ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু আগামীকাল

এবার ঘুরে দঁাড়াতে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলনে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। আগামীকাল এই মাঠেই সিরিজের প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবেন তারা Ñবিসিবি
সোনালি সময় পেছনে ফেলে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট। তবে ক্যারিবীয়রা এখনো সমীহ জাগানীয়া দল, অন্তত বাংলাদেশের কাছে তো বটেই। হিসাবটা যদি কেবল টেস্ট ক্রিকেটের হয়, দলটির বিপক্ষে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অতীত রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দেয়ার মতোই! সবশেষ সাত টেস্টে ক্যারিবীয়দের সামনে মাথা তুলেই দঁাড়াতে পারেনি টাইগাররা, বাজে পারফরম্যান্সে প্রতিটি টেস্টেই হার দেখতে হয়েছে। এমতাবস্থায় আরেকটি টেস্ট সিরিজ যখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে, তখন অবধারিতভাবে প্রশ্নটা সামনে আসছেÑ হতাশার অতীত ভুলে এবার ঘুরে দঁাড়াতে পারবে বাংলাদেশ? চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে (সাগরিকা) আগামীকাল দুই টেস্টের সিরিজের প্রথমটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ওই টেস্টের জন্য জোরেশোরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাগতিকরা। মঙ্গলবারও সাগরিকায় স্টিভ রোডসের শিষ্যরা ঘাম ঝরিয়েছে। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা ক্যারিবীয় চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত করেছেন নিজেদের। তাছাড়া প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুন, সাদমান ইসলাম, নাঈম হাসানরাও যোগ দিয়েছেন শিবিরে। ফলে মঙ্গলবার পুরো দলকেই অনুশীলনে পেয়েছেন রোডস। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সাম্ভাব্য সেরা দলটা নিয়েই মাঠে নামতে চাইছে বাংলাদেশ। চোটের কারণে তারকা ওপেনার তামিম ইকবালকে পাওয়া না গেলেও দলে ফেরানো হয়েছে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে। যদিও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ম্যাচ ফিটনেস নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে। এরপরও সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে আগামীকাল সকালে ভারপ্রাপ্ত ক্যারিবীয় দলপতি ক্রেইগ ব্রেথওয়েটের সঙ্গে সাগরিকায় টস করতে নামবেন সাকিবই। ব্যতিক্রম কিছু হলে মাহমুদউল্লাহ তো আছেনই। মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বেই মিরপুরে কদিন আগে জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সিলেটে সিরিজের প্রথম টেস্টে বড় ব্যবধানে হার দেখতে হয়েছিল তাদের। সাদা পোশাকে টাইগারদের অধারাবাহিক পারফরম্যান্সের প্রতীকী চিত্রই যেন সদ্য শেষ হওয়া সিরিজটি! টেস্ট ক্রিকেটে ১৮ বছর পেরিয়ে এসেও ফরম্যাটটার সঙ্গে এখনো ঠিক সখ্য গড়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের মতো দলও তাই নাকানি-চুবানি খাইয়ে যায়। টেস্ট ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের থেকে শক্তিতে অনেকটাই এগিয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাই বাংলাদেশে পা রেখেছে আরও একটি সিরিজ জয়ের আশা নিয়ে। সদ্য ভারত সফর করে বাংলাদেশে আসা ক্যারিবীয়রা অবশ্য টাইগারদের খাটো করে দেখার দুঃসাহস দেখাচ্ছে না। দলটির ভারপ্রাপ্ত কোচ নিক পোথাস তো মনে করছেন, সিরিজটা বেশ প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূণর্ হবে। চলতি বছর টেস্টে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স কিন্তু তেমন কিছুর আভাস দিচ্ছে না। এ বছর ৬টি টেস্ট খেলে ৪টিতেই হেরেছে টাইগাররা, হেরেছে বেশ বাজেভাবে। জুলাইয়ে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেই দুই টেস্টের সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছে তারা। একটিতে হেরেছে ইনিংস এবং ২১৯ রানে, অপরটিতে ১৬৬ রানে। ওই সিরিজটা হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে, এবার টাইগাররা খেলবে নিজেদের ডেড়ায়। তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছেÑ নিজেদের মাঠে পঁাচবার ক্যারিবীয়দের মুখোমুখি হয়ে জয় দেখেনি তারা। তিন হারের বিপরীতে দুটো ম্যাচ ড্র করেছে। ড্র হওয়া ওই টেস্ট দুটো আবার টাইগাররা খেলেছে চট্টগ্রামের মাটিতেই। এমননিতেই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্বাগতিকদের জন্য পয়া ভেন্যু, নিজেদের আঙিনায় এবার তাই ক্যারিবীয়দের হারানোর সেরা সুযোগই দেখছে তারা। সেই সুযোগটা কাজে লাগানো গেলে ২০০৯ সালের পর আরও একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পাবে বাংলাদেশ। সিরিজটা অবশ্য বাংলাদেশের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। বিশেষ করে, ক্যারিবীয়দের পেস আক্রমণটা বড় চ্যালেঞ্জ টাইগারদের জন্য। চোটের কারণে নিয়মিত অধিনায়ক এবং সেরা পেসার জেসন হোল্ডারকে দেশে রেখে এলেও শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কোমো পলদের মতো গতি-তারকারা আছে ক্যারিবীয় দলে। পেসেই বাংলাদেশকে ঘায়েলের ছক কষছে অতিথিরা। অন্যদিকে, ক্যারিবীয়দের বধ করতে স্বাগতিকরা শান দিচ্ছে নিজেদের স্পিন অস্ত্রে। ১৪ সদস্যের স্কোয়াডে ৪ স্পিনারের উপস্থিতি বলে দিচ্ছেÑ সাগরিকার উইকেট স্পিন সহায়কই হবে। উইকেট যেমনই হোক, লড়াইটা আসলে ক্যারিবীয় পেস আর টাইগার স্পিনেরই। তবে বোলাররা লড়াই করতে পারবে তখনই, যখন ব্যাটসম্যানরা স্কোরবোডের্ পযর্ন্ত রান জমা করতে পারবেন। সবশেষ টেস্টের তিন সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক-মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহদের তাই বাড়তি দৃষ্টি থাকছে। দৃষ্টি থাকবে দলে ফেরা ওপেনার সৌম্য সরকারের দিকেও। তামিমের অনুপস্থিতিতে ওপেনিং নিয়ে যে সমস্যায় ভুগছে টাইগার শিবির, ছন্দে থাকা সৌম্যর ব্যাট সেই সমস্যা দূর করবে, এমনই প্রত্যাশা তাদের। সকলের প্রত্যাশা লাল বলের ক্রিকেটে ছন্দে ফিরবেন আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েসও। প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো খেলে সাদমান ইসলাম অগত্যা টেস্ট স্কোয়াডে ঢুকে গেলেও চট্টগ্রামে ইমরুল-সৌম্যরই ইনিংসের সূচনায় নামার কথা। তবে দলে সাকিব ফেরায় মিডল অডার্র নিয়ে মধুর সমস্যায় পড়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। দুই ‘নতুন’ মোহাম্মদ মিঠুন আর আরিফুল হকের মধ্য থেকে একজনকে বাদ দিতে হবে। মিঠুন মিরপুর টেস্টে দারুণ এক হাফসেঞ্চুরি হঁাকিয়েছেন, সিলেট টেস্টে দলের ব্যাটিং বিপযের্য়র মধ্যেও লড়াইয়ের মানসিকতা দেখিয়েছেন আরিফুল। সুযোগটা তাই দুজনেরই প্রাপ্য। অন্যদিকে, সাকিব ফেরায় চাপমুক্ত হতে পারছেন বাহাতি স্পিনে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের নাকানি-চুবানি খাওয়ানো তাইজুল ইসলাম। চাপমুক্ত হয়ে তাইজুল আরও একবার তার সেরা পারফরম্যান্সটা দেখাবেন, ছন্দ ধরে রাখবেন মেহেদী হাসান মিরাজ; ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও দলের কান্ডারি হওয়ার জন্য অধিনায়ক সাকিব তো আছেনই। দুই পেসার মুস্তাফিজ-খালেদও তৈরি ক্যারিবীয়দের চ্যালেঞ্জ জানাতে। অতিথিদের চ্যালেঞ্জ জানাতে তৈরি বাংলাদেশও।