রেকডের্র মালায় গঁাথা মুশফিকের ২১৯

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সিকান্দার রাজার করা বলটি মিডউইকেটে পাঠিয়ে পড়িমড়ি করে রানটা পূণর্ করলেন। দুহাত উপরে প্রসারিত করে শূন্যে তাকালেন। এরপর হেলমেট খুললেন, হাতের ব্যাট তখন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মুষ্টিবদ্ধ হাত বাতাসে ছুড়লেন, বুক চাপড়ালেন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার মুশফিকুর রহিমের এমন উদযাপন ক্যারিয়ারে আরেকবার ডাবলসেঞ্চুরি পূণর্ করার আনন্দে। ওই আনন্দযাত্রার ফঁাকে ফঁাকে রেকডর্ গড়ে গেছেন একের পর এক। কোনো উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের থেকে দুটো ডাবল সেঞ্চুরি, প্রায় দেড়শ বছরের যাত্রায় এই প্রথম দেখল টেস্ট ক্রিকেট। মিরপুরে চলছে ২ হাজার ৩২৫তম টেস্ট ম্যাচ। শুরু থেকে নিয়ে এর আগের টেস্টগুলোতে অনেক রথী-মহারথীর পদচারণা দেখা গেছে। দুদার্ন্ত সব কিপার-ব্যাটসম্যানও দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। কিপার-ব্যাটসম্যানদের থেকে ৯ বার ডাবল সেঞ্চুরিও দেখা হয়েছে, কিন্তু কারও ব্যাটেই দুবার ২০০ রানের ইনিংস দেখা হয়নি। শ্রীলংকার কুমার সাঙ্গাকারা ১১টি ২০০ ছেঁায়া ইনিংস খেলেছেন, তবে টেস্টে কিপিং গøাভস ছেড়ে দেয়ার পর। তবে কীতির্টা প্রথম লেখা হতে পারত অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নামে। জিম্বাবুয়ের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান ২০০০ সালে নাগপুরে ভারতের বিপক্ষে ২৩২ রানের ইনিংস খেলার পর হারারেতে পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ছিলেন ১৯৯ রানে! দল অলআউট হয়ে যাওয়ায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি এই কিপার-ব্যাটসম্যানের। মুশফিক পেয়ে গেলেন ঠিকই। কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটকে সবশেষ দুটো সেঞ্চুরিই উপহার দিলেন মুশফিক। সোমবার দলীয় ৫২২ রানের মাথায় দলপতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যখন ইনিংস ঘোষণা করলেন, মুশফিক তখন ২১৯ রানে অপরাজিত। টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সবোর্চ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এখন এটিই। মুশফিক পেছনে ফেলেছেন সতীথর্ সাকিব আল হাসানকে। গত বছর ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১৭ রান করেছিলেন তিনি। সেদিন সাকিব ভেঙেছিলেন ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম ইকবালের গড়া ২০৬ রানের রেকডির্ট। তামিম ভেঙেছিলেন কার রেকড? মুশফিকের। ২০১৩ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে গল টেস্টে ২০০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিক। টেস্টে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম ডাবলসেঞ্চুরি ছিল সেটি। স্বভাবতই সবোর্চ্চ রানের রেকডর্ও। তামিম-সাকিবের হাত ঘুরে পঁাচ বছর পর সেই রেকডর্ আবার মুশফিকের ঝুলিতে। মিরপুরে চলমান এই টেস্টে চোটের কারণে খেলছেন না তামিম-সাকিব। তবে এক এক করে তাদের পেরিয়ে মুশফিকের শৃঙ্গে উঠে যাওয়া মাঠে বসেই দেখেছেন দুজন। পরে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। ১১১ রান নিয়ে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুরু করেছিলেন মুশফিক। আগের দিনই চতুথর্ উইকেটে মুমিনুল হকের সঙ্গে ২৬৬ রানের জুটি গড়ে নাম তোলেন রেকডর্ বইয়ে। এরপর এক এক করে রেকডের্র মালা গঁাথলেন। দুটো ডাবলসেঞ্চুরি হঁাকানো একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান এখন তিনি। দেশের পক্ষে দুবার সবোর্চ্চ ইনিংস খেলার রেকডর্ও এখন তার নামে। এই তালিকায় তার আগে নাম তুলতে পেরেছেন কেবল পাঁচজন- অস্ট্রেলিয়ার স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জজর্ হ্যাডলি আর ব্রায়ান লারা, ভারতের ভিনু মানকড় আর বিরেন্দর শেবাগ। শুধু রানেই সবার ওপরে নয়, মিনিট আর বলের হিসেবেও মুশফিকের ইনিংসটি এখন বাংলাদেশের টেস্ট ইনিংসগুলোর চ‚ড়ায়। ২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ১৪৫ রানের ইনিংস খেলতে আমিনুল ইসলাম বুলবুল উইকেটে কাটিয়ে দিয়েছিলেন ৫৩৫ মিনিট। টেস্টে টাইগাররা ১৯ বছরে পা রাখার পর সেটিকে পেছনে ফেললেন মুশফিক। ২১৯ রানের ইনিংসটি খেলতে তিনি উইকেটে ছিলেন ৫৮৯ মিনিট। অথার্ৎ প্রায় ১০ ঘণ্টা! বলের হিসেবে সবচেয়ে বড় ইনিংসের রেকডর্ খুব পুরানো নয়। ওই ইনিংসটা খুব কাছ থেকেই দেখেছিলেন মুশফিক। গলে শ্রীলংকার বিপক্ষে যে ইনিংসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি, সেটিতেই ১৯০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। তিনি মোকাবেলা করেছিলেন ৪১৭ বল, তাকে পেছনে ফেলে মিরপুর টেস্টে মুশফিক খেলেছেন ৪২১ বল। এতগুলো বল মোকাবেলা করার পথে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন অষ্টম উইকেট জুটিতে ১৪৪ রান তুলেছেন মুশফিক। এই উইকেটে এটাই এখন বাংলাদেশের সবোর্চ্চ জুটির নতুন রেকডর্। আগের রেকডের্ও ছিল মুশফিকের নাম। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে নাঈম ইসলামের সঙ্গে ১১৩ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। শেষ বিকেলে টাইগাররা ইনিংস ঘোষণা না করলে আরও বড় কীতিের্ত নাম উঠতে পারত মুশফিকের। কিপার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবোর্চ্চ ইনিংসের মালিক হওয়ার হাতছানি ছিল তার সামনে। ২৩২ রান করে রেকডের্র মালিক হয়ে থাকা অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার তো খুব একটা এগিয়ে ছিলেন না। ওটা নিয়ে মুশফিকের সামান্য আক্ষেপ থাকলে থাকতেও পারে। তবে যে মহাকাব্য তিনি লিখেছেন মিরপুরের ২২ গজে, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে তা চিরস্মরণীয় হয়েই থাকবে। টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যক্তিগত সবোর্চ্চ মুশফিকুর রহিম ২১৯* প্রতিপক্ষ: জিম্বাবুয়ে মিরপুর, ২০১৮ সাকিব আল হাসান ২১৭ প্রতিপক্ষ: নিউজিল্যান্ড ওয়েলিংটন, ২০১৭ তামিম ইকবাল ২০৬ প্রতিপক্ষ: পাকিস্তান খুলনা, ২০১৫