সঠিক পথে জাতীয় ফুটবল দল

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
শেষ হলো বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তজাির্তক ফুটবল টুনাের্মন্ট। ঘরের মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রæপপবর্ পেরুতে না পারলেও এই টুনাের্মন্টের সেমিফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ফুটবলবোদ্ধাদের থেকে শুরু করে সাধারণ দশর্কদের অভিমতÑ এই দলটি মাঠে ভালো করছে। তারুণ্যনিভর্র দলটি সঠিক পথেই এগোচ্ছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে। বছর দুয়েক আগে ভুটান বিপযের্য় দিশা হারিয়েছিল জাতীয় দল। দীঘর্ দিন আন্তজাির্তক ফুটবল থেকে নিবার্সনে থাকায় ফিফা র‌্যাংকিংয়ের একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বাংলাদেশ। সেখানে আশার আলো জ্বালিয়েছে তারুণ্যনিভর্র এই দলটি। ব্রিটিশ কোচ জেমি ডের অধীনে তপু-বিপলু-জামালদের পারফরম্যান্স উজ্জ্বল আগামীর বাতার্ দিচ্ছে। কোচ জেমিও শিষ্যদের মাঝে দেখেছেন সম্ভাবনা। তাই দুই সপ্তাহের ছুটিতে যাওয়ার আগে বলে গেছেন, বাংলাদেশকে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ১৫০-এর মধ্যে তুলে আনবেন। এশিয়ান গেমস, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এরপর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ; তিন আসরের একটিতে বয়সভিত্তিক দল খেললেও মূলত জাতীয় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই ছিলেন সেখানে। অন্য দুটো টুনাের্মন্টে জাতীয় দলই ছিল। জেমির অধীনে অনূধ্বর্-২৩ দল ইতিহাস গড়ে খেলেছে এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় রাউন্ডে। এরপর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুদার্ন্ত। টানা দুই ম্যাচে জয়, কিন্তু শেষ ম্যাচে নেপালের কাছে একটি হারেই কপাল পুড়ে, বিদায় নিতে হয় গ্রæপপবর্ থেকেই। সদ্য শেষ হওয়া বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সেমিফাইনাল খেলেছে দল, আসরে মনোমুগ্ধকর পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন জামাল-সুফিলরা। সেমিফাইনালে ফিলিস্তিনের কাছে হারের পরও তাই কোচ জেমি জোর দিয়ে বলেছিলেনÑ আমরাই ভালো খেলেছি। কেবল ফলটাই আমাদের পক্ষে আসেনি। মোদ্দাকথা, শিষ্যদের পারফরম্যান্স মন ভরিয়েছে কোচের। অন্যদিকে কোচের সামগ্রিক কযর্ক্রম সন্তুষ্ট করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) শীষর্ কতাের্দর। বাংলাদেশের ফুটবল আলোয় ফেরা শুরু করে মুলত জেমির পূবর্সুরি অ্যান্ড্রু অডের্র অধীনে। চলতি বছরের ২৭ মাচর্ লাওসের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে ২-২ গোলের ড্রয়ে জাতীয় দল ফেরে আন্তজাির্তক আঙিনায়। এরপর অগত্যা অডের্র বিদায়, তার জায়গায় জেমির আগমন। মূলত অডের্র হাতে গড়া দল নিয়েই কাজ শুরু করেন জেমি। তাতে একটু সুবিধেই হয়েছে তার। তারুণ্যনিভর্র এই দলটি সত্যিই বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন এক ছবি আকছে। হারার আগে হেরে না যাওয়ার মানসিকতা দেখাচ্ছে। এই বাংলাদেশ দ্রæতগতির ফুটবল খেলছে। সমীহ আদায় করছে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে। এর কৃতিত্বটা যেমন জামাল-জীবন-তপুদের পাওনা, একইভাবে কৃতিত্ব দিতে হবে জেমিকেও। মাত্র কয়েক মাসেই তিনি যে দলটি দঁাড় করিয়েছেনÑ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে এই দলটি ভালো কিছুই উপহার দেবে বাংলাদেশকে। বাফুফে কতার্রাও আশাবাদী। ভালো কিছুর সম্ভাবনা দেখছেন জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার এবং কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। মানিকের চোখে বতর্মান দলটির গড় পারফরম্যান্স বেশ ভালো। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেছেন, ‘জেমি ডে এখন পযর্ন্ত যতটুকু কাজ করেছেন, আমার কাছে মনে হয়েছে খেলার ধরনে একটা পরিবতর্ন এসেছে। খেলোয়াড়দের মানসিকতার পরিবতর্নগুলো চোখে পড়েছে। আমার মনে হয় এই দলটা কন্টিনিউ করলে আরও ভালো করবে। মানসিকভাবে যেমন পরিবতর্ন এসেছে, শারীরিক ভাষারও পরিবতর্ন এসেছে। কিন্তু দুভার্গ্যজনকভাবে টুনাের্মন্টগুলোতে আমরা রেজাল্ট পেতে পেতেও পাইনি।’ বতর্মান দলটির মধ্যে যে বিষয়টি সবথেকে বেশি চোখে পড়েছে মানিকের তা হলোÑ ‘হারার আগে হেরে না যাওয়ার মানসিকতা’। তার মতে, ‘ম্যাচের ফল বের হওয়ার আগ পযর্ন্ত যতটুকু চেষ্টা করার দরকার ৯০ মিনিট ধরে সেটি তারা করতে চেষ্টা করছে। খেলোয়াড়রা কোচের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে চেষ্টা করে।’ তবে আরও উন্নতির প্রয়োজন দেখছেন মানিক। তার মতে, মানসিক চাপ কিংবা প্রত্যাশার চাপ নেয়ার ক্ষেত্রে আরও পরিপক্ব হয়ে উঠতে হবে খেলোয়াড়দের। চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে দুবর্লতা আছে। দলে নেই ভালো মানের গোলস্কোরার। দলীয় কোচ জেমির স্পষ্ট কথা, সহসাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য সময় লাগবে। ভালো মানের স্ট্রাইকার বের করে আনতে বড় ভ‚মিকা রাখতে হবে ক্লাবগুলোকেও। সামনেই ঘরোয়া ফুটবলের নতুন মৌসুম শুরু হচ্ছে। এখন দেখার, ক্লাবগুলো তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয় কিনা।