বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুস্তাফিজ বললেন, এখনও শিখছি

গত সাড়ে ৩ বছরে বিদেশের মাটিতে বড় দলের বিপক্ষে ১২ ম্যাচে তার উইকেট মাত্র তিনটি! তুলনার এই হতশ্রী অবস্থা দেখে মুস্তাফিজ বলছেন, দেশের বাইরেও উন্নতি করার চেষ্টা করছেন তিনি!
ক্রীড়া ডেস্ক
  ০৭ জুলাই ২০২২, ০০:০০
আগের মতো বোলিংয়ে আর জাদু দেখাতে পারছেন না বাঁহাতি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান -ফাইল ফটো

ক্যারিয়ারের শুরুতে মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং দেখে অনেকে তাকে বলতেন, 'জোর বল করা বাঁহাতি স্পিনার।' পেসার হলেও স্পিনারদের মতো তার বল গ্রিপ করে ব্যাটসম্যানদের ধাঁধায় ফেলত। উপমহাদেশের কন্ডিশনে দারুণ বোলিং করলেও দেশের বাইরে ছন্নছাড়া মুস্তাফিজকে দেখা যায়। গত সাড়ে ৩ বছরে বিদেশের মাটিতে বড় দলের বিপক্ষে ১২ ম্যাচে তার উইকেট মাত্র তিনটি! তুলনার এই হতশ্রী অবস্থা দেখে মুস্তাফিজ বলছেন, দেশের বাইরেও উন্নতি করার চেষ্টা করছেন তিনি!

সেরা অস্ত্রই যখন ভোঁতা, বোলিং আক্রমণের অবস্থাও তখন স্পষ্ট। মুস্তাফিজুর রহমান ও বাংলাদেশের পেস আক্রমণের বাস্তবতা এখন অনেকটা এরকমই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি২০তে বেশ মার পড়েছে মুস্তাফিজের বোলিংয়ে। বাকি পেসারদের অবস্থাও ছিল তথৈবচ। টি২০তে মুস্তাফিজের বোলিংয়ের এই দুর্দশা চলছে আসলে বেশ কিছুদিন ধরেই। অভিজ্ঞ এই পেসার অবশ্য বলছেন, তিনি শিখে চলেছেন এবং চেষ্টার কমতি রাখছেন না।

দ্বিতীয় টি২০তে রোববার তৃতীয় ওভারে মুস্তাফিজকে বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক মাহমুদউলস্নাহ। আগের ওভারেই সাকিব আল হাসান ব্রেক থ্রম্ন দেন। সেই চাপটা ধরে রাখতে পারেননি মুস্তাফিজ। তার ওভারে দুটি চার মারেন ব্র্যান্ডন কিং। আবার তাকে আক্রমণে দেখা যায় নবম ওভারে। এবারও কিংয়ের ব্যাটে একটি বাউন্ডারিসহ রান দেন ৯। তার ওপর দল যেখানে ভরসা করে সবচেয়ে বেশি শেষের ওভারগুলোয়। সেখানেই তিনি হতাশও করেন বেশি। ১৫তম ওভারে দেন ১১ রান, ১৯তম ওভারে ১০।

উইকেট পাননি, খরুচে ছিলেন, এসবের চেয়েও উলেস্নখযোগ্য ব্যাপার ছিল, তার বোলিংয়ে বৈচিত্র্যই খুব একটা দেখা যায়নি। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বল ভেতরে আনার চেষ্টা বা ব্যাটসম্যানকে চমকে দেওয়ার মতো কিছু করতে পারেননি। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে তার কাটার গ্রিপ করেনি, বোলিং ছিল একদমই অনুমিত।

শুধু এই ম্যাচেই নয়, মুস্তাফিজ বিবর্ণ বেশ কিছুদিন ধরেই। অথচ এই সংস্করণে দল তাকিয়ে থাকে তার দিকে। কিছুদিন আগেও তিনি আইপিএল খেলে এলেন। জাতীয় দল, বিপিএল, দেশের বাইরের লিগসহ এই সংস্করণে তার অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশ দল সেটির সুফল কমই পাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে। টি২০তে বাংলাদেশের হয়ে সবশেষ ১০ ইনিংসে তার উইকেট স্রেফ ৫টি, গড় ৫২.২০। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৮.১১।

আগের সেই মুস্তাফিজকে কেন পাওয়া যাচ্ছে না, বিসিবি ভিডিও বার্তায় এই প্রশ্নের শুরুতে কিছুটা আপত্তি করলেন তিনি। পরে অবশ্য বললেন নিজের চেষ্টার কথা, 'আপনারা না পেতে পারেন (আগের মুস্তাফিজকে), আমি তো মনে করি অপারেশনের পর (২০১৬ সালের আগস্টে) আমার এক-দেড় বছর ভালো পারফরম্যান্স ছিল না। এরপর তো আমি মনে করি। শেখার তো শেষ নেই, উন্নতি প্রতিদিন করা যায়। আমি চেষ্টা করছি আরও উন্নতি করার জন্য যে বিশ্বের ভালো ভালো বোলারদের মধ্যে কীভাবে থাকা যায়। ফিটনেস বলেন, কোচদের পরামর্শ নেওয়া বলেন, আমি শিখছি এখনও।'

দেশের বাইরে অবশ্য শুধু সাম্প্রতিক নয়, মুস্তাফিজের বোলিংয়ের সামগ্রিক চিত্রই এখনও খুব সন্তোষজনক নয়। গড়, ওভারপ্রতি রান সবই দেশের চেয়ে দেশের বাইরে বেশি, ধারাবাহিকতায় ঘাটতি স্পষ্ট। এশিয়ার বাইরে তো অবস্থা আরও নাজুক। ৯ ম্যাচে উইকেট ১২টি, ওভারপ্রতি রান ৯.১২! এজন্য উইকেটকে দায় দিলেন মুস্তাফিজ, 'এশিয়ান উইকেট একরকম, এশিয়ার বাইরের উইকেট আরেক রকম। এশিয়ার বাইরের উইকেট খুব ভালো, 'ট্রু' উইকেট থাকে। এটার কারণে হতে পারে। আমি চেষ্টা করি আমার সেরাটা দেওয়ার, সব সময়ের জন্য। এশিয়ার ভেতরে দেখবেন, অন্য দলের ১৫০ রান করতেও কষ্ট হয়। এশিয়ার বাইরে ২০০ রান করলেও নিরাপদ নয়। এই কারণে ইকোনমি (ওভারপ্রতি রান) বাড়তে পারে।'

উইকেট যে অনেক সময় বোলিংয়ের জন্য কঠিন থাকে এই সংস্করণে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। মুস্তাফিজের কাছে প্রত্যাশা তো সেখানেই বেশি। বৈচিত্র্য আর অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রতিকূলতা জয় করবেন, পেস আক্রমণকে নেতৃত্ব দেবেন, দলকে আশা জোগাবেন। তবে সেসব আপাতত হচ্ছে সামান্যই। গত ম্যাচে শুধু মুস্তাফিজ নয়, অভিজ্ঞ তাসকিন আহমেদ মার খেয়েছেন বেদম, খরুচে ছিলেন তরুণ শরিফুল ইসলামও। গায়ানার টিম হোটেলে মঙ্গলবার আলাদা সভা করা হয় বোলারদের নিয়ে। সেই সভার আলোচনার বিষয়বস্তু কিছুটা তুলে ধরলেন মুস্তাফিজ, 'যেভাবে আমরা বোলিং করেছি (গত ম্যাচে), আরও কী করলে ভালো করতে পারব, এটা নিয়ে কথা বলেছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে