ফরাসিদের ‘নতুন নায়ক’ উমতিতি

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

আরিফুর রহমান
এক যুগ পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার পর এভাবেই আনন্দে মাতেন ফ্রান্স দলের ফুটবলাররা। মঙ্গলবার সেমিফাইনালে স্যামুলে উমতিতির একমাত্র গোলে তারা পরাজিত করে প্রতিবেশী দেশ বেলজিয়ামকে Ñওয়েবসাইট
ম্যাচের আগে সবাই কিলিয়ান এমবাপে আর আতোয়ান গ্রিজম্যানদের নিয়ে পড়েছিল। তবে মঙ্গলবার বেলজিয়ামের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ফ্রান্সের আক্রমণভাগের কেউ জ্বলে উঠতে পারেননি। তাদের ছাপিয়ে নায়ক বনে গেছেন ২৪ বছর বয়সী ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতি। তার গোলটাই লে বøুজদের তুলে দিয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে। কেউ কি ভেবেছিল, উমতিতি গোল করতে পারেন? গ্রিজম্যান-এমবাপেরা থাকতে এই ডিফেন্ডারকে নিয়ে না ভাবাটাই স্বাভাবিক। বাসেের্লানায় খেলা উমতিতি এর আগে জাতীয় দলের হয়ে ২৩ ম্যাচে দুটি গোল করেছিলেন। প্রথমটি গত বছরের জুনে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে পিছিয়ে পড়া ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান তিনি। পরবতীের্ত ম্যাচটা ৩-২ ব্যবধানে জেতে তার দল। দ্বিতীয়টি চলতি বছরের জুনে ইতালির বিপক্ষে। ওই ম্যাচেও ফ্রান্স জিতেছে ৩-১ ব্যবধানে। উমতিতির তৃতীয় গোলটাও সৌভাগ্য বয়ে আনল লে বøুজদের। নিজের গোলে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে দেখলেন, উমতিতি এখন গবর্ করতেই পারেন। পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফল পাওয়ায় এখন আত্মতৃপ্তি কাজ করছে এই ডিফেন্ডারের মাঝে। এই গোলের জন্য আতোয়ান গ্রিজম্যানকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন উমতিতি। তার কনার্র কিক থেকেই তো হেডটা নিয়েছিলেন তিনি। যেটা বেলজিক গোলরক্ষক থিবু কোতোর্য়াকে অসহায় বানিয়ে জড়িয়ে যায় জালে। এ নিয়ে ফ্রান্সের সবের্শষ ২০ গোলের ১৩টিতেই অবদান রাখলেন গ্রিজম্যান। উমতিতির ভাষ্য মতে, পূবর্পরিকল্পনা অনুযায়ীই গোলটা এসেছে। এই প্রসঙ্গে ফরাসি ডিফেন্ডার বলেছেন, ‘আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। আতোয়ানের সঙ্গে সেট পিস নিয়ে আমরা অনেক কাজ করেছিলাম। আমার কাজ হলো প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের সামনে চলে যাওয়া, যাতে পোস্টের কাছে থাকতে পারি। সে দারুণ একটা কনার্র কিক নিল আর আমি ফেলাইনিকে পরাস্ত করে জালে বল জড়িয়ে দিলাম। গোলটা যদিও আমি করেছি; কিন্তু আমরা সবাই মিলে একটা ভালো ম্যাচ খেলেছি। আমি সবার জন্য গবির্ত। আমি খুব সন্তুষ্ট। ফাইনালে পৌঁছে আমরা আমাদের লক্ষ্য স্পশর্ করেছি।’ বিশ্বকাপে গোল করা এমনিই অনেক বড় ব্যাপার ফুটবলারদের জন্য। তার ওপর যদি হয় সেটা সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে, তাহলে তো কথাই নেই। গবের্র সঙ্গে তাই আবেগও ছুঁয়ে যাচ্ছে উমতিতিকে। গত রাতে হয়তো ঠিকমতো ঘুমাতে পারেননি উমতিতি। ঘুমাতে যে পারবেন না, ম্যাচ শেষে সেটা নিজেই জানিয়েছিলেন তিনি, ‘আমি আজ রাতে বেশি ঘুমাতে পারব না। আমার জন্য কঠিন হবে ঘুমানো। তবে আমার দরকার সেই সেটার; আমি ক্লান্ত নই।’ মনে আনন্দ থাকলে ক্লান্তিকে আর ক্লান্তি মনে হয় না। উমতিতির ক্ষেত্রেও তাই। ঠিক তার মতোই ১৯৯৮ সালের আসরে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ফ্রান্সের নায়ক বনে গিয়েছিলেন আরেক ডিফেন্ডার। লিলিয়াম থুরাম। তার জোড়া গেলে ডেভর সুকারের দলকে কঁাদিয়ে ফাইনালে চলে যায় স্বাগতিকরা। সেবার ব্রাজিলকে হারিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম শিরোপা জেতে তারা। রাশিয়ায় কি তাহলে ৯৮’র পুনরাবৃত্তি হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে উমতিতি স্মিত হেসে বললেন, ‘যদিও টুনাের্মন্টটা ভিন্ন, আশা করছি এটা একটা ইঙ্গিত।’ একদিক থেকে এবারের আসরটাকে ১৯৯৮ সালের আসরের সঙ্গে একবিন্দুতে মেলাতে চাচ্ছেন উমতিতি। অন্যদিক থেকে চাচ্ছেন, ভাগ্যটা যেন গত ইউরোর মতো না হয়। ফ্রান্সের এই দলটিই বছর দুয়েক আগে ঘরের মাঠে আয়োজিত আসরে ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু শিরোপা জিততে পারেনি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পতুর্গালের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। উমতিতি তাই ভিন্ন কিছুর আশা করছেন, ‘আশা করব, এবারে গল্পটা ভিন্ন হবে। আশা করব, বিশ্বকাপটা যেন ফ্রান্সে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারি।’