধরে খেলায় আবাহনীর আসলাম নামেই পরিচিত। প্রাণের সেই ক্লাবেই এখন কালেভাদ্রে তার পায়ের ধুলা পড়ে। কিন্তু কেন? ফুটবলার হওবার বাইরেও আসলামের আরেকটি গুণ আছে। সেটি হলো তিনি ভালো গান গাইতে পারেন। যা হয়তো অনেকেরই অজানা। এছাড়া দেশের ফুটবল প্রসঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দৈনিক যায়যায়দিনের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন এই সাবেক তারকা ফুটবলার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিবেদক মাহবুবুর রহমান

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শেখ মোহাম্মদ আসলাম
যায়যায়দিন: ফুটবলার হিসেবে এক নামে সবাই চেনে আপনাকে। কিন্তু আপনার একটা গুণ আছে যেটা হয়তো অনেকেই জানেন না। আপনি ভালো গান গাইতে পারেন। যায়যায়দিনের পাঠকদের যদি এ সম্পর্কে একটু বলতেন। আসলাম: খেলোয়াড় না হলে গায়কই হতাম। আমার বাবা খুলনা বেতারে নিয়মিত গান গাইতেন। আম্মা চাইতেন আমি গায়ক হই। স্কুল কলেজে গান গাইতাম। এখনো চর্চা করার চেষ্টা করি। আমার একটা এ্যালবাম বের হয়েছিল মা মারা যাবার পর। তার স্মৃতিতে 'মা তুমি চলে গেছো' নামে। যায়যায়দিন: আপনাদের সময়টাকে বলা হতো ফুটবলের স্বর্ণযুগ। সেই যুগ আর এই যুগের পার্থক্য কি দেখছেন? আসলাম: আমাদের সময়টাতে ফুটবলের যে ক্রেজ ছিল। এই প্রজন্ম হয়তো সেটা বিশ্বাস করে না। আমার মনে হয় আমরাই সেই আস্থার জায়গাটায় নাড়া দিতে পারিনি বাফুফের বর্তমান যে কমিটি তাদের কথা হলো ওই সময়কার ফুটবলটা কোনো ফুটবলই ছিল না। এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে আসলে খুব অপ্রস্তুত মনে করি। চিরন্তন সত্য একটা জিনিসকে কিভাবে এরা অবহেলিত করছে আমার বোধগম্য হয় না। যায়যায়দিন: ঢাকা লিগে ৫ বার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। কিন্তু এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা হয় বিদেশিরা। এর কারণটা কি বলে আপনি মনে করেন? আসলাম: বিদেশি বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলারও কিন্তু এসেছে বাংলাদেশে। তারা কিন্তু আলস্নাহর রহমতে এখনো আমাকে টপকাতে পারেনি। আমরা বাঙ্গালি ফুটবল খেলতে জানি। সেটা আমরা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছি। অবশ্যই আমাদের সময়টা সেরা সময় ছিল সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিদেশিরা টপ স্কোরার হচ্ছে এটা দুর্ভাগ্যজনক। তখন প্রায় ১২ কোটি মানুষ ছিল। তাদের একটা চাহিদা ছিল আসলাম যেন টপ স্কোরার হয়। তাদের সেই প্রেসারই আমাকে আসলাম বানিয়েছে। যার জন্য আমাকে দুই বেলা নয় তিন বেলাও অনুশীলন করতে হয়েছে। যায়যায়দিন: আপনার কি মনে হয় এখনকার ফুটবলারদের মধ্যে আপনাদের সেই জিনিসটার অভাব রয়েছে? আসলাম: অবশ্যই। কারণ সেই প্রতিযোগীতাটাতো কমে গেছে এখন। যেমন জামাল ভুইয়া এখন মাঝমাঠে খেলে। আমাদের সময় যদি হিসেব করি। খুরশিদ আলম বাবুল, আশীষ ভদ্র, বাবলু ভাই, রক্সি কাকে বাদ দিয়ে কাকে খেলাবেন সেটা নিয়েই একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত। আমাদের সাইড লাইনেও যে ফুটবলার ছিল এরা এশিয়ার মানসম্পন্ন খেলোয়াড় ছিল। এই জায়গাটাই বর্তমান সময় এবং আমাদের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। এই প্রতিযোগিতাটা যদি না আসে তাহলে আপনি আরেকটা আসলাম-সাব্বির-আশীষ পাবেন না। যায়যায়দিন: বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলার ঢাকায় আসছে। ঘানা জাতীয় দলের ফুটবলারকেও নিয়ে আসা হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগে খেলতে। এ ধরনের ফুটবলার বাংলাদেশে খেলছে। সেটা ফুটবলের জন্য কতটা কাজে লাগছে বলে আপনি মনে করেন? আসলাম: আমাদের সময়ে হলে এটা যুগোপুযোগী হতো। আমাদের স্ট্রাইকিং জোনে এমনিতেই এখন খরা যাচ্ছে। মধ্যমাঠে এবং স্ট্রাইকিং পজিশনে যদি আমাদের ফুটবলাররা খেলতে না পারে। বিদেশিরা খেলে। তাহলে কিন্তু কন্‌িফডেন্স লেভেলটা ওই পর্যায়ে যাবে না। সেই দিক বিচার বিশ্লেষণ করলে আমার মনে হয় এটা ভালো হচ্ছে না। যায়যায়দিন: আবাহনীতে দীর্ঘ ১২ বছর খেলেছেন। এখন ঐ ক্লাবে সেভাবে আপনাকে দেখা যায় না কেন। কোনো মান-অভিমান কি আছে? আসলাম: আবাহনী আমাদের সেভাবে কোনো জায়গায় রাখেনি। সমর্থকগোষ্ঠীরা মাঝে মধ্যে মনে করে। ক্লাবে যারা দায়িত্বে আছে তারা মনে করে না যে এদেরকে ডাকার প্রয়োজন আছে। সব কিছু মিলে মনে হয় সব পাট চুকিয়ে চলে এসেছি। সুন্দর যে একটা সম্পর্ক আছে তারা সেটা ভুলে গেছে।