বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
পাকিস্তানের রাজনীতি

ইমরান উৎখাতে একজোট বিরোধীরা

হ বিরোধীদের দাবি :তার সরকার সেনাবাহিনীর পুতুল
যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

পাকিস্তানের বিরোধীদলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জারি রেখে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখছে। তাদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় নির্বাচনে জালিয়াতি করে ক্ষমতায় এসেছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান আহমেদ খান নিয়াজি। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে জনসমাগম আয়োজনের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রোববার পেশোয়ারে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে।

ইমরান বলছেন, বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে চলা দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম বন্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে। রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী। ইমরানও তার জয়ে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ২০২৩ সালের আগে সাধারণ নির্বাচন হবে না বলেও জানিয়েছেন।

গত ১৬ অক্টোবর থেকে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) একের পর এক বিক্ষোভ আয়োজন করেছে। দক্ষিণপন্থী ধর্মীয় দল থেকে শুরু করে কিছুটা বামপন্থী চিন্তাধারার দল, এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্যরাও বিরোধীদের তৈরি এই জোটের সঙ্গে যুক্ত।

দেশটির চারটি রাজ্যের তিনটিতেই; পাঞ্জাব, সিন্ধু ও বেলুচিস্তানে বড় ধরনের বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাইবার পাখতুনখাওয়া রাজ্যে রোববারই প্রথমবারের মতো সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

বিরোধীদলগুলো বলছে, তারা 'জনগণের প্রতিনিধিত্ব না করা' এই সরকারকে ক্ষমতাচু্যত করতে চায়। সরকারের বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রভাব তৈরি করা এবং অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার অভিযোগও তুলেছে তারা।

কর্তৃপক্ষের পথরোধ করা এবং কিছু গ্রেপ্তারের মতো ঘটনা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত গুজরানওয়ালা, করাচি আর কোয়েটায় বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। গত ১৯ অক্টোবর সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী শহর করাচিতে র?্যালির পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের জামাতা সফদর আওয়ানকে তার হোটেল রুম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে সরকার এবং সেনাবাহিনী যথেষ্ট বিব্রত হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গ্রেপ্তারের সময় তিনি তার স্ত্রী মরিয়ম শরিফের সঙ্গে হোটেল কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন।

কিছুক্ষণ পর জানা যায়, হোটেলে অভিযান চালানোর আগে সিন্ধু প্রদেশের পুলিশপ্রধানকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে নিয়ে গিয়ে 'জোরপূর্বক' আওয়ানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। ওই ঘটনার ধারাবাহিকতায় সিন্ধু প্রদেশের সব শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা 'বিক্ষোভ চলাকালীন ছুটির' জন্য দরখাস্ত করেন। তবে পরে দেশটির সেনাপ্রধান সিন্ধু প্রদেশের পুলিশপ্রধানকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলে পুলিশ কর্মকর্তারা ছুটির দরখাস্ত প্রত্যাহার করে নেন।

ওই ঘটনার পর সেনাপ্রধান গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন সেনা এবং আইএসআই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিলেও তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এখনো।

বিক্ষোভের কিছু বক্তব্য সেন্সর করার জন্য মিডিয়ার ওপরও চাপ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভ চলাকালীন জাতীয়তাবাদী নেতা মহসিন দাওয়ার বা রাজনীতিতে ফিরে আসা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ লন্ডন থেকে ভিডিওতে বক্তব্য দেয়া শুরু করলেই টিভি চ্যানেলগুলো লাইভ কাভারেজ বন্ধ করে দিতো। এই নেতারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং পর্দার আড়াল থেকে ইমরান খানের পিটিআই সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ তুলে আসছেন।

ইমরান খান দাবি করেছিলেন, নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন পার্টি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ জারদারির দলের (পিপিপি) ব্যাপক দুর্নীতিতে বিরক্ত হয়ে সাধারণ মানুষ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। কিন্তু স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০১৮ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় নির্বাচন ছিল।

নির্বাচন পূর্ববর্তী জরিপে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন এর পরিষ্কার জনপ্রিয়তা থাকলেও ইমরান খানের পিটিআই সামান্য ব্যবধানে জয় পায়। ভোটের দিন, জাতীয় নির্বাচনের ফলের সেবা সন্দেহজনকভাবে নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে সব আসন থেকে অনলাইনে ভোট গণনা এবং পাঠানোর সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ, ইমরান খানের সরকারের শুরুটাই হয়েছিল অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে।

সম্প্রতি চলমান বিক্ষোভের কী পরিণতি হবে, তা কেউই ধারণা করতে পারছে না। কিন্তু এটা অন্তত সবাই জানে, দ্বন্দ্ব রাজনীতিবিদ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তার বিরোধীরা খুবই কম প্রভাবশালী হিসেবে মনে করেন।

বিরোধীদের বিক্ষোভগুলো শুধু ইমরান খানের বৈধতারই প্রশ্ন তোলেননি, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক পুরনো। শেষবার ২০০৮ সালে জনরোষের মুখে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতাচু্যত হন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে