অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
ঘরোয়া ফুটবলে একটা সময় দারুণ আধিপত্য ছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের। জাতীয় দলের অসংখ্য ফুটবলার তৈরি হয়েছে এই ক্লাবেই। অথচ অর্থ সংকটে গত কয়েক মৌসুম ধরে মানসম্পন্ন দল গঠন করতে পারছে না তারা। পেশাদার ফুটবলে একটি ক্লাবের যে সব সুযোগ বাধ্যতামূলক ভাবে থাকার কথা, তার কিছুই নেই এই ক্লাবটির। ধুকতে থাকা এই ক্লাব এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নামের সঙ্গে জড়িত যেই ক্লাব। অর্থের অভাবে সেই ক্লাবটিরই কিনা এই দুরবস্থা! বাংলাদেশের ফুটবলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের রয়েছে বিশাল ইতিহাস। বাংলাদেশে যে ক'টি পুরাতন ক্লাব রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম এই ক্লাবটি। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটি বর্তমানে দুরবস্থায় থাকলেও একসময় সামনের সারির ক্লাবগুলোর সঙ্গে সমানে লড়াই করত। এই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র থেকেই বের হয়ে এসেই বাংলাদেশ জাতীয় দলে আলো ছড়িয়েছেন বহু ফুটবলার। ১৯৯০-২০০৫ সাল পর্যন্ত ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দারুণ সফল ছিল ক্লাবটি। ১৯৯৪, ২০০১ ও ২০০৩ সালের ফেডারেশন কাপের শিরোপা জয়ের পাশাপাশি ২০০৩ সালের আরেক টুর্নামেন্ট জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপেরও শিরোপা জেতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ১৯৯৭-৯৮ ও ২০০০ সালের চ্যাম্পিয়ন তারা। ফুটবল লিগ পেশাদার যুগে প্রবেশের পরও দু'বার রানার্সআপ হয় তারা। ২০১০-১১ এবং ২০১২ সালে পর পর দু'বার রানার্সআপ হয় মুক্তিযোদ্ধা। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও সাফল্যের সাক্ষর রেখেছে তারা। ১৯৯২ সালে সিকিম গোল্ড কাপেও রানার্সআপ হয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। ১৯৯৮ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত ম্যাকডয়েল কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা বাংলাদেশে নিয়ে আসে মুক্তিযোদ্ধা, একই বছরে ভারতেই স্বাধীনতা দিবস কাপে রানার্সআপ হয়। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, এএফসি কাপে ও এশিয়ান উইনার্স কাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ক্লাবটি। যেই ক্লাবটির ফুটবল ইতিহাস এতো সমৃদ্ধ। অর্থের অভাবে আজ তারাই কোন রকম দল গড়ে টিকে থাকছে পেশাদার ফুটবলে। নতুন মৌসুমের জন্য গড়া দলেও নেই তেমন কোনো বড় নামের ফুটবলার। চার বিদেশি ফুটবলারের মধ্যে আছেন গিনির ইউনুসা কামারা, মিশরের সালসাদিন শামস ও দুই জাপানিজ টেটসু ও সোমা। স্থানীয় ফুটবলারদের মধ্যে উলেস্নখ করার মতো তেমন কোন বড় নাম নেই। এই দল নিয়ে স্বাধীনতা কাপের গ্রম্নপ পর্বও পার হতে পারেনি এবার। খারাপ মাঠে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফেডারেশন কাপ বর্জন করে ৫ লাখ টাকা জরিমানাও গুণতে হয়েছে। সেই সঙ্গে পরবর্তী ফেডারেশন কাপে খেলার যোগ্যতাও হারিয়েছে তারা। গত মৌসুমেও প্রিমিয়ার লিগে কোনো রকমে রেলিগেশন এড়ায় দলটি। ১৩ দলের মধ্যে দশম হয়ে মৌসুম শেষ করে তারা। লিগে ২৪ ম্যাচে মাত্র ৪টি জয়ের দেখা পেয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা। ৭টি ম্যাচে ড্র করতে পেরেছিল আর বাকি ১৩টি ম্যাচে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। যার পেছনেও দায়ী ছিল মুক্তিযোদ্ধার আর্থিক দৈন্য। গত মৌসুমে দল গঠনেই বড় সমস্যায় পড়ে গিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা। শেষে দলের জাপানি ফুটবলার ইউসুকে কাতোর সহায়তায় সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানির স্পন্সরে দল গঠন করে লিগে অংশ নেয়। তবে নতুন মৌসুমে আবারও ধার দেনায় জর্জরিত ক্লাবটি পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। স্পন্সর না পাওয়াতে এবারও ঠিকমতো ফুটবলারদের বেতন দেওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। লিগের আগে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারলে এবারও হয়তো অবনমন থেকে বেঁচে থাকার লক্ষ্য নিয়েই খেলতে হবে দলটিকে।