অসহায় আত্মসমপর্ণ টাইগারদের

প্রকাশ | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
শট খেলছেন সাকিব আল হাসান। সোমবার সিলেট আন্তজাির্তক স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে টাইগার ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যথর্তার মাঝে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিলেন তিনি। তার ৬১ রানের লড়াকু ইনিংসটি অবশ্য বৃথা গেছে দলের বড় পরাজয়ে Ñবিসিবি
অতি আত্মবিশ্বাস সবসময়ই ক্ষতি করে, টিম বাংলাদেশ এখন এই সত্যটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ব্যাটসম্যানরা আত্মহুতি দিলেন অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে। একই ভুলের পুনরাবৃত্তি হলো বারবার। ব্যাটিংটা ছিল পুরোপুরি দিশাহীন, এলোমেলো ছিল বোলিংটাও। দুইয়ে মিলেই লেখা হলো অসহায় আত্মসমপের্ণর চিত্রনাট্য। যে চিত্রনাট্যের শেষ দৃশ্যে থাকল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টাইগারদের ৮ উইকেটের পরাজয়। টেস্ট আর ওয়ানডে সিরিজে দাপুটে পারফরম্যান্সের পর তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজেও ভালো শুরুর প্রত্যাশা ছিল। সোমবার সিলেট আন্তজাির্তক স্টেডিয়ামে সেই প্রত্যাশা পূরণের ন্যূনতম আশাও জাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটিংস্বগের্ ব্যাখ্যাতীত বাজে ব্যাটিংয়ের দায় চুকিয়ে এক ওভার আগেই অলআউট স্বাগতিকরা, স্রোতের বিপরীতে দঁাড়িয়ে সাকিবের লড়াকু হাফসেঞ্চুরির পরও টাইগারদের ঝুলিতে জমা হলো ১২৯ রান। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা ওই রানটাকে ‘মাত্র’ বানিয়ে ছাড়ল, ১০.৫ ওভার খেলেই রানটা টপকে গেল কালোর্স ব্রেথওয়েটের দল। টি২০ ক্রিকেটের বতর্মান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আরও একবার বুঝিয়ে দিলো, এই ফরম্যাটে তাদের থেকে ভয়ঙ্কর দল আর নেই! পাওয়ার হিটিংয়ে ক্যারিবীয়রা বিশ্বসেরা, পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে দলটির ঝুলিতে ৯১ রান তারই প্রমাণ। টি২০ ক্রিকেটে এটা বিশ্বরেকডর্ (যৌথভাবে)। ক্যারিবীয়দের এই বিশ্বরেকডের্র উপাখ্যানটা লেখা হয়েছে শাই হোপের ব্যাটে। ওয়ানডে সিরিজের দুরন্ত ফমর্টা সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে টেনে এনে আবিভ‚র্ত হলেন আরও ভয়ঙ্কর রূপে। ১৬ বলে পূণর্ করেছেন হাফসেঞ্চুরি, ক্যারিবীয়দের যেটা দ্রæততম, টি২০ ইতিহাসের তৃতীয় দ্রæততম। হোপের তাÐবে শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলাররা ছিলেন দিশেহারা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজ হজম করেছেন তিন ছক্কা, দিয়েছেন ২৩ রান। আবু হায়দার, মুস্তাফিজুর রহমান আর অধিনায়ক সাকিবও রক্ষা পাননি। এভিন লুইসকে (১৮) ফিরিয়ে ৫১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও সুবিধা করতে পারেননি। ২ ওভারে ১৩ রান নিয়ে কিছুটা মিতব্যয়ী ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বিধ্বংসী হয়ে ওঠা হোপকে থামিয়েছেন তিনিই। মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগেই ২৩ বলে ৩টি চার আর ৬টি ছক্কায় এই ওপেনার তুলে ফেলেন ৫৫ রান। ক্যারিবীয়দের রান তখন ২ উইকেটে ৯৯। এরপর জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৩১ রান যেন একাই করে ফেলতে চাইলেন কেমো পল। ১৪ বলে ২৮ রান করেছেন তিনি, তাতে হোপ আউট হওয়ার ৩.১ ওভার পরই ম্যাচের সমাপ্তি। এর আগে বল হাতেও ২ উইকেট নিয়েছেন এই সিমিং অলরাউন্ডার। তবে হোম কিংবা পল নন, ম্যাচসেরার খেতাবটা উঠেছে শেলডন কটরেলের হাতে। ২৮ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়ে এই পেসারই মূলত ভেঙে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদÐ। ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের অধ্যায়টা নতুন করে লেখার ক্ষেত্রে বোলার কটরেলের যতটা কৃতিত্ব, এর থেকে ঢের বেশি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার আর সাকিব, তিনজনই কটরেলকে নিজেদের উইকেটটা উপহার দিয়েছেন। ৪৩ বলে ৮টি চার আর ২টি ছক্কায় ৬১ রান করার পর সাকিব আউট হয়েছেন দলের রান যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টায়। তামিম আর সৌম্যর ক্ষেত্রে বিষয়টা পুরোপুরিই ভিন্ন। শট বলে পুল করতে গিয়ে দুজনেই ক্যাচ দিয়েছেন ৩০ গজি বৃত্তের মধ্যে। নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন আরেক ওপেনার লিটন দাসও। সকলের মধ্যেই ছিল উচ্চাভিলাষী শট খেলার অভিলাষ। সাকিবের ডাকে সাড়া দিয়ে মুশফিকুর রহিমের রানআউট হওয়াটাও ছিল বড় ধাক্কা। অবশ্য দ্রæত উইকেটের পতন ঘটলেও পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৫৪ রান তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বড় কোনো জুটি হয়নি। ষষ্ঠ উইকেটে সাকিব-আরিফুল হক জুটির ৩০ রানই সবোর্চ্চ। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সবোর্চ্চ ১৭ রানের ইনিংসটি খেলেছেন আরিফুলই। ইনিংসে দুই অঙ্কের রান ছেঁায়া আরেক ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ (১২)। বাকিদের রান টেলিফোনের ডিজিটের মতোইÑ ৫, ৬, ৫, ৫, ১, ৮, ১*, ০। বড় কোনো জুটি না হলেও দলের পঁুজিটা আরও খানিকটা বড় হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু ১৯ রানের ব্যবধানে শেষ ৪ উইকেট হারানোয় সেটা হয়নি। ওটা না হওয়াতেই জুটেছে বড় হারের লজ্জা। ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে টাইগারদের। আগামী বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে তাদের নামতে হবে সিরিজ বঁাচানোর মিশনে। সংক্ষিপ্ত স্কোর বাংলাদেশ : ১৯ ওভারে ১২৯ (তামিম ৫, লিটন ৬, সৌম্য ৫, মুশফিক ৫, সাকিব ৬১, মাহমুদউল্লাহ ১২, আরিফুল ১৭, সাইফউদ্দিন ১, মিরাজ ৮, আবু হায়দার ১*, মুস্তাফিজ ০; ওশান থমাস ১/৩৩, কটরেল ৪/২৮, পল ২/২৩, ব্রেথওয়েট ১/১৩, অ্যালেন ১/১৯) ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১০.৫ ওভারে ১৩০/২ (লুইস ১৮, হোপ ৫৫, পুরান ২৩*, পল ২৮*; সাইফউদ্দিন ১/১৩, মাহমুদউল্লাহ ১/১৩) ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে জয়ী ম্যাচসেরা : শেলডন কটরেল