আজকের যায়যায়দিন

পারফরম্যান্স ও পারিপার্শ্বিকতা, কোনো দিক থেকেই টেস্ট দলের কাছাকাছি ছিলেন না মোহাম্মদ নাঈম শেখ। সেই তিনিই এখন বাংলাদেশের টেস্ট দলের সদস্য। পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের দলে তার জায়গা পাওয়া জন্ম দিচ্ছে অনেক প্রশ্ন ও বিস্ময়ের। দল ঘোষণার পরদিন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর কাছ থেকে জানা গেল নাঈমকে নেওয়ার কারণ।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এখনো পর্যন্ত মাত্র ৬টি ম্যাচ খেলেছেন নাঈম। ব্যাটিং গড় মোটে ১৬.৬৩। ফিফটির মুখ দেখেছেন মাত্র একবার। সবশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচটি তিনি খেলেছেন ২১ মাস আগে। সেই ম্যাচে দুই ইনিংসেই আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে।

সবশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচের পর দীর্ঘ এই সময়ে মাত্র দু'টি বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ তিনি খেলার সুযোগ পেয়েছেন। পারফর্ম করতে পারেননি সেখানেও। গত বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে আউট হন ১১ রানে। এরপর এই বছরের শুরুতে সফরে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের দুই ইনিংসে করেন ৪৫ ও শূন্য।

আর এমন একজনের হুট করে দলে জায়গা পাওয়ায় আলোচনার ঝড় ওঠা স্বাভাবিক। দল ঘোষণার বিবৃতিতেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। নাঈমকে দলে নেওয়ার কারণ জানালেন বিসিবির প্রধান নির্বাচক, 'নাঈম আমাদের একটি সিস্টেমের মধ্যে আছে গত এক বছর বা আরও বেশি সময় ধরে। বিশেষ করে, টিম ম্যানেজমেন্টের। ফাস্ট বোলিংয়ে সবাই সমস্যায় পড়েছে আমাদের। টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। তাদের চাহিদা- একটা টেস্ট ম্যাচ আছে আমাদের, ওকে চেষ্টা করে দেখতে পারি। ওর ওপর বিশ্বাস আছে। সবাই তো হিমশিম খাচ্ছে।'

প্রতিশোধের ম্যাচেও আবাহনীর কাছে হারল শেখ জামাল

তিনি আরও যোগ করে বলেন, 'নাঈমের প্রথম শ্রেণির রেকর্ড ভালো না। তবে আমাদের এইচপির ক্রিকেটার, জাতীয় দলে খেলছেন বেশ কিছু দিন ধরে। সব মিলিয়ে একটা মনিটরিংয়ের মধ্যে ওকে রাখা হয়েছিল। তাছাড়া তিনি জাতীয় দলের সঙ্গে নিয়মিতই আছেন। শুধু সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেললেও নাইম নিয়মিত আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনুশীলন করেন। অনুশীলনে নিয়মিতই বোলিং মেশিনে উচ্চগতির বিপক্ষে খেলছে, ঘরোয়া ক্রিকেটে এই সুবিধাটা নেই। তাই জাতীয় লিগের কোনো ব্যাটারকে হুট করেই শাহিন আফ্রিদি-হাসান আলিদের বিপক্ষে নামিয়ে দেওয়া সমীচীন মনে করিনি আমরা।'

ওপেনার সাইফ হাসান টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ায় মিরপুর টেস্টের জন্য বিবেচনার বাইরে চলে গেছেন। স্কোয়াডে সাদমানের সঙ্গে ওপেনার বলতে এখন কেবল নাঈমই। তবে একাদশে তার জায়গা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই এতেই। তরুণ ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয়কে ওপেনার হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে বলে চট্টগ্রাম টেস্টের আগে জানিয়েছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। এছাড়া নাজমুল হোসেন শান্তকে তিন নম্বর থেকে ওপেনিংয়ে তুলে আনার ভাবনাও দলের আছে।

মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ২০ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। কেবল এক ম্যাচের জন্য কেন এত জনের বহর? দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে এ নিয়ে চলা নানামুখী আলোচনার মধ্যে জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল জানালেন, আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরের কথা মাথায় রেখে এই দল দেওয়া হয়েছে।

সবশেষ চট্টগ্রাম টেস্টের জন্য শুরুতে ১৬ সদস্যের দল ঘোষণা করে বিসিবি। তবে তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান চোট থেকে সেরে না ওঠায় ছিটকে যান। পরে আরও দু'জনকে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তারা হলেন দুই পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও শহিদুল ইসলাম। মিরপুর টেস্টে চোট কাটিয়ে ফিরেছেন সাকিব। তার পাশাপাশি ফেরানো হয়েছে তারকা পেসার তাসকিন আহমেদকে। আর প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে ডাক পেয়েছেন ওপেনার নাঈম শেখ। সবমিলিয়ে দল দাঁড়িয়েছে ২০ জনের, যা নিয়ে জেগেছে বিস্ময়।

আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরের ভাবনা থেকেই বাংলাদেশের এত বড় স্কোয়াড বললেন নান্নু, 'আমাদের এই দলটা কেবল পাকিস্তানের বিপক্ষে এক টেস্টের জন্য নয়। বরং নিউজিল্যান্ড সফরের প্রস্তুতির জন্য। যেহেতু জৈব সুরক্ষা বলয়ের ব্যাপার রয়েছে, তাই টিম ম্যানেজমেন্টের অধীনে ওদেরকে অনুশীলন করানো হবে। জৈব সুরক্ষা বলয়ের বাইরের কারও তো অনুশীলন করার সুযোগ নেই। এদের থেকেই নিউজিল্যান্ড সফরের দল বেছে নেওয়া হবে।'

আগামী বছর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দু'টি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। ম্যাচগুলো আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। ১ জানুয়ারি থেকে মাউন্ট মঙ্গানুইতে হবে প্রথম টেস্ট। ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয়টি শুরু হবে ৯ জানুয়ারি।