ব্যাটিংয়ের দীনতা ঢাকলেন ইমরুল-সাইফ

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে রেকডর্ ১২৭ রানের জুটি গড়ার পথে ইমরুল কায়েস-সাইফউদ্দিন। তাদের ব্যাটে চড়েই রোববার মিরপুরে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে বড় লক্ষ্য ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ Ñবিসিবি
চাইলেই তামিম ইকবাল আর সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটার পাওয়া যায় না। তাদের বিকল্প আসলে তারাই। অন্য কেউ নন। কঠিন এই সত্য আরও একবার অনুধাবন করল বাংলাদেশ। চোটে আক্রান্ত দুই ক্রিকেটারকে ছাড়া রোববার মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নেমেছিল টাইগাররা। গোটা ম্যাচেই তাদের অভাব হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে তারা। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। একে সাকিব-তামিম নেই, তার ওপর মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ব্যথর্ হওয়ায় বেরিয়ে পড়েছিল দলের ব্যাটিংয়ের কঙ্কাল। এরপরও ৫০ ওভার শেষে বাংলাদেশের ঝুলিতে ২৭১ রান, সেটা কেবলই ইমরুল কায়েস আর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের কল্যাণে। ঘরের মাঠে আট মাস পর খেলতে নামা টাইগারদের ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ৩৫০তম ম্যাচ ছিল এটি। মাইলফলক ছেঁায়া ম্যাচে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের মতো মিনোস দল। কোথায় উজ্জীবিত হয়ে খেলবে টাইগাররা, টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে উল্টো ধুঁকতে হলো। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দলপতি মাশরাফি বিন মতুর্জা শেষতক সেটা ভুল প্রমাণিত না হলেও শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানরা সিদ্ধান্তটাকে ঠিকই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। মাশরাফি আগের দিন সিরিজপূবর্ সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেনÑ মিরপুরের উইকেট আনপ্রেডিক্টেবল, ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টায়। রোববার বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের রং পাল্টাল মিরপুরের উইকেটের চরিত্রের থেকেও বেশি। জিম্বাবুয়ের বোলাররা কৃতিত্ব দাবি করতেই পারে। শুরুতে চাতারা-জাসির্ভরা ছিলেন দুদার্ন্ত। ইনিংসের ষষ্ঠ এবং নিজের তৃতীয় ওভারে দুই উইকেট নিয়ে প্রথম ধাক্কাটা দিলেন চাতারা। হ্যামস্টিংয়ের চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরে জাভির্স দিলেন পরের ধাক্কাটা। টানা দুই ওভারে তুললেন তিন উইকেট। তাতে ৩ উইকেটে ১৩৭ থেকে চোখের পলকে ৬ উইকেটে ১৩৯ বাংলাদেশ। সেখান থেকে স্বাগতিকরা ২০০ পেরুতে পারবে কি না, তা নিয়েই ছিল শঙ্কা। দুদার্ন্ত ব্যাটিংয়ে ইমরুল আর সাইফউদ্দিন সেই শঙ্কা তো দূর করেছেনই, দলকে এনে দিয়েছেন চ্যালেঞ্জিং পুঁজি। এই যুগলের চওড়া ব্যাট ঢেকে দিয়েছে দলের ব্যাটিংয়ের দীনতা। ব্যাট হাতে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিতে অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ইমরুল। ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরিতে সাইফউদ্দিন বুঝিয়েছেন, তিনি হতে পারেন দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। ইমরুল-সাইফের সপ্তম উইকেট রেকডর্ ১২৭ রানের জুটি বাংলাদেশকে দিয়েছে লড়াইয়ের রসদ। ৬৯ বলে ৩টি চার আর একটি ছক্কায় সাজানো ৫০ রানের ইনিংসের শেষটায় সাইফউদ্দিন ছিলেন অসাধারণ। আর ইমরুল তো ছিলেন এদিন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রাণ। লিটন দাসের সঙ্গে ইনিংসের সূচনায় নেমেছিলেন। ১৪০ বলে ১৩টি চার আর ৬টি ছক্কায় ১৪৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে যখন সাজঘরে ফিরলেন, ইনিংসের তখন ৮ বল বাকি। বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশ থেকে দুযোের্গর কালো মেঘ সরিয়েই ফিরেছেন ইমরুল। দলীয় ১৬ রানের মাথায় এই ওপেনার দেখেছেন লিটন দাসের আত্মহনন। অভিষিক্ত ফজলে মাহমুদ রাব্বি রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে। তামিম-সাকিবহীন ব্যাটিং লাইনআপের মূল ভরসা মুশফিকও টিকতে পারলেন না। ইমরুল তবু ধৈযর্ হারাননি। মুশফিকের সঙ্গে ৪৯ আর মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে চতুথর্ উইকেটে ৭১ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়েছেন। এরপর জাভিের্সর ঝড়ে যখন তিন ওভারের ব্যবধানে মিঠুন (৩৭), মাহমুদউল্লাহ (০) আর মিরাজ (১) সাজঘরে ফিরলেন, সাইফউদ্দিনকে নিয়ে আবার ফেরার লড়াই শুরু করলেন বঁাহাতি ওপেনার। এদিন বাংলাদেশের পুরো ইনিংসটাই আবতির্ত হয়েছে ইমরুলের ব্যাটে। সাইফউদ্দিন আর মিঠুন কিছুটা সময় সাহচযর্ দিয়েছেন। বাকিরা ছিলেন চরমভাবে ব্যথর্। আগের ম্যাচেই সেঞ্চুরি পাওয়া লিটন ছিলেন নড়বড়ে। যে রাব্বিকে দলে নেয়া হয়েছে সাকিবের বিকল্প ভেবে, তার অভিষেকটা হয়েছে ভুলে যাওয়ার মতো। এরপর মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ব্যথর্তা, তবুও মাঝ দড়িয়ায় ডুবে যায়নি বাংলাদেশের ব্যাটিং। ভাগ্যিস ব্যাটিংয়ের দীনতা ঢাকতে ত্রাতা হয়ে হাজির হয়েছিলেন ইমরুল-সাইফউদ্দিনরা। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যক্তিগত সবোর্চ্চ রান প্রতিপক্ষ ভেন্যু সন তামিম ইকবাল ১৫৪ জিম্বাবুয়ে বুলাওয়ে ২০০৯ মুশফিকুর রহিম ১৪৪ শ্রীলংকা দুবাই ২০১৮ ইমরুল কায়েস ১৪৪ জিম্বাবুয়ে মিরপুর ২০১৮ সাকিব আল হাসান ১৩২* কানাডা সেন্ট জোনস ২০০৭ তামিম ইকবাল ১৩২ পাকিস্তান মিরপুর ২০১৫