অবাক ক্রিকেটবিশ্ব

এক হাতে ব্যাট করতে নামার চরম দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়ে গড়েছেন তাবৎ দুনিয়ার ক্রিকেটারদের জন্য অনুকরণীয়, অনুসরণীয় এক দৃষ্টান্ত। অবিশ্বাস্য এই কমের্র জন্য পুরো ক্রিকেটবিশ্বই টাইগার ওপেনারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। একই সঙ্গে তারা স্তম্ভিত, বিস্মিতও। সবারই এক কথাÑ এও কি সম্ভব!

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
শনিবার এশিয়া কাপের ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে এক হাতে ব্যাট করে জাতীয় বীরে পরিণত হয়েছেন তামিম ইকবাল Ñসৌজন্য
মাত্র ২ রান করেও নায়ক হওয়া যায়! এশিয়া কাপে শনিবার সংযুক্ত আরব-আমিরাতে সেটাই প্রমাণ করলেন তামিম ইকবাল। নায়ক বলছেন কী, তামিম আসলে বনে গেছেন মহানায়ক! এক হাতে ব্যাট করতে নামার চরম দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়ে গড়েছেন তাবৎ দুনিয়ার ক্রিকেটারদের জন্য অনুকরণীয়, অনুসরণীয় এক দৃষ্টান্ত। অবিশ্বাস্য এই কমের্র জন্য পুরো ক্রিকেটবিশ্বই টাইগার ওপেনারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। একই সঙ্গে তারা স্তম্ভিত, বিস্মিতও। সবারই এক কথাÑ এও কি সম্ভব! আঙুলে আগের চোট ছিল। ঝঁুকি আছে জেনেও তিনি এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামতে দ্বিধা করেননি। কিন্তু তার বিধিলিপিতে শনিবার অন্য চিত্রনাট্য লেখা ছিল। তাইতো সুরাঙ্গা লাকমলের করা বলে দ্বিতীয় ওভারেই চোট পেলেন কব্জিতে। ফিরে যেতে হয় ড্রেসিংরুমে। সেখান থেকে হাসপাতালে। তার কব্জিতে চিড় ধরা পড়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রায় ছয় সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে। অথার্ৎ, তামিমের এশিয়া কাপ শেষ। কিন্তু কে জানত, তামিমের এশিয়া কাপ তখনো শেষ হয়নি। কে জানত, চিকিৎসক তাকে মাঠের বাইরে থাকার রায় দেয়ার মাত্র দুই ঘণ্টা পরই সেই তামিমকে আবারও মাঠে দেখা যাবে? বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য সে এক ব্যাখ্যাতীত সুখানুভূতির দৃশ্য। পানি টলমল ঝাপসা চোখে তা দেখেছেন অনেকেই। ৪৭ ওভারের পঞ্চম বলে মুস্তুাফিজ আউট হওয়ার পর ড্রেসিংরুম থেকে ব্যাট করতে বেরোচ্ছেন তামিম! বঁা হাতের দুই আঙুলে ব্যান্ডেজ থাকায় গøাভসটা বিশেষভাবে কেটে পরেছিলেন। এরপর এক হাতেই ব্যাট ধরে লাকমলের সেই ওভারের শেষ বলটা যখন ঠেকালেন, নৈতিক জয় তো তখনই নিশ্চিত! আর তাই তামিমের এই সাহস, দেশের জন্য নিজেকে নিংড়ে দেয়ার মানসিকতা এখন ক্রিকেট ইতিহাসের রূপকথাগুলোরই অংশ। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। এমন দৃশ্য চমের্চাক্ষে দেখার পরও যেন ৩৩ বছর বয়সী সালমান বাট বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, সত্যিই দলের প্রয়োজনে এক হাতে ব্যাট করতে নেমেছেন তামিম! খেলা শেষ হওয়ার পরপরই তাই পাকিস্তানি ক্রিকেটার তামিমকে ভাসিয়েছেন প্রশংসার জোয়ারে। বাংলাদেশি ওপেনারের গায়ে পরিয়ে দিয়েছেন ‘চ্যাম্পিয়ন’ খেতাব। শুধু সালমান বাট নন, অবিশ্বাসী এই সাহকিতার জন্য পুরো ক্রিকেট বিশ্বই তামিম বন্ধনায় মত্ত। তবে সালমান বাটের প্রশংসাটা নিশ্চিতভাবেই তামিমকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করবে, ‘চলার পথটা কঠিন হলেও চ্যাম্পিয়নরা এভাবেই এগিয়ে যায়। দলকে এভাবেই সাহায্য করে।’ ২২৯ রানের মাথায় নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন মুস্তাফিজ। তামিম ইনজুরিতে থাকায় সকলেই ধরে নিয়েছিল শেষ বাংলাদেশের ইনিংস। খোদ মুশফিকও হঁাটা শুরু করেছিলেন প্যাভিলিয়নের পথে। তখনই ক্রিকেট বিশ্ব দেখল অবাক দৃশ্য। ভাঙা কব্জি নিয়েই এক হাতে ব্যাট নিয়ে নেমে পড়েছেন তামিম। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। হাসপাতাল ঘুরে আবার মাঠেও ফিরে গড়েছেন সাহসিকতার অনন্য নজির। আর মুশফিক? ১৪৪ রান করে বাংলাদেশের ইনিংসটা বলতে গেলে তিনি একাই টেনেছেন। চোটগ্রস্ত (এক হাতে ব্যাট করা) তামিমকে সঙ্গে নিয়ে ১০ম উইকেটে তুলেছেন ৩২ রান। এই জুটিকে প্রাপ্য কৃতিত্বটুকু বুঝিয়ে দিলেন লংকান দলপতি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, ‘সে (তামিম) অনেক সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। মুশিও খুবই ভালো ব্যাট করেছে, আমার তো মনে হয় সে দারুণ খেলেছে। তামিম অনেক সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে এক হাতে ব্যাট করতে নেমে। এভাবে ব্যাট করা কখনই সহজ নয়।’ ‘একটি ডট বল খেলেই ইতিহাস গড়া কিংবদন্তিদের কাতারে জায়গা করে নিয়েছেন তামিম ইকবাল। এরপর সে আর কী কী করবে, সেগুলো কোনো ব্যাপার না। ফিরে এসে তামিম এক হাতে যে বলটা খেলল, সেটিই তার পরিচয়’Ñ টুইটারে এ উপলব্ধিটা এক ক্রিকেটপ্রেমীর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শনিবার থেকেই এমন আবেগের ফোয়ারা ছুটছে। সেটি একটি ‘ডট’ বল ঘিরে। শনিবার দুবাইয়ে একটি ‘ডট’ বলের মাঝেই সমথর্করা খুঁজে পেয়েছেন তামিমের আসল পরিচয়- দেশপ্রেমিক, দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। তামিমের মুগ্ধ কেবল সমথর্করাই নয়। এই দলে রয়েছেন ক্রিকেটাররাও। পাকিস্তানের নারী ক্রিকেট দলের সদস্য সাদিয়া নাইন আবিদি লিখেছেন, ‘ভাঙা কব্জি নিয়ে ব্যাট করা! অবিশ্বাস্য সাহস দেখিয়েছেন তামিম ইকবাল! সাহস ও ত্যাগের সত্যিকার প্রদশর্নী।’