তামিম বন্দনায় মুশফিক-মাশরাফি

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বাংলাদেশের জয়, মুশফিকের অতিমানবীয় ব্যাটিং কিংবা মাশরাফি-মুস্তাফিজের দুদার্ন্ত বোলিংÑ এশিয়া কাপে শুরুটা স্বপ্নের মতো হওয়ার পরও আলোচনায় নেই বিষয়গুলো। সবকিছু ছাপিয়ে দেশপ্রেমের নিদশর্ন সৃষ্টি করে স্পটলাইটে তামিম ইকবাল। শুরু হতে না হতেই কব্জির চোট এশিয়া কাপ শেষ করে দিয়েছে তার। চোট যথেষ্টই গুরুতর, একটু এদিক-সেদিক হলেই তার ক্যারিয়ার পড়ে যেত হুমকির মুখে। দুঃসাহসী তামিম সেই হুমকি উপেক্ষা করেই দলের প্রয়োজনে নেমে গেলেন ব্যাট হাতে। মাঠে নেমে কোনো হাতি-ঘোড়া মেরে দেননি, খেলেছেন একটা মাত্র বল। তবে দেশপ্রেম আর সাহসিকতার যে নিদশর্ন তিনি দেখিয়েছেন, সেটা তাকে ভাসিয়ে দিচ্ছে প্রশংসার বানে। সুরাঙ্গা লাকমলের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে তামিম যখন হাতের কব্জিতে আঘাত পান, তখন অন্য প্রান্ত থেকে সেটা দেখেছিলেন মুশফিকুর রহিম। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন, সতীথের্র আর ব্যাট করা হবে না। কিন্তু মুশফিককে ভুল প্রমাণ করে মাঠে নেমে গেলেন তামিম। বিষয়টা নাকি বিশ্বাসই হচ্ছিল না মুশফিকের। সতীথের্র অবিশ্বাস্য এই কাÐ দেখে দেশের জন্য আরও ভালো কিছু করতে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি নিজেই জানিয়েছেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। শনিবার এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইনিংসের ৪৭তম ওভারে যখন মুস্তাফিজ আউট হলেন, তখন বাংলাদেশের নেই ৯ উইকেট। তামিম আগে চোটে পড়ায় সবাই ধরেই নিয়েছিল টাইগারদের ইনিংস শেষ, কিন্তু না। দলের প্রয়োজনে আবারও নেমে পড়েন তামিম। ঠিক সে সময় মুশফিক সিদ্ধান্ত নেন, এবার কিছু একটা করতে হবে। শেষ পযর্ন্ত এ ডানহাতি শেষ দিকে ঝড় তুলে দলের রানকে পৌঁছে দেন ২৬১ রানে। যা শ্রীলংকার জন্য হয়ে দঁাড়ায় মাথার বোঝা। তামিমকে ফিরে পেয়ে মুশফিক দলের সংগ্রহ বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ পান। তামিমকে ব্যাটিংয়ে আসতে দেখে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন তিনি। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘তামিমকে ব্যাটিংয়ে আসতে দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। ওকে যখন ক্রিজে আসতে দেখলাম সেটা আমাকে তার জন্য, দেশের জন্য কিছু করার জন্য অনেক উজ্জীবিত করেছিল। আমি আমার সেরা চেষ্টা করেছিলাম, সেটা কাজে লেগেছে। এটা ওর দৃঢ়তা, দলের প্রতি, খেলার প্রতি ও আন্তরিকতা দেখিয়েছে। ও যেভাবে এগিয়ে এসেছে তার জন্য আমি খুশি। এটা দারুণ একটি ব্যাপার।’ তামিমের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের ওই সময়টুকুই মুশফিকের কাছে সেরা মুহূতর্, ‘সম্ভবত আমার ব্যাটিংয়ের সেরা মুহূতর্। কারণ গরমের কারণে তখন রান নেয়াও ভীষণ কঠিন ছিল।’ তামিম নামবেন কী নামবেন না, শেষদিকে এই দোটানায় ছিল টাইগারদের ড্রেসিংরুম। তখন এগিয়ে আসেন কাপ্তান মাশরাফি। বারবার কথা বলতে থাকেন তামিমের সঙ্গে। সেই কথায় সাহস বেড়ে যায় আহত ওপেনারের। মুশফিক স্ট্রাইকে না থাকলেও একসময় নেমে পড়েন মাঠে। ম্যাচ শেষে তামিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাশরাফি ভাই আত্মবিশ্বাস দিয়েছিলেন। বারবার আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন। গøাভস কেটে তিনিই প্লাস্টার করা হাতে ঢোকানোর ব্যবস্থা করেন।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘মুস্তাফিজ আউট হওয়ার পর দেখি মুশফিক ননস্ট্রাইকে। তখন সিদ্ধান্তটা আমার উপরে চলে আসে। আমি এক বল খেলতে চলে যাই।’ এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে যে বীরোচিত কীতির্ রচনা করেছেন তামিম, সেটিকে মাশরাফির কাছে মনে হচ্ছে স্মরণীয় কিছু, যা সবার মনে রাখা উচিত বলে মনে করছেন তিনি। মাশরাফি গবর্ করে বলেছেন, ‘আমি শুধু ওকে নিয়ে একটা কথাই বলতে পারি, লোকের উচিত ওকে মনে রাখা। এখানে যেকোনো কিছু ঘটতে পারত। যা ওর ক্যারিয়ারের প্রভাব ফেলতে পারত।’ দুগির্ত আর না বাড়লেও এশিয়া কাপ শেষ হয়ে গেছে তামিমের। বঁা হাতের কব্জিতে চিড় ধরায় অন্তত ৬ সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে এই ওপেনারের। পরের ম্যাচগুলোতে তামিমকে না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু অধিনায়ক তো আর হতাশ হতে পারেন না। মাশরাফি তাই ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছেন। এই সুযোগ কাজে লাগাতে বলছেন তরুণদের। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে জয় পেলেও টাইগারদের দুশ্চিন্তা ক্রিকেটারদের ইনজুরি। শতভাগ ফিট নন সাকিব, মুশফিক, চোটাক্রান্ত শান্তও। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর আফগানদের বিপক্ষে একাদশ সাজাতে তাই একটু বাড়তি হোমওয়াকর্ করতেই হবে মাশরাফি-রোডসকে।