রোডসের চোখে ‘সেরা অধিনায়ক’ সাকিব

‘এখন পযর্ন্ত সাকিবকে আমি সব থেকে বেশি যোগ্য হিসেবে খুঁজে পেয়েছি কাজ করার ক্ষেত্রে। আমি এর আগেও অনেক অধিনায়কের সঙ্গে কাজ করেছি। তবে সাকিব হলো সব থেকে সেরা ট্যাকটিক্যাল অধিনায়ক

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
দলের অনুশীলনের ফঁাকে এভাবেই ফ্রেমবন্দি হয়েছেন টাইগারদের প্রধান কোচ স্টিভ রোডস Ñবিসিবি
বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেয়ার পর দু’জন অধিনায়কের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে কোচ স্টিভ রোডসের। একজন মাশরাফি বিন মতুর্জা, আরেকজন সাকিব আল হাসান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে কাজ করবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে। এর আগেই রোডস জানালেন, সাকিবই তার দৃষ্টিতে সেরা অধিনায়ক। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের তীক্ষè ক্রিকেট বুদ্ধি বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে তাকে। বাংলাদেশ টেস্ট ও টি২০ দলের অধিনায়ক সাকিবকে রোডস অবশ্য খুব বেশি দিন পাননি। রোডসের জমানায় শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই টেস্ট আর দুই টি২০তেই অধিনায়কত্ব করতে পেরেছিলেন সাকিব। এরপর তো বাংলাদেশ খেলল এশিয়া কাপ ওয়ানডে টুনাের্মন্ট। যেখানে আবার অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি। আর মাত্র একদিন পর সিলেট আন্তজাির্তক স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামবে রোডসের শিষ্যরা। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের শেষবারের মতো ঝালিয়ে নিচ্ছেন টাইগার কোচ। এরই মধ্যে রোডসের কাছে প্রশ্ন ছিলÑ অল্প সময়ে তিন অধিনায়কের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ব্যাপারটা কেমন? উত্তরে তিনি চলে গেলেন ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণে। বললেন, ‘এখন পযর্ন্ত সাকিবকে আমি সব থেকে বেশি যোগ্য হিসেবে খুঁজে পেয়েছি কাজ করার ক্ষেত্রে। আমি এর আগেও অনেক অধিনায়কের সঙ্গে কাজ করেছি। তবে সাকিব হলো সব থেকে সেরা ট্যাকটিক্যাল অধিনায়ক যার সঙ্গে আমি কাজ করেছি। ওর অসামান্য স্ট্রেন্থ রয়েছে।’ যদিও জনপ্রিয়তা আর সাফল্যের মাপকাঠিতে বাংলাদেশে অধিনায়ক মাশরাফির আশপাশে কেউ নেই। সেটিও খুব ভালো করে জানা আছে রোডসের। মাশরাফির বিশেষত্ব যে আলাদা, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন রোডস, ‘ম্যাশও দারুণ একজন মানুষ কাজ করার জন্য। তবে সে সাকিবের থেকে ভিন্ন, সে প্যাশন এবং প্রাইডের জন্য খেলে। সাকিবও সেটি করে, তবে ম্যাশ সেটি প্রকাশ করতে পারে। সে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে এবং সে ক্রিকেটারদের সেরাটা বের করে আনতে পারে। সে একজন যোদ্ধা এবং দলকে দারুণভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমি ম্যাশের সঙ্গেও কাজ করতে উপভোগ করছি।’ সাকিব-মাশরাফির পর রোডসকে এবার কাজ করতে হবে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে। সাকিবের চোটের কারণেই যিনি টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন। তার সঙ্গে কাজটা উপভোগ্য হবে বলেই মনে করছেন রোডস, ‘রিয়াদ এখন নতুন অধিনায়ক হয়েছে। তার সম্পকের্ খুব বেশি বলতে না পারলেও শুরুর দিকে আমরা কয়েকটি সংক্ষিপ্ত মিটিং করেছিলাম দল নিবার্চনের ব্যাপারে। আশা করি নিবার্চকেরা সেগুলো দেখভাল করবে। আশা করি তার (রিয়াদ) সঙ্গে আরেকটি মিটিং করব।’ মাত্র তিন ইনিংস আগের ঘটনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েই চরম বিব্রতকর অবস্থা হয়েছিল বাংলাদেশের। অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম ইনিংসে সাকিবের দল গুঁটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৪৩ রানে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে সেই তেঁতো স্মৃতি মনে করিয়ে দিতেই রোডস জানালেন কতটা কষ্ট ছিল অ্যান্টিগার উইকেটে টিকে থাকা। আত্মপক্ষ সমথর্ন করে বললেন, ‘আমরা অ্যান্টিগাতে বেশ কঠিন উইকেটে খেলেছিলাম। সেখানে মাত্র ৪৩ রানে অলআউট হয়েছি। সেটি ছিল অনেক খারাপ পারফরম্যান্স অবশ্যই। তবে সত্যি কথা বলতে আমাদের যদি ১১ জন রিকি পন্টিং থাকতো তাহলে হয়তো আমরা ১০০ রান করতে পারতাম। এতটাই কঠিন ছিল সেই পিচটি এবং সেদিন টসটাও অনেক গুরুত্বপূণর্ ছিল।’ ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই কোচ হিসেবে রোডসের যাত্রা শুরু। তাকে তাই কাঠগড়ায় দঁাড় করানোর সুযোগই তেমন নেই। তবে বৃহস্পতিবার অনুশীলন শেষে নিজে থেকেই দলের সেই অবস্থার পক্ষে ব্যাট করে গেলেন তিনি, ‘এটি ছিল অনেক বেশি কঠিন কন্ডিশন এবং বিশ্বের অনেক সেরা খেলোয়াড়ও সেখানকার উইকেটে গলদঘমর্ হতো। তবে আমি কোনো অজুহাত দিচ্ছি না, আমরা আরও ভালো করতে পারতাম। তবে একজন কোচ হিসেবে আমি একজন শিক্ষক আর আমি সুযোগ দেয়ার পক্ষে। এখন দেখা যাক এই ব্যাটসম্যানরা এবার কেমন করেন। আশা করি তারা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বাইরেও ভালো কিছু করবে।’ শুধু অ্যান্টিগা বা জ্যামাইকাতেই নয়, ঘরের মাঠেও এর আগে শ্রীলংকার বিপক্ষে বেহাল দশা ছিল টাইগার ব্যাটসম্যানদের। তবে রোডস তখন কোচ ছিলেন না। ওসব নিয়ে তার উত্তর না দিলেও চলত। কিন্তু ঘূণির্ পিচ বানিয়ে জেতার চেষ্টা করায় কম রানে গুঁটিয়ে যাওয়া নিয়েও তিনি বাংলাদেশ দলের ঢাল হিসেবে নিজের চুক্তিগুলো তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন, ‘আমরা হোম সিরিজে খুব একটা ভালো করছি না। তবে এরপরেও আমরা কিন্তু ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিলাম। সেটি কিন্তু এই স্পিন কন্ডিশনের কারণে। আর যখন আপনি খেলবেন তখন তো অবশ্যই জয়ের জন্যই খেলতে চাইবেন। ইংল্যান্ডে বিপক্ষে ম্যাচটির ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার হয়েছে। কারণ আপনি জয়ের জন্যই খেলবেন। তাইতো দিন শেষে আপনি কেমন খেলেছেন তার থেকেও বড় ব্যাপার হল আপনি জয় পেয়েছেন কিনা। সেটি বড় এক প্রশ্ন হয়ে দেখা দেবে।’