কঠিনেরে জয় করেছেন মুমিনুল

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বছরের শুরুতে জোড়া সেঞ্চুরির পর হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া মুমিনুল হক ফিরলেন স্বমহিমায়। মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বঁাচা-মরার টেস্টে হঁাকালেন সেঞ্চুরি। যেটি তার ক্যারিয়ারের সপ্তম, যে সেঞ্চুরিতে অনেক ‘কঠিন’কে জয় করেছেন বাহাতি ব্যাটসম্যান। এরপরও আক্ষেপ আছে। চেয়েছিলেন অপরাজিত থেকে দিনটা শেষ করতে। কিন্তু দিনের খেলা শেষ হওয়ার ৫ ওভার আগে আউট হয়ে গেছেন। গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে জোড়া (১৭৬ ও ১০৫*) সেঞ্চুরি করেছিলেন মুমিনুল। চট্টগ্রামে শ্রীলংকার বিপক্ষে সেই টেস্টটি ড্র করেছিল বাংলাদেশ। তারপর থেকে টেস্টে নিজেদের হারিয়ে ফেলতে থাকে টাইগাররা। বিবণর্ হয়ে পড়েন মুমিনুলও। সবের্শষ ৮ ইনিংসে তার স্কোরগুলো যথাক্রমে- ০, ৩৩, ১, ০, ০, ১৫, ১১, ৯। কিন্তু সেই ব্যথর্তা কাটিয়ে মিরপুরে স্বরূপে ফিরে এসেছেন তিনি। ধ্বংসস্ত‚প থেকে টেনে তুলেছেন দলকে। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে খেলতে থাকেন আত্মবিশ্বাসী সব শট। চতুথর্ উইকেট জুটি অবিচ্ছিন্ন থেকে বাংলাদেশের রান নিয়ে গেছেন দুইশ’ পেরিয়ে। শেষ আট ইনিংসে দুইশর মুখ না দেখা টাইগাদের জন্য এর চেয়ে স্বস্তির আর কী হতে পারে! মুমিনুলের এই সেঞ্চুরি টেস্টে বাংলাদেশের ৫০তম, আর পুরো টেস্ট ইতিহাসের ৪ হাজার ১০৩তম। ২০০০ সালে ১০ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে টেস্ট সেঞ্চুরির শুরু আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ব্যাটে। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট ম্যাচেই আমিনুল হঁাকিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। আর বাংলাদেশ যখন টেস্টে ১৯ বছরে পা রাখলো তখন সেঞ্চুরি দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল পূণর্ করল সেঞ্চুরির হাফসেঞ্চুরি! টাইগারদের হয়ে সবোর্চ্চ ৮টি সেঞ্চুরি তামিম ইকবালের। মুমিনুলের ৭টি। ৬টি সেঞ্চুরি আশরাফুল আর মুশফিকের। ৫টি সেঞ্চুরি আছে সাকিব আল হাসানের। ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরিটা মুমিনুল সহজে পাননি। ক্যাচ তুলেও দুবার জীবন পেয়েছেন। শুরুতে খেলেছেন ‘বোলিংবান্ধব’ উইকেটে। এরপর সেটা ধীরে ধীরে ব্যাটিংবান্ধব হয়েছে, মুমিনুলও ফিরেছেন ছন্দে। খেলেছেন বাহারি সব শট। প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে মুমিনুল জানিয়েছেন, ‘এই সেঞ্চুরিটা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। উইকেটে বাউন্স এক রকম ছিল না। প্রথম দিকে দ্রæত তিনটি উইকেট পড়ার কারণে শুধু আমি নই, সবাই ভীত ছিলাম।’ দীঘর্সময় পর সেঞ্চুরি পাওয়ার পর মুমিনুল জানালেন, ‘এই শতক পাওয়া থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’ ৫ উইকেটে ৩০৩ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। দলের প্রথম ইনিংসটা কতদূর দেখতে চান? জানতে চাইলে মুমিনুল বলেন, ‘আশা করি বড় স্কোর হবে। ৪০০ রান হলে ভালো হয়। উইকেটে আছেন মুশফিক ভাই, রিয়াদ ভাই, এরপর আছে আরিফুল। তো স্কোরটা ভালোই হবে আশা করি।’ মুমিনুলের সুযোগ ছিল ডাবলসেঞ্চুরি করার। আউট হয়েছেন ১৬১ রানে। এর আগে আরও দুবার দেড়শ পেরিয়ে আউট হয়েছেন। ডাবলসেঞ্চুরিটা ধরি ধরি করেও ধরা হচ্ছে না। কবে ধরতে পারবেন সেটা? এমন প্রশ্নে মুমিনুলের জবাব, ‘বাংলাদেশ যেদিন ৪৫০ রানের টাগের্ট নিয়ে ম্যাচ জিতবে সেদিন হয়তো আমার ডাবল সেঞ্চুরি করার সুযোগ হবে।’ ডাবল সেঞ্চুরি না করার আফসোস জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটু খেলতে পারলে ভালো হতো, দলের স্কোরটা একটু হতো। আমার মনে হয় স্কোরটা বড়ই হবে। হাতে আরও কয়েকটি উইকেট আছে। তারা যদি ভালো কিছু করে তাহলে দারুণ একটা ইনিংস হয়ে উঠতে পারে।’ প্রথম দিকে বাংলাদেশ দলের উইকেট হারানো প্রসঙ্গে মুমিনুল বলেন, ‘উইকেটটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। তারপরও বলটা নিভের্য় খেলার চেষ্টা করেছি।’ ওই চেষ্টাতেই ২৬ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দিন শেষে শক্ত অবস্থানে দঁাড়িয়ে। মুশফিকের সঙ্গে চতুথর্ উইকেটে তার রেকডর্ ২৬৬ রানের জুটিটাই বদলে দিয়েছে ম্যাচের দৃশ্যপট। ওই জুটি নিয়ে মুমিনুল বললেন, ‘রেকডর্ নিয়ে চিন্তা করি না।’ আসলেই চিন্তা করেন না মুমিনুল। তা না হলে কি আর সেঞ্চুরির পর উদযাপন করতে ভুলে যান! নিজেই বললেন, ‘সেঞ্চুরির পর উৎসব করার বিষয়টি মাথায়ই ছিল না।’