শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভালো করার জেদ থেকেই রান পাচ্ছেন মুশফিক

ম ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২৫ মে ২০২২, ০০:০০
সেঞ্চুরি করার পর উচ্ছ্বসিত মুশফিকুর রহিম

দক্ষিণ আফ্রিকায় তার ব্যাট হাসেনি। আউটের ধরনে হয়েছিলেন সমালোচিত। বাংলাদেশের এই ব্যাটিং স্তম্ভকে নিয়ে কত আলোচনা। কিন্তু সেই আলোচনা ও সমালোচনার জবাব দিয়েছেন শ্রীলংকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে। সেখানেই শেষ নয়, চট্টগ্রামের পর ঢাকাতেও মুশফিকের সেঞ্চুরি। সব কিছুকে পেছনে ফেলে মুশফিক এখন দারুণ ছন্দে। ভালো করার জেদ থেকেই তার ব্যাটে এমন রান ফোয়ারা।

ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনেই দল ছিল খাদের কিনারায়। ২৪ রান তুলতেই নেই ৫ উইকেট। ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলার লড়াই শুরু মুশফিকুর রহিমের। পাশে পেলেন লিটন দাসকে। দু'জনের মহাকাব্যিক দুই সেঞ্চুরিতে হলো ইতিহাস। বিশ্বরেকর্ড গড়া জুটিতে উজ্জ্বল মুশফিক ও লিটন। এমন পরিস্থিতিতে মুশফিক অনেকবারই দলকে উদ্ধার করেছেন, প্রতি আক্রমণে প্রতিপক্ষকে নাড়িয়ে দিয়েছেন। নিজের রান নিয়ে

গেছেন চূড়ায়, দলের অবস্থান করেছেন শক্তিশালী। দলের সংগ্রহ ৩৬৫, মুশফিকের অপরাজিত ১৭৫।

অথচ এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই ব্যাটিং করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। মুশফিক ঠিক উল্টো। দলের বিপর্যয়ে হাল ধরে এগিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ভালোবাসেন। দ্বিতীয় দিন মাঠে নামার আগে সেই কথাই শোনালেন মুশফিক।

মুশফিক বলেছেন, 'সত্যি বলতে আমি এই ধরনের চ্যালেঞ্জ উপভোগ করি। বিশেষ করে দল যখন আমার থেকে রান প্রত্যাশা করে। আমি জানতাম এক ঘণ্টা পর উইকেট খেলার মতো হয়ে যাবে। যেটা আমরা প্রথম ঘণ্টায় পারিনি। লিটন পুরো ইনিংসটি খুব ভালোভাবে সাজিয়েছে। এক-দেড় বছরে লিটন অসাধারণ ফর্মে আছে। আমি জানতাম টিকে থাকলে রান আসবে। এজন্য বেসিক ক্রিকেটে মনোযোগ দিয়েছি। আমরা জানতাম, একটা ৫০ রানের বেশি জুটি হলে ভালো করতে পারব।'

মিরপুর শেরেবাংলায় মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিন মাঠে নামার আগে সেই গল্প শোনালেন মুশফিক, 'দক্ষিণ আফ্রিকায় হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর আমি এখানে ভালো করতে চেয়েছিলাম। কাজটা কিন্তু সহজ নয় যখন আপনি বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। কারণ আপনার থেকে অনেক বেশি রান প্রত্যাশা করছে সবাই। আমি মনে করি আমি চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সিরিজে তেমন রান করতে পারিনি। আমি নিশ্চিত ছিলাম, যদি আমার প্রক্রিয়ায় স্থির থাকি, আমার বেসিক নিয়ে কাজ করি তাহলে আমি দ্রম্নতই রানে ফিরতে পারব। সেটাই এই সিরিজে হয়েছে।'

দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে মুশফিক ছিলেন না চেনা ছন্দে। দুই টেস্টে চার ইনিংসে পেয়েছেন মাত্র এক ফিফটি। তিনটিতে দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতেও পারেননি। ফিফটি ছোঁয়া একমাত্র ইনিংসটিতেই মুশফিক নিজের উইকেট রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। এর আগে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দুই ইনিংসে তার রান ছিল ৯ ও ১১। প্রোটিয়াদের মাটিতে রান না পাওয়া মুশফিকের ব্যাট হাসেনি ঢাকা লিগেও। চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে চার ম্যাচে করেছেন মাত্র ৮৭ রান।

রানে ফিরতে মুশফিক শরণাপন্ন হয়েছিলেন 'শৈশবের গুরু ফাহিম স্যার' খ্যাত নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে। ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার আগে তাকে নিয়ে মিরপুরে অনুশীলন করেন। তাতে মিলেছে সুফল। সঙ্গে কোচ জেমি সিডন্স ও রাসেল ডমিঙ্গো অনুপ্রেরণায় আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন মুশফিক, 'খুব ছোট ও সুক্ষ্ণ বিষয় নিয়ে আমি আমার শৈশব গুরু ফাহিম স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। সেটা আমাকে দারুণ সাহায্য করেছে। এছাড়া জেমি সিডন্স ও রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গেও কাজ করা হয়েছে। কিছু জায়গায় কাজ করেছি যেগুলো আমাকে সাহায্য করেছে।'

স্কিলে ছোটখাটো কাজ করলেও মাঠের বাইরের কোচদের অনুপ্রেরণা মুশফিককে এগিয়ে নিয়েছে বহু দূর। তিনি বলেছেন, 'দিন শেষে তারা প্রত্যেকে আমাকে সমর্থন করে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তারা বলেছেন, 'তুমি এই দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়।' এটাও আমার আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। আপনি যদি রান নাও করেন তবুও কোচরা যখন বলবে আপনি অতি গুরুত্বপূর্ণ তখন ভালো কিছু চিন্তা করার সুযোগ পাবেন।'

চট্টগ্রামে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ৫ হাজার রান পেরিয়ে গেছেন মুশফিক। তার বিশ্বাস এই পথে হাঁটবে আরও অনেকেই, 'প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৫ হাজার রান করা সত্যিই বিশাল পাওয়া। আমি মনে করি না শুধু আমিই এখানে থাকব। আরও অনেকেই যোগ দেবে। তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে আমি টেস্ট ক্রিকেটকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটে এই কীর্তি করায় আমি সেই সময়টা উপভোগ করেছি। ম্যাচটা জিততে পারলে আমার অর্জনটা আরও স্পেশাল হতো।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে