বিশ্বকাপে ভয়ডরহীন নারী ক্রিকেট দল

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আমিনুল ইসলাম লিটন
একের পর এক সাফল্যের বীজ বুনে চলছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। ইতিহাস গড়ে এশিয়া কাপ জয়ের পর টি২০ বাছাইপবের্ হয়েছে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। তাই নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে হতে যাওয়া বিশ্বকাপ টি২০তে খেলার সুযোগ মিলেছে সালমা-রুমানাদের। সেখানে সব পরাশক্তি দলগুলোর বিপক্ষে লড়তে হবে তাদের। তবে কোনো দলকে ভয় নয়, বরং বড় দলগুলোর বিপক্ষেও জয় পাওয়ার আশা রাখে টাইগ্রেসরা। দলীয় অধিনায়ক সালমা খাতুন বলে দিলেন, ‘বিশ্বকাপে আমাদের ভয়ের কিছু নেই। কারণ সবের্শষ সিরিজ বা আসরগুলোতে আমরা শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জিতেছি। আমরা সব প্রতিপক্ষকেই ভয়ডরহীনভাবে মোকাবিলা করতে চাই।’ বিশ্বকাপের জন্য আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করতে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন টাইগ্রেস অধিনায়ক সালমা খাতুন। দলের পরামশর্ক নাজমুল আবেদীন ফাহিম জানালেন, কঠিন কন্ডিশনে কিভাবে জয় নিয়ে ফিরতে হয় সেই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে সালমাদের। বাংলাদেশের মেয়েরা এখন অনুশীলন ক্যাম্প করছে রাজশাহীতে। এরপর খুলনায়ও ক্যাম্প করার কথা রয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে আগামী ৯ নভেম্বর শুরু হবে মেয়েদের টি২০ বিশ্বকাপ। ‘এ’ গ্রæপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একটা শিরোপা পাল্টে দিয়েছে দেশের নারী ক্রিকেটের চিত্র। মেয়েদের এশিয়া কাপ জয়ের পর এখন বাড়তি কদর রুমানা, সালমাদের। টাইগ্রেসদের আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে চলছে একের পর এক অনুশীলন ক্যাম্প। সামনে পাকিস্তানের বিপক্ষে নারীদের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য একটি সিরিজ আয়োজনের চেষ্টা বেশ কিছুদিন ধরেই করছিল বিসিবি। চ‚ড়ান্ত হয়েছে সেই সিরিজ। ৪টি টি২০ আর একটি ওয়ানডে খেলতে এই মাসের শেষে বাংলাদেশ সফরে আসছে পাকিস্তানের মেয়েরা। এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল পাকিস্তানের মেয়েরা। সেবার ছিল দুটি ওয়ানডে ও দুটি টি২০। ওয়ানডে সিরিজের দুটি ম্যাচই জিতেছিল বাংলাদেশ, হেরেছিল দুটি টি২০। সবের্শষ গত জুনে মেয়েদের এশিয়া কাপ টি২০তে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। দুই দলের ৯টি টি২০তে বাংলাদেশের একমাত্র জয় সেটিই। এবার জয়ের পাল্লা ভারী করতে চায় টাইগ্রেসরা। সেই লক্ষ্যে পুরোদমে চলছে জাহানারা-পান্নাদের অনুশীলন। ঈদের আগে ঢাকায় ফিটনেস ক্যাম্পের পর এখন রাজশাহীতে চলছে স্কিল ট্রেনিং। শুধু স্কিল ক্যাম্পই নয়, রাজশাহীতে স্থানীয় ছেলেদের সঙ্গে ম্যাচও খেলছে নারী ক্রিকেটাররা। পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেই এরপর নারী বিশ্বকাপে খেলতে যাবে সালমারা। বিষয়গুলো বিবেচনায় চলছে ক্রিকেটারদের কঠোর অনুশীলন। অধিনায়ক সালমার প্রত্যাশা অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নারীরা আরও মেলে ধরতে পারবেন নিজেদের, ‘আমরা চেষ্টা করছি শতভাগ ফিট হওয়ার। আমাদের সামথর্্য আছে। যেহেতু আমাদের গ্রæপে ভালো ভালো টিম আছে, তারাও কিন্তু চিন্তা করছে যে, বাংলাদেশ এখন ভালো খেলছে। আশা করি, বিশ্বকাপে আমরা ভালো কিছু শিখব। কারণ অনেক বড় বড় টিম আছে। তবে সবকিছু মিলিয়ে আমি মনে করি, বিশ্বকাপে আমরা ভালো কিছু করব।’ নারীদের উন্নতিটা লক্ষণীয়। কিছু ঘাটতি রয়েছে যা নিয়ে কাজ চলছে দীঘির্দন থেকে। চাপের মুহূতের্ ইতিবাচক ক্রিকেট খেলার দীক্ষাই দেয়া হচ্ছে এখন ক্যাম্পে। আর সালমা-রুমানাদের উপর প্রত্যাশার কথা বিবেচনায় রেখে জয়ের মানসিকতা তৈরি করা হচ্ছে ক্রিকেটারদের। বিসিবির ওমেন্স উইংয়ের ইনচাজর্ হয়ে চলতি বছর থেকে নাজমুল আবেদিন কাজ করছেন সালমা-রুমানা-জাহানারাদের নিয়ে। তার প্রেসক্রিপশনেই বাংলাদেশ দলে যোগ হয়েছে ভারতীয় নারী কোচিংস্টাফ। তাতে নারী ক্রিকেটে ঘটেছে নব জাগরণও। অল্প সময়ের মধ্যেই এসেছে একের পর এক জয়। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পরীক্ষায় আগামী মাসে নতুন চ্যালেঞ্জে অবতীণর্ হতে যাচ্ছে সালমা খাতুনের দল। চলছে তারই প্রস্তুতি, তবে এশিয়ার সেরাদের মানসপটে বড় একটি জায়গাজুড়ে বিশ্বকাপ স্বপ্ন। প্রস্তুতি, আসন্ন সিরিজ, বিশ্বকাপ, উন্নতির জায়গাগুলো নিয়ে নারী ক্রিকেটের দেখভালের দায়িত্বে থাকা নাজমুল আবেদিন বলেছেন, ‘আমরা যত ম্যাচ খেলব, তত ম্যাচ জিতে যাব; বিষয়টা তা না। এমন ভাবা ঠিক না। কেননা পাকিস্তান কতটা শক্তিশালী দল সেটা ওদের ফলাফলই প্রমাণ করে। তবে সা¤প্রতিক সময়ে আমরা ভালো খেলছি।’ নাজমুল আবেদীন ফাহিম আরও বলেছেন, ‘নিয়মিতই ভালো খেলছি, তাই আমরা আমাদের সমান সমান পযাের্য় রাখছি। সা¤প্রতিক পারফরম্যান্সে আমরা খুশি। আপাতত আমরা প্রতিটি ম্যাচই জেতার জন্য নামব। যদি ভালো খেলি তাহলে আমাদের জেতারই কথা।’ দলের শক্তির দিকগুলো সামনে টেনে বললেন, ‘আমাদের দলের ভালো দিকটা হচ্ছে বোলিং। বিশেষ করে স্পিনারদের কম্বিনেশন। আমাদের দলে লেগস্পিনার আছে, রাইটআমর্ অফস্পিনার আছে। গত তিন মাসে এরা যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অজর্ন করেছে। সব মিলিয়ে বলব বোলিংটা আমাদের বড় শক্তি। এছাড়া ব্যাটসম্যানরা কাজ করেছে ব্যাটিং নিয়ে। ফিল্ডিং ও ফিটনেসেও উন্নতি হয়েছে।’