আনসারের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের সমাপ্তি

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
আনসার ও ভিডিপির আধিপত্যের মধ্য দিয়ে শনিবার পর্দা নেমেছে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের। এ দিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা নামে গেমসের। ৩১টি ডিসিপিস্নন নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রীড়া আসরটি শুরু হয়েছিল গত ১ এপ্রিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছিলেন গেমসটির। গত আসরের মতোই এবারও পদক তালিকায় দাপট দেখিয়ে শীর্ষস্থানটি দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি। এবারের আসরে ১৩২টি স্বর্ণপদকসহ মোট ২৬৯টি পদক জিতেছে আনসার। জাতীর পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এবারের আসরের নামকরণ করা হয় 'বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমস।' লকডাউনের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্ধারিত দশ দিনব্যাপী হয় এবারের টুর্নামেন্ট। পর্দা নামে ১০ এপ্রিল। দেশব্যাপী সাতটি জেলার ২৯টি ভেনু্যতে ৫ হাজার ৩০০ অ্যাথলেট অংশ নিয়েছে এবারের গেমসে। পাঁচ সহস্রাধিক ক্রীড়াবিদ ১২৭১টি পদকের জন্য লড়াই করেন। এর মধ্যে সোনার পদক রয়েছে ৩৭৮টি। এবারের আসরের পদক তালিকায় সর্বোচ্চ সোনার পদক জিতে নিয়েছে আনসার। তাদের ঘরে গেছে ১৩২টি সোনা, ৮০টি রুপা ও ৫৭টি ব্রোঞ্জ পদক। তাদের মোট পদক ২৬৯টি। আনসারের অভূতপূর্ব এ সাফল্যে খুশি তাদের কর্মকর্তারাও। কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক পরিকল্পনার ফসল পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। আনসারের ক্রীড়া কর্মকর্তা রায়হান ফকির জানিয়েছেন, 'সারা বছর তারা জাতীয় প্রতিযোগিতাগুলোতে সাফল্য পেয়ে থাকেন। জাতীয় আসরের সাফল্যের ধারাবাহিকতাই বাংলাদেশ গেমসে বজায় থাকে।' মোট পদক সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও স্বর্ণ অর্জনে আনসারের থেকে পিছিয়ে আছে সেনাবাহিনী। তাদের ঝুলিতে গেছে ২৯৭টি পদক। এর মধ্যে সোনার পদক ১১৫টি। তবে রৌপ্য পদকে আনসারকে পেছনে ফেলে মোট ৯৯টি পদক ঘরে নেয় তারা। ৮৩টি ব্রোঞ্জপদকও জেতে তারা। তৃতীয় স্থানে থাকা নৌবাহিনী ঘরে নিয়েছে মোট ১২৭টি পদক। যার মধ্যে ৬৩টি সোনা, ৩৯ রুপা ও ২৫টি ব্রোঞ্জ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জিতেছে ১৪টি স্বর্ণ, ১৬টি রৌপ্য, ২৬টি ব্রোঞ্জ। মোট পদক ৫৬টি। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) গত আসরে ২৭ স্বর্ণসহ ১০০ পদক জিতলেও এবার ১০টি স্বর্ণ, ১৭টি রৌপ্য এবং ২৩টি ব্রোঞ্জ পদকসহ মোট ৫০টি পদক জিতেছে। বাংলাদেশ পুলিশ ঘরে নিয়েছে ৫৭টি পদক। যদিও এর মধ্যে ব্রোঞ্জ পদকই বেশি। মোট ৩৫টি ব্রোঞ্জ জিতেছে তারা। ৮টি স্বর্ণ ও ১৪ রৌপ্য জিতেছে তারা। ৩টি করে সোনার পদক পেয়েছে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও নৌবাহিনী শুটিং ক্লাব। ২টি করে সোনা জিতেছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, কোয়ান্টাম কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বান্দরবান পার্বত্য জেলা ক্রীড়া সংস্থা, কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব, বাংলাদেশ পুলিশ অ্যারচারি ক্লাব, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও গোল্ডেন জিম। পদকশূন্য দলের সংখ্যা ২২২টি। সর্বমোট দল ৩৭৯টি। শনিবার বরিশালে নিষ্পত্তি হয় পুরুষ ক্রিকেট ইভেন্টের। যেখানে আনসার, আর্মি, নৌবাহিনী কোনো দলেরই অংশগ্রহণ ছিল না। বাংলাদেশ গেমস থেকে অনেক উদীয়মান খেলোয়াড় উঠে আসবে, সমৃদ্ধ হবে দেশের ক্রীড়াঙ্গন আয়োজকদের এমন প্রত্যাশা বাস্তবে রূপ নিয়েছে পরিপূর্ণভাবে। ব্যাডমিন্টনে ঊর্মি, গৌরব, আর্চারিতে রাম কৃষ্ণ সাহার মতো বিভিন্ন ডিসিপিস্নন থেকে উঠে এসেছে অনেক নতুন মুখ। যারা আগামীতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং সম্মান বয়ে আনবে। গেমস আয়োজক বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি, মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ও গেমস স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান শেখ বশির আহমেদ মামুন বলেছেন তাদের শতভাগ প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, 'বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের ৩১টি ডিসিপিস্ননে অনেক নতুন মুখের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। নতুনদের এই উত্থান আসলে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত যুব গেমসেরই ধারাবাহিকতা। তরুণরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে।' গেমস আয়োজনের সফলতার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, 'প্রথমত ক্রীড়াঙ্গনে দীর্ঘ স্থবিরতার পর প্রাণ ফিরেছে। এছাড়া এই গেমসের সফলতা কেবল ক্রীড়াকৌশলের দৃষ্টিকোণ থেকেই বিবেচ্য নয়, বরং ক্রীড়াঙ্গনের আর্থ-সামাজিক দিক থেকেও বিবেচ্য। আমার অভিমত, এই গেমস সার্বিকভাবেই সফল হয়েছে।'