সাফল্যময় বছর

ইংল্যান্ড-ভারতের পরই বাংলাদেশ

এ বছর বাংলাদেশের ১৩ জয় এসেছে ২০ ম্যাচে। এ বছর যে ১৮টি দল ওয়ানডে খেলেছে; এর মধ্যে জয় বিবেচনায় বাংলাদেশ তৃতীয় সেরা। ২০ ম্যাচে ১৪ জয় নিয়ে একটু ওপরে ভারত। ২৪ ম্যাচে ১৭ জয় নিয়ে সবার ওপরে ইংল্যান্ড

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
এ বছর আরও তিনটি ম্যাচ আছে বাংলাদেশের। তবে সবগুলোই টি২০। টেস্টের মতো ওয়ানডেরও হিসাবনিকাশ শেষ। ৫০ ওভারের ম্যাচে বছরটা দারুণ কেটেছে বাংলাদেশের। ম্যাচ জয়ের হিসেবে শুধু ইংল্যান্ড আর ভারতই টাইগারদের থেকে এগিয়ে। অথার্ৎ চলতি বছরে ওয়ানডেতে তৃতীয় সফল দল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে আরও একবার শেষ ওভারের নাটকীয়তায় শিরোপাবঞ্চিত হওয়ার হতাশা আছে। হতাশা আছে বছরের শুরুতেই ত্রিদেশীয় সিরিজ জেতার সুযোগটা নষ্ট করার। ঘরের মাঠে ওই সিরিজটা জেতা গেলে ঘুচে যেত একটা আক্ষেপ। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বাদে এখন পযর্ন্ত ক্রিকেটে যে কোনো শিরোপাই জেতা হয়নি। সাফল্যময় বছরটাও শেষ হচ্ছে সেই হতাশা নিয়ে। এ বছর ১৩টি ওয়ানডে জিতেছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে ১৮টি আর ২০০৯ সালে ১৪টি ওয়ানডে জিতলেও ১৩টি ওয়ানডে জেতা ২০১৫ সালকে বাংলাদেশের সেরা সাফল্যের বছর ধরা হয়। সেবার ঘরের মাঠে একের পর এক সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ মাতিয়ে আসার পর ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়েছে টাইগাররা। সেবার একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। অমন বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটে ফিরে আসবে বারবার, ভক্তদের প্রত্যাশা এমনই ছিল। ২০১৮ সালটা কিন্তু প্রত্যাশা মেটানোর মতোই ছিল। এ বছর বাংলাদেশের ১৩ জয় এসেছে ২০ ম্যাচে। এ বছর যে ১৮টি দল ওয়ানডে খেলেছে; এর মধ্যে জয় বিবেচনায় বাংলাদেশ তৃতীয় সেরা। ২০ ম্যাচে ১৪ জয় নিয়ে একটু ওপরে ভারত। ২৪ ম্যাচে ১৭ জয় নিয়ে সবার ওপরে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের মাটিতেই আগামী বছর বসবে বিশ্বকাপের পরবতীর্ আসর। ওই আসর সামনে রেখেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ। তার আগে এমন সাফল্যময় বছর বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে দলপতি মাশরাফি বিন মতুর্জাকে। শুক্রবার সিলেট আন্তজাির্তক স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সিরিজ জয়ের পর তিনি বলেছেন, ‘দল টানা জিতলে যেটা হয়; আত্মবিশ্বাস ভালো থাকে। পাশাপাশি অগ্রগতিও পরিষ্কার।’ টানা তিনটি সিরিজ জয়ের পর মাশরাফি মনে করিয়ে দিয়েছেন সামনের চ্যালেঞ্জের কথাও, ‘এরপর নিউজিল্যান্ড সিরিজ আছে। আমাদের জন্য সিরিজটি খুব গুরুত্বপূণর্। গতবার আমরা ওদের ওখানে গিয়ে হেরে এসেছি। আমার কাছে মনে হয়, এবার আমাদের দল আরও ভারসাম্যপূণর্। আমার বিশ্বাস, আগেরবারের চেয়ে এবার ভালো খেলব। বিশ্বকাপের জন্যও কিছুটা হলে আদশর্ হবে। যদিও কন্ডিশন কিছুটা ভিন্ন। তবুও ভালো হবে।’ বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ আর দুটি সিরিজ পাবে। সব মিলিয়ে পাবে সাতটির মতো ওয়ানডে। এরপরই নেমে পড়তে হবে চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে। বড় কিছু করার স্বপ্ন নিয়েই এবার ইংল্যান্ডে যাবে টাইগাররা। ইংল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পারফরম্যান্স। গত বছর ইংল্যান্ডের মাটিতেই অনুষ্ঠিত ওয়ানডেতে আইসিসির দ্বিতীয় মযার্দাপূণর্ ওই আসরে সেমিফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। শুধু দলীয় সাফল্য নয়, ব্যক্তিগত সাফল্যেও উজ্জ্বল ছিলেন টাইগার ক্রিকেটাররা। এ বছরের সবোর্চ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সেরা দশে আছেন মুশফিকুর রহিম। ১৯ ইনিংসে ৭৭০ রান তার। তবে ব্যাটিং গড়ে বিরাট কোহলি আর রস টেলরের পরেই থাকা তামিম ইকবাল (৮৫.৫০) আফসোস করতে পারেন, দলের ২০ ম্যাচের ৮টিতেই বসে থাকতে না হলে রানটা (৬৮৪) তার অনেক বেশি হতো। ১২ ইনিংসের ৮টিতেই কমপক্ষে ৫০ পেরোনো (২টি সেঞ্চুরি আর ৬টি হাফসেঞ্চুরি) তামিম এ বছর ছিলেন অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক। বোলিংয়ে এ বছরের যৌথভাবে সেরা ৬ নম্বর বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। ১৮ ম্যাচে ২৯ উইকেট তার। ২০ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়ে তার পরই আছেন মাশরাফি। উইকেট সংখ্যায় এটি নড়াইল এক্সপ্রেসের ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেরা বছর। ১৫ ওয়ানডেতে ২৩ উইকেট নিয়ে এরপর আছেন গত ম্যাচে বাদ পড়া রুবেল হোসেন। মুস্তাফিজ-মাশরাফির সঙ্গে সফল রুবেল; যেটা আগামী বিশ্বকাপে তিন পেসার নিয়ে আক্রমণ সাজাতে আরও সাহসী করবে বাংলাদেশকে। ৪৯৭ রান করার পাশাপাশি ২১ উইকেট নেয়া বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান যথারীতি দলের প্রাণভোমরা। অফস্পিনে ১৮ উইকেট নেয়া মিরাজ বোলিং আক্রমণে বাড়তি বৈচিত্র্য যোগ করছেন। ব্যাটিং-বোলিংয়ে এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও বেশ উন্নতি দেখিয়েছে টাইগাররা। সবমিলিয়ে আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর হয়েই ২০১৯-এ পা রাখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।