সাকিব-এনামুলের পর তাইজুল

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সাকিব ভাই না থাকায় একটু বেশি বোলিংয়ের সুযোগ পাচ্ছি। সাকিব ভাই থাকলে হয়তো আমার ওপর এত দায়িত্ব পড়ত না। Ñ তাইজুল ইসলাম
মেহেদী হাসান মিরাজের রাউন্ড দ্য উইকেটে করা বল ¯øগ সুইপ করলেন ব্রেন্ডন টেলর। হাওয়ায় ভেসে বল যাচ্ছিল সীমানার দিকে। কিছুটা এগিয়ে থাকা তাইজুল ইসলাম নিজেকে সামলে নিয়ে ঝঁাপিয়ে পড়ে দারুণ দক্ষতায় সেই বল তালুবন্দি করলেন। অসাধারণ এক ক্যাচে টেলরের বিদায়, জিম্বাবুয়েরও আশার সমাধি। দুদার্ন্ত এই ক্যাচই মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিনে তাইজুল কীতির্র শেষ নয়। সিলেটের মতো মিরপুরেও বল হাতে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের নাচিয়ে ছেড়েছেন এই স্পিনার। টানা তিন ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার কীতির্ গড়েছেন তাইজুল। ভাগ বসিয়েছেন সাকিব আল হাসান আর এনামুল হক জুনিয়রের কীতিের্ত। টানা তিন ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়া এই ত্রয়ীর মাঝে দারুণ মিল আরও এক জায়গায়Ñ তিনজনই বঁাহাতি স্পিনার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে তাইজুল নেন ৬ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫টি। প্রথমবার ১০ উইকেট নেয়ার ম্যাচটি অবশ্য সুখকর ছিল না তাইজুলের জন্য। ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যথর্তায় ম্যাচটি হেরে যায় বাংলাদেশ। মিরপুরে এবার ব্যাটসম্যানরা ছন্দে ফিরেছেন, গড়েছেন রানের পাহাড়। তাইজুল ধরে রেখেছেন তার ছন্দ। আরও একবার মেতেছেন ৫ উইকেট নেয়ার আনন্দে। সবমিলিয়ে টেস্টে ষষ্ঠবারের মতো ইনিংসে পঁাচ উইকেট নিলেন ২৬ বছর বয়সী এই স্পিনার। ৪ বছর আগে মিরপুরে একাই দিয়েছিলেন ধসিয়ে জিম্বাবুয়েকে। বাংলাদেশ সেরা বোলিং ইনিংসে (৮/৩৯) উৎসবের উপলক্ষ এনে দিয়েছিলেন তিনি। সেই জিম্বাবুয়েকে পেয়ে এবার নিজেকে ভালোই চেনাচ্ছেন এই বঁাহাতি। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ২০০৫ সালে টানা তিন ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার কীতিের্ত নাম লিখিয়েছেন এনামুল জুনিয়র। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ইনিংসে তার শিকার ছিল ১৮ উইকেট। তিন বছর পর ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এনামুলের কীতিের্ত ভাগ বসান সাকিব। তিন ইনিংসে নেন ১৬ উইকেট। টানা ৫ উইকেট শিকারের গৌরবে সাকিব-এনামুলের পাশে এদিন বসল তাইজুলের নাম। সুযোগ থাকছে ছাড়িয়ে যাওয়ারও। মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেই তাদের ছাড়িয়ে গেলে তাইজুলের ঘূণিের্ত ভর করেই ম্যাচ জেতার স্বপ্ন দেখতে পারে বাংলাদেশ। সাকিব নেই বলে বাংলাদেশ দলের বোলিং আক্রমণে তাইজুলই সবচেয়ে অভিজ্ঞ। স্পটলাইটটা পড়েছে এই বঁাহাতি স্পিনারের উপর। উইকেট রহস্যময় তো হাসবেন তাইজুল। বারবার এমন বৈশিষ্ট্যেই হাজির করেছেন নিজেকে। চলমান ঢাকা টেস্টেও বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে তিনিই হিরো। ইনজুরির কারণে সাকিব দলে না থাকায় দলের সবচেয়ে সিনিয়র বোলার তাইজুলের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাইজুল নিজেই স্বীকার করলেন তা, ‘সাকিব ভাই না থাকায় একটু বেশি বোলিংয়ের সুযোগ পাচ্ছি। সাকিব ভাই থাকলে হয়তো আমার ওপর এত দায়িত্ব পড়ত না।’ ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে সিলেট টেস্ট জেতাতে পারেননি তাইজুল। তবে ঢাকা টেস্টে বদলার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি, ‘আমরা এখন ভালো অবস্থানে আছি। আমার কাছে মনে হয় আমরা ভালো অবস্থানে দঁাড়িয়ে আছি। আমরা যাই করি না কেন (ফলোঅন) ভালো করলে ফলাফল ইতিবাচক হবে। চতুথর্ ও পঞ্চম দিন তো আছেই। উইকেট যত সময় যাবে তত খারাপ হবে।’ আর তাইজুল নিজের সাফল্যে নয়, উদ্ভাসিত হতে চান দলের সাফল্যে, ‘ভালো পারফরম্যান্স করলে প্রতিটা ক্রিকেটারের ভালো লাগে। তবে দলটা আগে। দলটা এখন ভালো অবস্থানে আছে।’ ঢাকা টেস্টের চতুথর্ দিনের সকালে ব্যাট করতে নামবে কারা? সিদ্ধান্তটা বাংলাদেশের উপর নিভর্র করছে। চাইলে নিজেরা করতে পারে ব্যাট, অথবা আমন্ত্রণ জানাতে পারে জিম্বাবুয়েকে। প্রথম ইনিংসে ২১৮ রানের লিড নিয়ে সফরকারীদের ফলোঅনে ফেলার এই স্বাধীনতা পাচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও দলের মাঝে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি জানা যায়নি। তাইজুলও জানাতে পারেননি কিছু। শুধু বললেন, ‘এটা নিয়ে কোনো কথা হয়নি।’ ক্রিকেটের রীতি অনুযায়ী দিনের সকালে ম্যাচ অফিসিয়ালদের জানালেই হল সিদ্ধান্তের কথা। সেই কৌশলেই যাচ্ছে বাংলাদেশ। চতুথর্ দিনের সকালেই জিম্বাবুয়ে জানতে পারবে তারা বোলিং করবে নাকি ব্যাটিং। কৌশলটা এমন, যাতে আগের রাতে পরিকল্পনা সাজাতে না পারে প্রতিপক্ষ!