শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিমির কীর্তি এশিয়ার কারও নেই!

ম ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২৫ মে ২০২২, ০০:০০
বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমি -ওয়েবসাইট

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় একাদশ এশিয়া কাপ হকি শুরু হয়েছে সোমবার। প্রথম দিনে বাংলাদেশ খেলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। এই ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমি গড়েছেন অনন্য এক রেকর্ড। জিমির দাবি- এশিয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি খেললেন 'ষষ্ঠ এশিয়া কাপ হকি'।

এশিয়া কাপে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে। সেটিই ছিল তার জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক আসর। প্রথম ম্যাচ তিনি খেলেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। মজার বিষয় হলো বাবা আবদুর রাজ্জাক সোনা মিয়ার হাত ধরেই তার জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল। ওই এশিয়া কাপে সোনা মিয়া ছিলেন জিমিদের কোচ। ২০০৩ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে শুরু করে ভারতের চেন্নাই, মালয়েশিয়ার কুয়ানতান ও ইপো এবং বাংলাদেশের ঢাকা হয়ে জিমি নিজের ষষ্ঠ এশিয়া কাপ খেলছেন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও কোচ মাহবুব হারুন বলেছেন, 'জিমি ১৯ বছর ধরে জাতীয় দলে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। আমার জানা মতে, এশিয়ার তো কেউ নয়ই, ইউরোপের কোনো খেলোয়াড়ও এতদিন হকির জাতীয় দলে সার্ভিস দিতে পারেননি। এত বছর জাতীয় দলে খেলা অসাধারণ একটা বিষয়। এশিয়া কাপের ৬ আসর খেলার রেকর্ড তো অবশ্যই আর কারও নেই।'

জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক আরিফুল হক প্রিন্সের দাবি, 'আমি এই অঞ্চলেরই নয়, এশিয়ার হকি খেলোয়াড়দেরও খোঁজ-খবর রাখি। আমি শতভাগ নিশ্চিত কোনো হকি খেলোয়াড়ের ৬টি এশিয়া কাপ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। বড়জোড় কারও দুই তিনটা হতে পারে।'

এতদিন জাতীয় দলে খেলা কী করে সম্ভব হলো? সেই রহস্যের ঝাঁপিও খুলে দিলেন রাসেল মাহমুদ জিমি। জাকার্তা থেকে বললেন, '১৯ বছর ধরে খেলি। প্রথমে আমি বলব এটা বাবা-মার দোয়া। ফিটনেস ধরে রেখেছি। খেলায় নিবেদিত ছিলাম। আমার প্রতিজ্ঞা ছিল- যতদিন খেলব নিজের সেরাটা খেলব। নিজের ফিটনেস যতদিন থাকবে ততদিন খেলে যাব।'

এই যে এত বড় অর্জন আপনার কেমন অনুভূতি? 'অবশ্যই ভালো লাগছে। আমি রেকর্ডের কথা এএইচএফকে জানালাম, তারা অবাক হলেন। তারা বলছিলেন এত বছর জাতীয় দলে খেলা যায় আমরা কখনো দেখিনি। ১৯-২০ বছর কাউকে কন্টিনিউ করতে দেখিনি। এ কথাগুলো শুনে আমার খুব গর্ব হচ্ছিল। নিজের দেশের হকির জন্য এতদিন খেলতে পেরেছি। বলতে গেলে জীবনের অর্ধেক' - বলছিলেন জিমি।

আপনার বাবার হাত ধরে জাতীয় দলে ২০০৩ সালে অভিষেক। সেই এশিয়া কাপে শুরু করে সম্ভবত এবার শেষ এশিয়া কাপ খেলছেন। আপনার বাবা থাকলে নিশ্চয়ই অনেক বেশি খুশি হতেন। জিমি বলছিলেন,? 'আজ আমার বাবাকে বেশি মনে পড়ছে। অবশ্যই তিনি থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন, ফোন দিয়ে অভিনন্দিত করতেন। এ বছর বাবা জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার (২০১৬ সালের জন্য) পেয়েছেন। তিনি বেঁচে থাকলে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার ও আমার এই অর্জনে অনেক খুশি হতেন। আমি এই অর্জন বাবাকে উৎসর্গ করছি।'

আর কতদিন জাতীয় দলে খেলতে চান? জিমির জবাব, 'যতদিন ফিটনেস ধরে রাখতে পারব ততদিনই খেলে যাব। তবে ইচ্ছা আছে আগামী এশিয়ান গেমসে খেলে ইতি টানার। সে ক্ষেত্রে এটাই হবে আমার শেষ এশিয়া কাপ। পরের এশিয়া কাপ চার বছর পর। হয়তো আমার পক্ষে আর খেলা সম্ভব নাও হতে পারে।'

দীর্ঘ ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে পারফরম্যান্সের কারণে কখনো জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েননি জিমি। কেবল ২০১৪ সালে তিনি শৃঙ্খলাজনিত কারণে এক বছর নিষিদ্ধ ছিলেন। ওই বছর তিনি খেলতে পারেননি ইনচন এশিয়ান গেমসে। ৬টি এশিয়া কাপের মধ্যে দুইবার অধিনায়কত্বও করেছেন রাসেল মাহমুদ জিমি। দুটি হ্যাটট্রিকও আছে তার। ২০০৭ সালে চেন্নাই এশিয়া কাপে তিনি হ্যাটট্রিক করেছিলেন হংকং ও থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। ম্যাচ অব দ্য ম্যাচও হয়েছিলেন দুইবার। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ও শেষ এশিয়া কাপটা কি হলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে? জিমি বলছিলেন, 'আমরা সাধারণত ষষ্ঠ বা সপ্তম হয়ে এশিয়া কাপ শেষ করি। এবার যদি পঞ্চম হয়ে শেষ করতে পারি সেটা হবে আমার রেকর্ডের ও শেষ এশিয়া কাপের বড় অর্জন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে