নারী ফুটবলের বিপস্নব ছড়িয়েছে দেশব্যাপী

প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০২১, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
একটা সময় নারী জাতীয় ফুটবল দলে ছিল ময়মনসিংহের মেয়েদের প্রাধান্য। এখনো জাতীয় দলে ময়মনসিংহের মেয়েই বেশি। কিন্তু সংখ্যাটা ক্রমেই কমে আসছে। এখন অন্যান্য জেলা থেকেও নারী ফুটবলাররা নিজেদের প্রতিভা দেখিয়ে জায়গা করে নিচ্ছেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। কয়েক বছর ধরে নারী ফুটবলের বিপস্নব ছড়িয়ে পড়ছে পুরো দেশে। বিষয়টাকে সাফল্য হিসেবে দেখছেন মেয়েদের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। \হ৮-৯ বছর আগে জাতীয় বা বয়সভিত্তিক জাতীয় দল মানেই ছিল ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের মেয়েরা। মারিয়া মান্ডা, মারজিয়া, শামসুন্নাহার, সাজেদা, সানজিদা, তহুরাদের জেলার মেয়েদের দিয়েই তৈরি হতো জাতীয় ও বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দল। সেই অবস্থা বদলে গেছে। সংখ্যাটা এখনো বেশি না হলেও দিন দিন অন্য জেলার মেয়েরা জায়গা করে নিচ্ছে ক্যাম্পে, প্রাধান্য কমছে ময়মনসিংহের মেয়েদের। বর্তমান বাফুফে ভবনের ক্যাম্পে যে ৫১ জন আছেন, তার মধ্যে সর্বাধিক ১২ জন ময়মনসিংহের। এক যুগ ধরে জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দল নিয়ে কাজ করছেন গোলাম রাব্বানী ছোটন। দেশের নারী ফুটবলের নাড়ি-নক্ষত্র তার জানা। ময়মনসিংহ থেকে এখন পুরো দেশে নারী ফুটবলের বিপস্নব ছড়িয়ে পড়াটাকে বিশাল অর্জন মনে করেন তিনি। ছোটন বলেন, 'এখন ক্যাম্পে ১৯ জেলার ফুটবলার আছে। আগে তিন থেকে চারটি জেলার ফুটবলারদের নিয়েই তৈরি হতো দল। এখন দিনদিন জেলার সংখ্যা বাড়ছে।' স্মৃতি হাতড়িয়ে গোলাম রাব্বানী ছোটন বললেন, '২০০৯ সালে আমি যখন নারী ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন দেখেছি নারায়ণগঞ্জ, যশোর, সাতক্ষীরা, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির মেয়েরাই ক্যাম্পে। ২০১২ সাল থেকেই বিপস্নব শুরু হয় মেয়েদের ফুটবলে।' বাফুফের নারী ক্যাম্পে ময়মনসিংহের যে ১২ ফুটবলার আছেন তাদের মধ্যে মারিয়া মান্ডা, মারজিয়া, শামসুন্নাহার, শামসুন্নাহার (জুনিয়র), সাজেদা আক্তার, তহুরা খাতুন, রোজিনা আক্তার, শিউলি আজিম, সানজিদা আক্তার জেলার কলসিন্দুরের। নান্দাইলের আছেন-হালিমা আক্তার, মিলি আক্তার ও নাজমা। মেয়েদের ক্যাম্পে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ জন করে ফুটবলার আছেন টাঙ্গাইল ও রংপুরের। টাঙ্গাইলের কৃষ্ণা রানী সরকার নারী ফুটবলের উজ্জ্বল মুখ। আছেন মাহফুজা, ইতি খাতুন, মিম আক্তার ও নওশিন জাহান। রংপুরের আছেন মিশরাত জাহান মৌসুমী, সিরাত জাহান স্বপ্না, সুলতানা, বৃষ্টি ও লাবনি। কেবল সাতক্ষীরারই নয়, দেশের নারী ফুটবলের বড় মুখ সাবিনা খাতুন। প্রাপ্তি ও রূপা এই জেলার অন্য দুই ফুটবলার, যারা আছেন জাতীয় ক্যাম্পে। মাগুরার মেয়েরাও ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন ফুটবলে। এই জেলার আনিকা, সাথী বিশ্বাস, স্বর্ণা মন্ডল ও নবিরন খাতুন আছেন ক্যাম্পে। ঠাকুরগাঁওয়ের সোহাগী কিসকু, কোয়াতি কিসকু, স্বপ্না রানী, খাগড়াছড়ির মনিকা চাকমা, আনুচিং মগিনি ও আনাই মগিনি, রাঙামাটির রিতু পর্না চাকমা, রূপা চাকমা, সিরাজগঞ্জের আঁখি খাতুন, সুমী আক্তার ও কুষ্টিয়ার নিলুফা ইয়াসমীন নীলা, ইয়াসমিন আক্তার, কক্সবাজারের শাহেদা আক্তার রিপা, বাগেরহাটের আকলিমা খাতুন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুরধ্বনি কিসকু, নীলফামারীর শতাব্দী রায়, ঢাকার নাসরিন আক্তার, জামালপুরের, ঝিনাইদহের উন্নতি খাতুন, ঝালকাঠির রেহানা আক্তার ও রাজশাহীর নার্গিস খাতুনরা এখন জাতীয় ক্যাম্পের খেলোয়াড়। ২০০৯ সালে ছোটন প্রধান কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে একজনের বিভিন্ন খেলার প্রবণতা কমিয়ে এখন শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছেন। এ মুহূর্তে থাকা ক্যাম্পের সব নারীরই একমাত্র খেলা ফুটবল। এ প্রসঙ্গে ছোটন বলেছেন, 'একজন যখন একাধিক খেলায় অংশ নেয়, তখন সে কোনো খেলার দিকেই শতভাগ মনোযোগ দিতে পারে না। ফিটনেস ধরে রাখাও যায় না। তাই এখন অন্য খেলায় যাওয়ার সুযোগ নেই। এতে মেয়েরা শুধু ফুটবল নিয়েই থাকতে পারে। ফুটবলারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি।' বাফুফে কর্মকর্তারা প্রত্যশা করছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশের অর্ধেকেরও বেশি জেলা থেকে প্রতিনিধি থাকবে জাতীয় ক্যাম্পে।