অবশেষে অপেক্ষা ঘুচল মাহমুদউল্লাহর

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
রানের জন্য ছুটছেন মাহমুদউল্লাহ আর মোহাম্মদ মিঠুন। তাদের ১১৮ রানের জুটিতেই বিপযর্য় কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ Ñবিসিবি
ব্রেন্ডন মাভুতার করা বলটি এক্সট্রা কাভারে ঠেলেই ছুটলেন মাহমুদউল্লাহ, একটি রান পূণর্ হতেই ঘুচে গেল এই ব্যাটসম্যানের অপেক্ষা। টেস্টে আরেকটি সেঞ্চুরি পেলেন, ২০১০ সালের পর! উদযাপনটা করলেন শূন্যে লাফিয়ে। সুদীঘর্ আট বছর পর পাওয়া সেঞ্চুরির উদযাপনে মিশে থাকল চাপ মুক্তির স্বস্তি। সেটি যেমন দলকে চাপ থেকে মুক্ত করার, তেমনি নিজের ওপর থাকা চাপও। জিম্বাবুয়ের কাছে সিলেট টেস্টে বড় হারের পর মিরপুর টেস্ট শুরু হয়েছিল অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে রেখে। সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা ছিলÑ বাংলাদেশ সিরিজ বঁাচাতে পারবে তো? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজ। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে আরও যে প্রশ্নগুলো ছিল সেগুলোর সবটার উত্তর মেলেনি। তবে সেই দলে নন মাহমুদউল্লাহ। তার ফমর্ নিয়ে যে প্রশ্ন দানা বঁাধছিল, দারুণ সেঞ্চুরিতেই সেটা দূরে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে হাসছিল না মাহমুদউল্লাহ ব্যাট। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৮৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এর পরের আট ইনিংসে ছিলেন চরম ব্যথর্। তবে এই ডানহাতি প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন, দ্রæতই ছন্দে ফিরবেন। সেই প্রতিশ্রæতি তিনি রক্ষা করেছেন। প্রবল চাপের মুখ থেকে দলকে টেনে তোলার পথে খেলেছেন ১০১ রানের হার না মানা ইনিংস। ওই ইনিংসেই মাহমুদউল্লাহ কাটিয়েছেন টেস্টে তার সেঞ্চুরিখরা। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সেটা ছিল তার পঞ্চম টেস্ট। এর পরের ৩৫ টেস্টে সেঞ্চুরির সঙ্গে আড়ি! অবশেষে ৪১তম টেস্টে এসে সেটা কাটল। সেটাও দলের দুঃসময়ে। এই টেস্ট শুরুর আগে মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চান দলকে। মুখের কথাটা কাজেও করে দেখালেন তিনি। জিম্বাবুয়েকে ফলোঅন না করিয়ে চতুথর্ দিনের সকালে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ১০ রানের মধ্যেই সাজঘরে ফেরেন টপঅডাের্রর তিন ব্যাটসম্যান। এরপর ২৫ রানের মাথা পড়ে চতুথর্ উইকেট। মোহাম্মদ মিঠুনকে ১১৮ রানের জুটি গড়ে সেই বিপযর্য় থেকে দলকে টেনে তোলেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর মিরাজের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে গড়েন ৭৩ রানের জুটি, দলকে পাড় করান ২০০ রানের গÐি। পূণর্ করেন সেঞ্চুরি। ১২২ বলে ৪টি চার আর ২টি ছক্কায় ১০১ রান। সেঞ্চুরিটা পূণর্ হতেই ইনিংস ঘোষণা করে দেন দলপতি মাহমুদউল্লাহ। স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়েন। দলকে বড় লিড পাইয়ে দেয়ার স্বস্তি, সেঞ্চুরি পাওয়ার স্বস্তি। দুদিন আগেই মুশফিকুর রহিম বলেছিলেন, মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে পাওয়া সেঞ্চুরি বাংলাদেশের সব ক্রিকেটারের কাছেই বিশেষ, মাহমুদউল্লাহর জন্য তা যেন আরও বিশেষকিছু। দেশের মাটিতে এটাই যে তার প্রথম সেঞ্চুরি। দেশের মাটিতে মাহমুদউল্লাহ প্রথম কেবল টেস্টেই নয়, যেকোনো ফরম্যাটে। ওয়ানডেতে তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছে ৩টি সেঞ্চুরি, কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই দেশের মাটিতে নয়। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের মাটিতে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৫ বিশ্বকাপে পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি হঁাকিয়েছিলেন। এরপর গত বছর ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেঞ্চুরি হঁাকিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আন্তজাির্তক ক্যারিয়ারের পঞ্চম, আট বছর অপেক্ষার পর টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি মাহমুদউল্লাহ পেলেন দেশের মাটিতে, সেটা তো বিশেষ হবেই। তবে তার ওই ইনিংসটা পূণর্তা পাবে, যদি মিরপুর টেস্টে জয় পায় বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে ‘অধিনায়ক’ মাহমুদউল্লাহও পাবেন প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ।