রঙিন পোশাকেও মিরাজ ম্যাজিক

নতুন বল হাতে পেয়ে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের উপর ছড়ি ঘোরান মিরাজ। সাজঘরে পাঠান প্রথম সারির চার ব্যাটসম্যানকে। ২৬তম ওভারেই বোলিং কোটা পূণর্ করেছেন। ১০ ওভারে ২৯ রানে ৪ উইকেট নেন এ অফস্পিনার। যেটা ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা যখনই পাখা মেলতে শুরু করেন, তুরুপের তাস হয়ে ওঠা মেহেদী হাসান মিরাজকে প্রয়োজন পড়ে তখনই। সিলেট আন্তজাির্তক স্টেডিয়ামে সিরিজনিধার্রণী ম্যাচে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে আঘাত হানতে বারবার তাকেই দরকার পড়ল মাশরাফি বিন মতুর্জার। প্রতিদানে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিংটাই করে ফেললেন টাইগার অলরাউন্ডার। বোলিংয়ে এলেন দ্বিতীয় ওভারেই। ব্রেক-থ্রæও এনে দিলেন। সিলেটে লাক্কাতুরার ম্যাচে মিরাজের উপর কতটা ভরসা করেছেন মাশরাফি, সেটা স্কোরকাডের্ চোখ রাখলেই বোঝা যাচ্ছে। নতুন বল হাতে পেয়ে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের উপর ছড়ি ঘোরান মিরাজ। সাজঘরে পাঠান প্রথম সারির চার ব্যাটসম্যানকে। ২৬তম ওভারেই বোলিং কোটা পূণর্ করেছেন। ১০ ওভারে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ২৯ রানে ৪ উইকেট নেন এ অফস্পিনার। যেটা ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। শুক্রবার মিরাজ শুধু ক্যারিয়ারসেরা বোলিংই (১০-১-২৯-৪) করেননি. ওভারপ্রতি তার খরচাও (২.৯০) রীতিমতো প্রশংসনীয়। সিরিজনিধার্রণী গুরুত্বপূণর্ ম্যাচে তার এমন বোলিংয়েই ১৯৮/৯ এ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বেঁধে রাখতে পেরেছে মাশরাফির দল। পরে তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকারের ব্যাটে চেপে তুলে নিয়েছে সহজ জয়। যে জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজটা ২-১ ব্যবধানে নিজেদের করে নিয়েছে টাইগাররা। টেস্ট অভিষেক ইনিংসে ৬ উইকেট, অভিষেক টেস্ট সিরিজেই ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে ম্যাচ উইনার মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের সবের্শষ ৫ টেস্ট জয়ের তিনটিতে রেখেছেন অসামান্য অবদান। ২টিতে শিকার তার ১২টি করে উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে (১২/১১৭) এই প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাইয়ের লজ্জা দেয়া মিরাজ এখন ওয়ানডেতেও পরিণত হয়ে উঠছেন। এ বছরে তিন ফরমেটের ক্রিকেট মিলে সবচেয়ে বেশি উইকেট তারই দখলে। ৮ টেস্টে ৪১, ১৫ ওয়ানডেতে ১৮ এবং ৭ টি২০তে ১ উইকেটে মিরাজের শিকার সংখ্যা এ বছর ইতোমধ্যে বেড়ে দঁাড়িয়েছে ৬০! সীমিত ওভারের ম্যাচেও যে মিরাজ কাযর্করী বোলার হয়ে উঠছেন। নাম্বার ২ পজিশনে বোলিংয়ে তার ধারটা দেখছে ক্রিকেট দুনিয়া। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২২ ম্যাচে ২৪ উইকেটের ১৬টিই ২ নম্বর পজিশনে বোলিংয়ে। যে পজিশনে ১০ ইনিংসে ১৬ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ ২৬.৬২ গড়ে। অথচ ক্যারিয়ার গড়টা তার ৩২.৪০। ২০১৭ সালে ৭ ম্যাচে ৬ উইকেটে সন্তুষ্ট থেকেছেন এ অফস্পিনার। তবে উইকেট পিছু গড় ৪১.৬৬ একটু বেশিই মনে হয়েছে। ওভারপ্রতি ৫.১০ রান খরচাও মিতব্যয়ী বোলারের পরিচয়টা দিতে পারেননি মিরাজ ওয়ানডে অভিষেক বছরে। সেই মিরাজ নিজেকে বদলে ফেলেছেন এ বছর। বছরের শুরুতে দলে ছিলেন অনিয়মিত। ত্রিদেশীয় ওয়ানডে টুনাের্মন্টে মাত্র একটি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের শুরু থেকে মিরাজ ওয়ানডে দলে নিয়মিত। নতুন বলে এক প্রান্তে বল করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন মিরাজ। গত অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবের্শষ সিরিজে করেছিলেন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং (৩/৪৬)। ওয়ানডে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ছিল ওটাই। শুক্রবারের ম্যাচে চন্দরপল হেমরাজকে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শুরুতেই ধাক্কা দিয়েছিলেন মিরাজ। ইনিংসের চতুথর্ ওভারে ক্যারিবীয় ওপেনারকে মোহাম্মদ মিঠুনের ক্যাচ বানান তিনি। ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ তখন ১৫। সিলেটের উইকেট বুঝে সেই ধাক্কা কাটিয়ে ভালোই ব্যাট চালাচ্ছিল ক্যারিবীয়রা। চার ওভার পর ছোট বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই উপরে দেন ড্যারেন ব্রাভোর স্টাম্প। ক্যারিবীয় ইনিংসের ২৪তম ওভারে আবারও আঘাত হানেন মিরাজ। এবার সাজঘরের পথ দেখান ‘বানি’ শিমরন হেটমায়ার। মিরাজের বল এতটাই লাইনে থেকে তার প্যাডে আঘাত হানল যে রিভিউ নেয়ার চেষ্টাও করেননি হেটমায়ার। দুই টেস্টের চার ইনিংসসহ চলতি সিরিজে মোট ৭বার হেটমায়ারকে আউট করলেন মিরাজ। কোটা পূরণের পথে নিজের শেষ ওভারেও খালি হাতে ফিরতে হয়নি মিরাজকে। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলকে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের দারুণ এক ক্যাচ বানিয়ে টাইগারদের ভালো অবস্থানে রেখেছেন এ ম্যাজিক্যাল অফস্পিনার!